সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন

আসামীর সাথে দেখা করতে টকা নেওয়ার অভিযোগ নওগাঁ কোর্ট পুলিশের বিরুদ্ধে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫
  • ৫৫ Time View
নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলা জজ আদালতের গারদখানায় বন্দী আসামিদের সাথে কেউ দেখা করতে গেলে টাকার বিনিময়ে মিলে সাক্ষাতের সুযোগ। টাকা না দিলে বিভিন্ন তালবাহানা ও আইন দেখান দ্বায়ীত্বরত পুলিশরা। এমন অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ কোর্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমানও মিলেছে টাকা লেনদেনের।

সরেজমিনে গিয়ে নওগাঁ কোটের গারদখানায় দেখাযায়, বিভিন্ন মামলার আসামী আনা নেয়া হচ্ছে। যেসব আসামীদের কোর্টে হাজিরা রয়েছে তাদেরও আনা হয়েছে জেলা কারাগার থেকে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে আটকৃত আসামীদেরকে গারদখানায় ঢোকানো হচ্ছে। বন্দী আসামিদের সাথে তাদের আত্মীয় স্বজন দেখা করতে কোর্টের গারদখানায় এসেছেন অনেকে। সেখানে থাকা দ্বায়ীত্বরত পুলিশকে টাকা দিলে আসামীদের সাথে দেখা করা, ও বিভিন্ন খাবার দেওয়ার সুযোগ মিলছে। অন্যথায় দেখা করা কিংবা কথা বলার কোন সুযোগ নেই এমন নিয়মে পরিনত হয়েছে নওগাঁ জেলা জজ আদালতের গারদখানা।

টাকার বিনিময়ে নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে অনিয়মে:

বন্দীদের স্বজন বাইরের হোটেল থেকে কিংবা বাসাবাড়ি থেকে শুকনা খাবারের পরিবর্তে এনে দিচ্ছে ভাত, মাছ, মাংস ও বিরিয়ানি। সেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বন্দীরা যেমন মোবাইল ফোনে কথা বলছে, তেমনি দেদারছে করছে ধুমপান। সেখানে থাকা পুলিশকে ৫০০টাকা দিলেই এসব সুবিধা মেলে বলে জানালেন বন্দী ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা।

যা বলছেন ভুক্তোভোগীরা :

জেলার পত্নীতলা উপজেলা থেকে মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি এসছেন তার মামাতো ভাইয়ের সাথে দেখা করতে তিনি বলেন- আমাদের জমিজমা সংক্রান্ত মামলার ঘটনায় চার জন আটক রয়েছে। আজকে তারিখ ছিল তাই এসেছি। আসামিদের সাথে দেখা করতে ১হাজার করে টাকা দিতে হয়। তাহলে কথা বলা ও খাবার দিতে দেয়। এর আগের তারিখে দেড় হাজার টাকা নিয়েছিল। যতবার দেখা করতে আসি ১হাজর করে টাকা দিতে হয়। ৪জন আছে তাই বেশি লাগে জন প্রতি আড়াইশ করে ১হাজার টাকা পুলিশকে দিতে হয় দেখা করার জন্য।

সেলের দক্ষিন পাশের বারান্দায় সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন এক বন্দী। ভেতরে তাকিয়ে দেখা যায় বরান্দায় তার পাশেই বেঞ্চে বসে আপন মনে মোবাইল টিপছেন পুলিশ। বন্দী বাইরে তার দু’জন আত্মীয়ের সাথে কথা বলছেন। আটক ব্যক্তির নাম জানালেন মিঠু তার বাড়ি নওগাঁ সদরের মাদারমোল্লা গ্রামে।

এগিয়ে গিয়ে মিঠুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- আজকে রাতে আমাকে রাজনৈতিক মামলায় আটক করে এনেছে।
ধুমপানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান- পুলিশকে ৫শ টাকা দিয়েছি। এখানে পুলিশকে টাকা দিলে সব খাবার দেয়। আত্মীয় স্বজন আসলে লুকিয়ে তাদের ফোন থেকে কথা বলা যায় তবে দেখতে পেলে নিষেধ করে।

সাপাহার উপজেলার আশড়ন্দ থেকে দেখা করতে এসেছেন একটি পরিবার এসময় বন্দীর বড় ভাই নুরনবীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- রাজনৈতিক মামলায় আমার ছোট ভাই আটক আছে। আজকে ধার্য তারিখ ছিল তাই পরিবারের সবাই কোর্টে এসেছি তার সাথে দেখা করার জন্য। পুলিশকে প্রথমে ২’শ টাকা দিয়েছিলাম ১০মিনিট পর পুলিশ এসে বলে সময় শেষ আর কথা বলা যাবেনা। আর একটু কথা বলতে চাইলে পুলিশ বলে ৫’শ টাকা দিলে যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলতে পারবেন। তখন আমার ভাই আরো ৩’শ টকা দেয়। ৫’শ করে টাকা দিলে যতক্ষন ইচ্ছা দেখা করতে দেয় খাবারও দিতে দেয়।

নিজেদের সাফাই গেয়ে যা বলছে পুলিশ:

টাকা লেনদেনের বিষয়ে সেলের ভিতর ডিউটিরত এএসআই আলমঙ্গীর হোসেনের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন- আসামীদের সাথে দেখা করার জন্য আমরা কোন টাকা নেই না। এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের সামনে টাকা নিয়েছেন এছাড়া ভুক্তোভোগীদের অভিযোগও রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- ভাই ভিতরে আসেন বসে কথা বলি, বিষয়টা সমাধা করি।

অভিযোগ অস্বিকার করে নওগাঁ কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক এ.কে.এম নূরুল ইসলাম বলেন- বন্দীদের সাথে দেখা করতে টাকা পয়সা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। মানবতার খাতিরে আমরা শুকনা জাতীয় খাবার, পানি দিতে দেই। তবে প্রকাশ্য ধুমপান একেবারে নিষিদ্ধ। কোন পুলিশ সদস্য টাকা-পয়সা কিংবা অনৈতিক কোন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেলে কিংবা কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার (বিপিএম) বলেন- আসামীর সাথে কেউ দেখা করতে আসলে পুলিশের টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। আমার কাছে অভিযোগ আসলে আমি ব্যবস্থা নিব।

কিউএনবি/আয়শা/২১ জুলাই ২০২৫,/রাত ৮:২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit