স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস, দুইবার সেরা গোলরক্ষকের ইয়াসিন ট্রফি; প্রিমিয়ার লিগে পরীক্ষিত এমি মার্টিনেজের অর্জনের ভাণ্ডার পূর্ণ হলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তা বিবেচনা করেনি, বরং রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্পের ২৩ বছর বয়সী গোলরক্ষক সেন্নে লামেন্সকে ১৮.১ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভিড়িয়েছে। অথচ রোববার (৩১ আগস্ট) অ্যাস্টন ভিলা যখন মার্টিনেজকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল তখন মনে হচ্ছিল তার ইউনাইটেডে যাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার।
তাহলে শেষ মুহূর্তে ইউনাইটেড কেন এই আর্জেন্টাইনকে দলে ভেড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলল? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি। সংবাদ সংস্থাটি বলছে, লামেন্সকে কেনার সিদ্ধান্তের পেছনে আছে ইউনাইটেডের ‘প্রজেক্ট ১৫০’ এর স্পষ্ট ছাপ।
এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ২০২৮ সালে যখন ক্লাবটি নিউটন হিথ নামে যাত্রা শুরুর ১৫০ বছর পূর্ণ করবে, সে সময়ের মধ্যে ফের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করা। গত বছর (সেপ্টেম্বর ২০২৪) চিফ এক্সিকিউটিভ ওমর বেরাদা প্রথমবার এই লক্ষ্য ক্লাবটির কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন। চলতি বছরের জুনে ‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড’ ফ্যানজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বেরাদা আবারও বলেন, ‘কেন নয়, আমরা কেন এই লক্ষ্য ধরব না?’
এই দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের অংশ হিসেবেই ট্রান্সফার উইন্ডো শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টা আগে ইউনাইটেড অ্যাস্টন ভিলার এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে সই করানোর চেষ্টা না করে, বরং লামেন্সকে প্রাইভেট জেটে ম্যানচেস্টারে ডেকে আনে, অথচ গত মৌসুম শেষ থেকেই মার্টিনেজের প্রত্যাশা ছিল থিয়েটার অব ড্রিমে পা রাখার। কেন লামেন্স, কেন মার্টিনেজ নয়? ইউনাইটেড সূত্র জানিয়েছে, সিদ্ধান্তটি আসলে সহজ ছিল। স্বল্পমেয়াদে উন্নতি জরুরি হলেও ‘প্রজেক্ট ১৫০’ হচ্ছে বড় পরিকল্পনা।
মার্টিনেজ প্রিমিয়ার লিগে প্রমাণিত গোলরক্ষক, বিশ্বকাপজয়ী। তবে, গত মৌসুমে তিনি ভুলের কারণে ৬ বার শটের মুখে পড়েন, যেখানে আন্দ্রে ওনানা এমনটা করেছিলেন ৪ বার। রুবেন আমরিম নিজেও বলেছেন, ‘এখনকার পরিস্থিতিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার হওয়া কঠিন।’লামেন্সকে মার্টিনেজের অভিজ্ঞতার তুলনায় নিতান্তই শিশু বলা যায়। এখন পর্যন্ত ৯৩টি ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে বেলজিয়ান প্রো লিগে মাত্র ৫২টি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একমাত্র ম্যাচটি ছিল নভেম্বর ২০২৩-এ পোর্তোর বিপক্ষে, যেখানে রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্প ২-০ গোলে হারে। মার্চে বেলজিয়ামের সিনিয়র দলে ডাক পেলেও এখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
তবে, ইউনাইটেডের ডেটা অ্যানালাইসিস (যা সহমালিক স্যার জিম র্যাটক্লিফ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন) দেখিয়েছে যে লামেন্স অনেক ক্ষেত্রে অসাধারণ। ক্রস ধরার দক্ষতা, শট-স্টপিং, রিবাউন্ড থেকে গোল ঠেকানো, ভুল কম করা—সব ক্ষেত্রেই তার পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্য। ইউরোপের শীর্ষ ১০ লিগে গত মৌসুমে তিনি সবচেয়ে বেশি সেভ করেছেন এবং ২৩ বছরের নিচে অন্যান্য গোলরক্ষকের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ‘প্রগ্রেসিভ পাস’ দিয়েছেন।
ইউনাইটেডের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা:
ক্লাবের মতে, ২০২৮ সালে ‘প্রজেক্ট ১৫০’-এর সময় লামেন্সের বয়স হবে ২৬, যেটা একজন গোলরক্ষকের জন্য ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের শুরু হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে, মার্টিনেজের বয়স হবে ৩৫, যে বয়সকে কোনোভাবেই আদর্শ বলা যায় না। ইউনাইটেড একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অ্যাস্টন ভিলার ওলে ওয়াটকিনস ও লাইপজিগের বেঞ্জামিন সেসকোর মধ্যে বেছে নেওয়ার সময়—তারা সেসকোকে নিয়েছিল।
পার্থক্য হলো, এর আগে তারা ইতোমধ্যেই ম্যাথিয়াস কুনিয়া ও ব্রায়ান এমবেউমোর মতো প্রিমিয়ার লিগে পরীক্ষিত খেলোয়াড়কে আক্রমণভাগে যুক্ত করেছিল। এইবার তারা গোলরক্ষক বিভাগকে শক্তিশালী করার জন্য শেষ মুহূর্তে পদক্ষেপ নেয়, যদিও এর ফলে মিডফিল্ডে নতুন করে বিনিয়োগ হয়নি।
ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ:
লামেন্সকে আগে থেকেই নজরে রেখেছিল ইউনাইটেড। গত মৌসুমে নাম শোনা গিয়েছিল, আবারও এই গ্রীষ্মে রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্পের সঙ্গে কথা হয়। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে আলোচনা শুরু হয় এবং সোমবার (ইংল্যান্ডের স্থানীয় সময়) সকালে চুক্তি সম্পন্ন হয়।
তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে—ওনানা বা বায়িন্দিরের মধ্যে যেকোনো একজনকে বিক্রি করা হতে পারে। নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ট্রান্সফার উইন্ডো এখনও খোলা থাকায় বিক্রির সম্ভাবনা প্রবল। ফলে, কে হবেন আমরিমের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক, সেটি এখনো অনিশ্চিত। খুব একটা পরীক্ষিত না হলেও লামেন্স বেশ সম্ভাবনাময়। থিবো কোর্তোয়া ও সিমন মিঞ্জোলের মতো বেলজিয়ান কিংবদন্তি তাকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন।
রয়্যাল অ্যান্টওয়ার্প রিপোর্টার এক্সেল ব্রিসার্ট বলেন, ‘তার শট-স্টপিং সবচেয়ে বড় গুণ। দুর্দান্ত সেভ করে, চমৎকার রিফ্লেক্স আছে। খুব প্রোঅ্যাকটিভ, বল ধরতে সামনে আসে। তার পায়ের খেলা ও পাসিং দলের খেলার গতি বাড়াতে বড় অস্ত্র।’ তবে, ফরোয়ার্ড লাইনে পরীক্ষিত কুনিয়া বা এমবিউমোর মতো পরীক্ষিত মুখ থাকায় সেসকোকে ধীরে ধীরে দলে খাপ খাওয়ানোর সুযোগ থাকলেও হলেও লামেন্সের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। কারণ ব্লান্ডেল পার্কে (গ্রিমসবির মাঠে) লজ্জাজনক হারের ফলে জানুয়ারি পর্যন্ত আর কোনো কাপ ম্যাচ নেই। ফলে, তাকে প্রিমিয়ার লিগেই বাজিয়ে দেখার ঝুঁকি নিতেই হচ্ছে ইউনাইটেডকে।
আন্তর্জাতিক বিরতি শেষে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে খেলবে ইউনাইটেড।
কিউএনবি/আয়শা/০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /বিকাল ৫:৩০