ঢাবি প্রতিনিধি : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার “সমন্বয়ক” পদ নিয়ে বাকযুদ্ধ চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই সংগঠকের! গতকাল ২৯ জুন রাতে এক ফেসবুক পোস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুর্দিনে মাঠে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নাম্বার সহ-সমন্বয়ক সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ জানিয়েছেন,”উমামা ফাতেমা ১৫৮জন সমন্বয়কের একজন হলেও মিডিয়া হেজেমনির কারণে গণঅভ্যুত্থানে নারীদের এজেন্সি একাই নিয়ে নেয়।
উমামার দায়িত্ব ছিল কেবল সুফিয়া কামাল হলকে অর্গানাইজ করা।নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তার কোন ভূমিকা ছিল না! অপরদিকে আজ ৩০ জুন ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক সিমা আক্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন,”উমামা বাম কোটায় সমন্বয়ক পদ পায়নি।তার সাংগঠনিক যোগ্যতায় পেয়েছে।এটা আমি জানি।হলের মেয়েরা তার প্রমাণ।”
উমামা ফাতেমা কে নিয়ে নাদিম মাহমুদ শুভ যা বলেছেন-
কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুর্দিনে মাঠে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নাম্বার সহ-সমন্বয়ক সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা কে নিয়ে বলেন,”উমামা ফাতেমা, গণঅভ্যুত্থানের পরিচিত নারীমুখ। ৫ই আগস্টের পর পুনর্গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র। ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক নেত্রী। ৫ই অগাস্টের পরে বামপন্থীদের মিডিয়া হেজেমনির বদৌলতে গণঅভ্যুত্থানে সকল অংশগ্রহণকারী নারীদের এজেন্সি উমামা একাই নিয়ে নেয়। যেন উমামার নেতৃত্বেই হাজার হাজার মেয়েরা রাস্তায় নেমেছিল। সকল নারীদের কন্ঠস্বরকে হাইজ্যাক করে নারী সমন্বয়ক হিসেবে মিডিয়া ও এনজিওতে উমামা তৈরি করে একক আধিপত্য।
বাম কোটায় উমামা ফাতেমা সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, উমামা ছিল ১৫৮জন সমন্বয়কের একজন কেবল, যার দায়িত্ব ছিল কেবল সুফিয়া কামাল হলকে অর্গানাইজ করা। বামপন্থী কোটায় সমন্বয়ক পদ সহজে নিয়েছিল উমামা ফাতেমা।যদিও ফেডারেশনের কেউই নিজেদের বামপন্থী বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।”
উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আন্দোলন দখলের চেষ্টার অভিযোগ করে শুভ বলেন,”আন্দোলনের প্রথম দিকে ছাত্র ফেডারেশনের মহানগরের মেয়েদের নিয়ে এসে ব্যানার দখলের চেষ্টা করতো উমামা। শাহবাগে বক্তব্য দেওয়ার জন্য স্টেজ দখলের চেষ্টা করতো প্রায়ই। এক পর্যায়ে উনাকে সুযোগ দেওয়া হয় কথা বলার। এরপর কেবল টকশো। এবং এই টকশোপ্রীতি ৫ই অগাস্টের বিজয়ের পরেও উমামার দূর হলো না। ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীদের ভুয়া সমন্বয়ক পরিচয়ে বিভিন্ন টকশোতে পাঠাতো।”
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উমামা ছিলো না এমন অভিযোগ করে শুভ জানান, “একপর্যায়ে উমামা মাঠে সময় দেয়। কারণ শুধু টকশো করে নেতৃত্ব দেওয়া ও নেওয়া সম্ভব নেয়। সুফিয়া কামাল হলটা গুছায়। উমামা সমন্বয়ক হলেও কোর কোনো পরিকল্পনায় উমামা কখনোই ছিল না। উমামার দরকার ছিল কেবল মিডিয়ায় একটা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ।”
আন্দোলনের দুর্দিনে উমামা ফাতেমার অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুভ বলেন, “শাটডাউন ও কারফিউ শুরু হলে উমামা ডিএইচএসে পুরাটা সময় থেকেছে। যেখানে অন্য নেতাদের পালায় বেড়াইতে হইছে। নুসরাত তাবাসসুমকে মিরপুরের বাসার দরজা ভেঙ্গে ডিজিফাই গ্রেফতার করে আনছিল। আর উমামা ছিল সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। তবে কিছু বিবৃতি উমার স্বাক্ষরে গেছিলো সেসময়। কাদেরদের সাথেও কোনো যোগাযোগ ছিল না উমামার।”
৫ আগস্টের পর উমামা ফাতেমার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, “৫ই অগাস্টের বিজয়ের পরে উমামা নারীদের একক ফেস হয়ে উঠার চেষ্টা করে। ছাত্রফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করে বামপন্থী ট্যাগ সরানোর জন্য। গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ-আহতদের জন্য কাজ করতে চায়- এসব মিথ্যা বুলি বলে বৈষম্য বিরোধীর মুখপাত্র পদ বাগায় নেয়। যারা বৈষম্য বিরোধীর অর্গানোগ্রামে আসবে তারা ন্যাশনাল পলিটিক্স করবে, ক্যাম্পাস পলিটিক্স করবে না এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেনা – এই শর্তে উমামা বৈছাআর মুখপাত্র হয়।টকশো, ইন্টারভিউ এবং স্টেজে বক্তব্য দেওয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব পালন করতেন না উমামা। মিটিং এ উপস্থিত থাকতেন না প্রায়ই।
বৈষম্যবিরোধীর সকল কমিটি উমামা থাকতেই হয়েছে কিন্তু দায়িত্ব নেন নাই। সেই সাংগঠনিক যোগ্যতাও ছিল কি-না অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে।নির্বাহী কমিটির মিটিং চলাকালীন সময়ে পুরুষ সহযোদ্ধার গায়ে হাত তোলার মত ঘৃণ্য কাজ উমামা ফাতেমা করেছেন।তাছাড়া বৈষম্য বিরোধী প্লাটফর্মের বিলুপ্ত চাইতেন উমামা;কিন্তু মুখপাত্র পদ পাওয়ার পর সংগঠন বিলুপ্তির ব্যাপারে নূন্যতম কোন কথা বলে নাই।
উমামা ফাতেমার সাবেক সংগঠনের সাথে সম্পর্ক আছে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “ছাত্র ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করলেও গোপনে যোগাযোগ রাখতেন সেই সংগঠনের সাথে। সকল তথ্য নিজের সাবেক সার্কলের কাছে পাচার করতেন উমামা। বৈষম্যবিরোধী থেকে যাতে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান না ঘটে তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাইছে উমামা। ফাহাম আব্দুস সালামের সাথে গোপনে মিটিং করে বিএনপির এজেন্ডা অনুযায়ী বৈষম্য বিরোধীকে পরিচালনার চেষ্টা চালায়।”
উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে সংগঠন দখলের অভিযোগ করে তিনি বলেন,”নতুন দল গঠনের পর বৈষম্য আহ্বায়ক হওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় উমামা। একটা মিটিং এ সহকর্মীদের সাথে হাতাহাতি পর্যায়েও যায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত সম্ভব হবেনা ভেবে হাল ছেড়ে দেয়। শর্ত ভঙ্গ করে ক্যাম্পাসে উকিঝুকি উমামা প্রথম থেকেই দিতো। উমামাকে সাংগঠনিক কোনো কাজে পাওয়া যেতো না। বৈষম্যবিরোধীর একটা কমিটির সমস্যাও উমামা কোনো দিন সমাধান করে নাই।”
উমামা ব্যক্তিস্বার্থে গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে জাস্ট টিস্যু পেপারের মত ব্যবহার করেছে। ব্যবহার করা শেষ এখন ক্যাম্পাসে গিয়ে ছাত্র সংসদের জন্য ক্যাম্পেইন করতেছে। উমামা ছিল অনুপ্রবেশকারী, গণঅভ্যুত্থানকে ব্যবহার করে নিজেকে মিডিয়ায় পরিচিত করানো ছাড়া উমামার কোনো রাজনীতি নাই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে উমামাদের কখনোই সম্পর্ক ছিল না।”
উমামা ফাতেমা কে গণঅভ্যুত্থানের নৈতিকতার ইজারাদার বলে ব্যঙ্গ করে শুভ বলেন,”প্রথাগত বামপন্থীদের মতই একটা আন্দোলন ,একটা ব্যানার কে কিভাবে দখল করতে ,ব্যবহার করতে হয় এটা উমামা ভালই জানে। সচিবালয়েও উমামা গিয়েছে বহুবার। এক দূর্নীতিবাজ অলিগার্কের সাথে রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। হেয়ার রোডেও গিয়ে ধর্ণা ধরেছে বহুদিন। সবকিছু করার পরেও গণঅভ্যুত্থানের নৈতিকতার ইজারাদার হয়ে গেছে সে এখন।নিশ্চয়ই ইতিহাস ও খোদাতায়ালা এই সবকিছু বিচার করবে।”
উমামা ফাতেমার পক্ষে ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক সিমা আক্তার যা বলেন—-
এদিকে সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ এর মন্তব্য প্রসঙ্গে ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক সিমা আক্তার আজ ৩০ জুন ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন,” উমামা ফাতেমা কে নিয়ে সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ যা যা লিখল তা একপাক্ষিক। উমামার সাথে লড়াই করা আমি অনেক কিছুই দেখেছি যা for the sake of the movement( আন্দোলনের স্বার্থে)তখন কিছু বলিনি।আর কাদা ছোড়াছুড়ির নোংরা রাজনীতিও করতে চাইনা।তবে উমামাকে নিয়ে লিখলে এর সত্যটা লিখা আমার দায়িত্ব যার সত্যতা যাচাই আপনারাই করুন।”
কোটা আন্দোলনের শুরুতে দাবির দ্বিধা সম্পর্কে সিমা আক্তার জানান, “প্রথমে ব্যানারের নাম ছিল কোটা পুনঃবহাল চাইনা।সেই ব্যানারের মধ্যেই আমরা সংস্কারের আলাপ তুলি।তাই নানা ভাবে আমাদের কে ব্যানার কিংবা বিভিন্ন কাজে সাইড করার প্রবণতা দেখি।১০-১২জনের ছাত্রশক্তি কোরাম আমরা আর সাধারণ শিক্ষার্থী।তখন পর্যন্তও শিবির আর ছাত্রদল ঘোষণা দিয়ে আসেনি।তারা লোকবল দিয়েছে।পরে ভলেনটিয়ারদের নাম নেই লাইব্রেরীর সামনে থেকে।আমাকে ছাত্র ফেডারেশনের মেমবার হওয়াতে ভলেনটিয়ারদের গ্রুপেও রাখা হয়নি।তাও আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি।ইতোমধ্যে শামসু হলের আইন মেয়েটা হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে।।সেই শিক্ষার্থীদের লিস্টও আমি করি যা এখনও আছে।”
সমন্বয়ক পদ সম্পর্কে তিনি বলেন,”এখন আসি সমন্বয়ক পদ দেয়ার আলাপে।আমি অনাবাসিক হওয়ার কারণে নাকি সমন্বয়ক পদ দেয়া হবেনা।অথচ কবি সুফিয়া কামাল হলের উম্মে সালমা কে ঐ হলের সমন্বয়ক দিতে চাচ্ছিল।ও তখন হলে থাকত না।আর উমামা তার শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন কাজ করায় তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোমধ্যেই ছিলো আর বড় আপুরা ওকেই হলের সমন্বয়ক হিসেবে মনোনিত করে।
শামসুন্নাহার হলে ছাত্রশক্তি কোরামের মেয়েদের ঘাটি তাই আমাকে তারা নেতৃত্বের কম্পিটিশনে নেয়নি।পাঁচজনের হলকমিটিতেও রাখেনি।আমি সুমির সাথে যোগাযোগ করি তাও তারা আমাকে রাখেনি।অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেককেই সমন্বয়ক সহ সমন্বয়ক পদ দেয়া হইসে। অনেকেই তেমন একটিভ ছিলোনা।তখন থেকেই এই কোরামের বাইরের কাউকে মাইক দিতোনা।ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম একটু স্লোগান দেয়ার জন্য।ছাত্রশক্তি কোরামের নারীদের মধ্যে তখন স্লোগান দিতে তেমন কেউ পারত না।তাও তাদেরকেই সর্বোচ্চ স্পেইস দিতো আর আমাকে আর উমামার যতটুকু স্পেইস আমরা করতে পারতাম সেটাতেও বাধা দিতো।ব্যানারে দাঁড়াতে দিতনা।
উমামা ফাতেমা নিজ যোগ্যতায় সমন্বয়ক হয়েছেন এমন দাবি করে সিমা আক্তার বলেন,”ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েদেরকে আমাদের পিছনে লাগায় দিতো। তারা রীতিমতো ফিজিকালি টরচার করত।চিমটি মারত লাথি মারত।একদিন বাকের আমার সাথে রীতিমতো বেয়াদবি করে।আমি আর এই হিপোক্রেসি নিতে পারছিলাম না।হাতিরপুলে আমি আর উমামা কান্না করেছি এই ধরনের বিহেভিয়ার পেয়ে ওদের থেকে।আমি বলসি আমি আর পারব না ব্যনারে দাঁড়াতে।উমামা বলল ওর সাংগঠনিক পদ থাকায় ব্যানারে দাঁড়াতে দিবে না।ফেডারেশনের জন্য অন্তত আমাকে থাকতেই হবে।উমামা বাম কোটায় সমন্বয়ক পদ পায়নি।তার সাংগঠনিক যোগ্যতায় পেয়েছে।এটা আমি জানি।হলের মেয়েরা তার প্রমাণ।
কিউএনবি/আয়শা//০১ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৪:৫৪