মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

হিজরি সনের আগে আরবের বর্ষপঞ্জি যেমন ছিল

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানব ইতিহাসে প্রতিটি জাতির এমন একটি মানদণ্ড ছিল, যাকে ভিত্তি করে তারা তাদের ঘটনাপ্রবাহ লিপিবদ্ধ করেছে। আধুনিক পরিভাষায় যাকে বলা হয় বর্ষপঞ্জি। কোনো কোনো জাতির বর্ষপঞ্জি পৃথিবীতে টিকে আছে এবং কারো বর্ষপঞ্জি হারিয়ে গেছে। নিম্নে আরব জাতির বর্ষপঞ্জি নিয়ে আলোচনা করা হলো—

প্রাচীনকালে বছর গণনার রীতি

প্রাচীনকালে সাল বা বর্ষ গণনার ভিত্তি ছিল বড় বড় ঘটনা।

কোনো নবীর আগমন, যেমন—খ্রিস্টাব্দ ঈসা (আ.)-এর জন্মের সময় থেকে গণনা করা হয় অথবা শক্তিশালী রাজত্ব প্রতিষ্ঠার সময় থেকে। যেমন—রোমানরা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ক্ষমতা লাভের সময় থেকে বছর গণনা করত। একইভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কোনো জাতির ধ্বংস হয়ে যাওয়া, সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষ, ক্ষমতার পালাবদল ইত্যাদি ঘটনা কেন্দ্র করেও বর্ষ গণনার প্রবণতা দেখা যায়। অর্থাৎ প্রাচীনকালে এমন সব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সময় গণনা করা হতো যা সচরাচর ঘটে না এবং জাতীয় জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসত।

আরব জাতিও এর ব্যতিক্রম ছিল না। (আল আসারুল বাকিয়া, পৃষ্ঠা-১৪)
প্রাচীনকালে আরবদের বছর গণনা

আরবরা সর্বপ্রথম সন গণনা শুরু করেছিল ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের সময়কে কেন্দ্র করে। এরপর আরবদের একটি দল তিহামার দিকে স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে বিচ্ছিন্নতার সময় কেন্দ্র করে তাদের সন গণনা শুরু হয়।

এরপর বড় ঘটনা ছিল আমর বিন লুহাইয়ের নেতৃত্ব গ্রহণ। এই অভিশপ্ত ইবরাহিম (আ.)-এর ধর্মে বিকৃতি ঘটিয়েছিল এবং মূর্তি পূজার প্রচলন করেছিল। অতঃপর কাআব বিন লুয়াইয়ের মৃত্যুর বছরকে ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়, যা অব্যাহত থাকে গাদার প্রতারণার বছর পর্যন্ত। এই বছরকে বিশ্বাসঘাতকতার বছর বলা হয়। কেননা এই বছর বনু ইয়ারবুর লোকেরা হিময়ারের অধিপতিদের পাঠানো কাবার গিলাফ লুট করেছিল এবং হজ মৌসুমে কিছু মানুষ অন্যদের ওপর আক্রমণ করেছিল।

অতঃপর আসহাবে ফিল তথা হস্তি বাহিনীর ঘটনাকে সময় গণনার মানদণ্ড ধরা হয়, যা অব্যাহত ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মদিনায় হিজরত করা পর্যন্ত। কোনো কোনো আরবের সময় গণনায় ফিজার যুদ্ধের দিন এবং হিলফুল ফুজুলের ঘটনার বর্ণনাও পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে তারা এভাবে বলত, আসহাবে ফিলের ঘটনার এক বছর অমুক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল অথবা আসহাবে ফিলের ঘটনার দুই বছর আগে অমুকের ছেলে জন্মেছিল। (আন নিহায়া : ১/৪৬৮)

নবীজি (সা.)-এর যুগে সাল গণনা

মহানবী (সা.) মদিনায় গমন করার পর মুসলমানরা সেটাকে কেন্দ্র করেই বছর গণনা শুরু করেছিল। এমনকি তারা মদিনায় কাটানো নবীজি (সা.)-এর ১০ বছরকে পৃথক ১০টি নামও দিয়েছিল। যেমন—প্রথম বছরের নাম ছিল হিজরতের বছর, দ্বিতীয় বছরের নাম ছিল যুদ্ধের নির্দেশ পাওয়ার বছর, তৃতীয় বছরের নাম ছিল পরীক্ষার বছর, চতুর্থ বছরের নাম ছিল অগ্রগতির বছর, পঞ্চম বছরের নাম ছিল ভূমিকম্পের বছর, ষষ্ঠ বছরের নাম ছিল সহমর্মিতার বছর, সপ্তম বছরের নাম ছিল বিজয় লাভের বছর, অষ্টম বছরের নাম ছিল সমতা লাভের বছর, নবম বছরের নাম ছিল দায়মুক্তির বছর, দশম বছরের নাম ছিল বিদায় হজের বছর। হিজরতের ১১তম বছরের দুই মাস ১২ দিন পর মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন।

(আল বাদয়ু ওয়াত তারিখ : ৪/১৮০)

হিজরি সনের প্রবর্তন যেভাবে

মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর ইসলামী খেলাফতের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। তখন গুরুত্বপূর্ণ চিঠি ও নথিপত্রের তারিখ সংরক্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয়, বিচারিক কর্মকাণ্ডেও তারিখ নির্ধারণ আবশ্যক হয়ে পড়ে। যেমন—তারিখ নির্ধারণ ছাড়া ঋণবিষয়ক অভিযোগের বিচার করা সম্ভব ছিল না। ফলে খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ইসলামী বর্ষপঞ্জি প্রণয়নের গুরুত্ব অনুভব করেন। এ ক্ষেত্রে আবু মুসা আশআরি (রা.)-সহ অন্য প্রশাসকদের পক্ষ থেকে তাগাদাও ছিল। ফলে উমর (রা.) সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর সঙ্গে বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের ব্যাপারে পরামর্শ করেন।

ইসলামী বর্ষপঞ্জি কিসের ভিত্তিতে রচিত হবে তা নিয়ে সাহাবিদের মধ্য থেকে একাধিক মতামত এসেছিল। যেমন—পারস্যের বর্ষপঞ্জির অনুসরণ করা, রোমান বর্ষপঞ্জির অনুসরণ করা, নবীজি (সা.)-এর জন্মের সময়কে কেন্দ্র করে নতুন বর্ষপঞ্জি নির্ধারণ করা, নবীজি (সা.)-এর নবুয়ত লাভ থেকে শুরু করা, তাঁর মৃত্যু থেকে শুরু করা, তাঁর মদিনায় হিজরত থেকে শুরু করা ইত্যাদি। এর মধ্যে উমর (রা.) হিজরতের সময়কে বেছে নিলেন। কেননা হিজরতকে কেন্দ্র করে সময় গণনার চর্চা পূর্ব থেকেই কিছুটা ছিল। অতঃপর এটাই মুসলিম বিশ্বের সময় গণনার মানদণ্ডে পরিণত হয়, যা আজও অব্যাহত আছে। (আল বিদায়া ওয়ান

নিহায়া : ৩/২৫১; তারিখুত তাবারি : ২/৩০)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

কিউএনবি/অনিমা/০৮ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৫:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit