খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর : পাকিস্তানের সেনা সদস্য ছিলেন মতিউর রহমান (৭৭)। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও তিনি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পায়নি। যাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কোন ধারণা নাই তারাও মুক্তিযোদ্ধার তকমা লাগিয়ে বেড়ায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হয়েও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় তাকে। মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেতে আবেদন করছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সেকশনে। ইতোপূর্বে কয়েকবার যাচাই বাছাই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করেছেন তিনি। জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় সেখান থেকে রাজাকার বলে গালি পেয়েছেন অনেক বার। আক্ষেপ করে এইসব কথা বললেন এই মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষক। বর্তমানে তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক হিসেবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক সৈয়দ মতিউর রহমান জানান, শরীয়তপুর জেলা শহরের আটং গ্রামের মৃত সৈয়দ আব্দুল রশিদের পুত্র তিনি। সে পাকিস্তান সেনা বাহীনিতে সাড়ে ৩ বছর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ নং সেক্টরের অধীন সাব সেক্টর (অপারেশন ক্যাম্প-৩) দিনাজপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন। হাবিলদার পদ থেকে ১৯৭৫ সনে তিনি স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে দিনাজপুরে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮১ সনে তিনি দিনাজপুর থেকে নিজ জেলা শরীয়তপুরে চলে আসেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ি। তখনকার শরীয়তপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার আব্দুল গনি সিকদার ছিলেন। তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য তার কাছেও আবেদন করেন। তখনও এই কমান্ডার তালিকাভুক্তি হওয়ার জন্য শর্তস্বরূপ জামায়াতের রাজনীতি ছেড়ে দিতে বলে। কমান্ডার আব্দুস সাত্তার এর সময়ও যাচাই বাছাইতে তিনি অংশ নেন। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত রয়েছেন কিনা। জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কথা প্রকাশ করায় সকলে অট্টো হাসি দিয়ে তার সাথে উপহাস করেন। তখন সদর উপজেলা কমান্ডার আজিজ সিকদার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কয়েক দিন পরে যাচাই বাছাই কমিটি ফলাফল প্রকাশ করেন। সেই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষক সৈয়দ লতিউর রহমানের নাম ছিল না। কারণ জিজ্ঞাসা করায় কমিটি জানায় তার পক্ষে কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়নি। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি সাক্ষীদের সাথে কথা বলেন। তখন তার মানিত সাক্ষীরাও জানায় যাচাই বাছাই কমিটির কেউ তাদের সাথে কথা বলেনি। এমনি ভাবেই তিনি বারবার অধিকার বঞ্চিত হয়।
তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, আমার ভাতার প্রতি কোন লোভ নাই। আমার ৩ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে চাকুরী করে। আমিও একজন পল্লী চিকিৎসক। আমি যদি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাই তাহলেই নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্বিত মনে করবো। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এমন একটা সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকব।
কিউএনবি/আয়শা/১৮ আগস্ট ২০২৫/রাত ৯:৩০