আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : পাহাড়ে বেপরোয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ এর অস্ত্রধারি সন্ত্রাসীরা আবারো টহলরত নিরাপত্তাবাহিনীর উপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রাঙামাটির সদর উপজেলার মৌনপাড়া এলাকায় অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদের মজুদসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবস্থান সুষ্পষ্ট তথ্যে অভিযান পরিচালিত করতে গেলে এই হামলার শিকার হয় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা।
নিরাপত্তাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। এই ঘটনার পর থেকে উক্ত এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীল প্রায় ১৮০ জনের টিম উক্ত এলাকায় কর্ডন করে অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানাগেছে। আইএসপিআর এর পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় অভিযান পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তাবাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৩ জুন) সেনাবাহিনীর একটি টহল দল মৌনপাড়া এলাকায় গেলে মেজর সুদর্শন নামে ইউপিডিএফ (প্রসীত)- এর কমান্ডার পরিচয়ে মোবাইল ফোনে টহল কমান্ডারকে হুমকি দিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে বলেন। এরপর সেনাবাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে এবং বাড়তি সদস্য মোতায়েন করে। পরদিন মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোররাতে, মৌনপাড়া স্কুল এলাকায় ইউপিডিএফ (প্রসীত)-এর সদস্যদের অবস্থান নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। ঘিরে ফেলার সময় সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়।
এঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য মো. তরিকুজ্জামান খান ডান হাতের আঙুলে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে দ্রুত হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামের সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ইউপিডিএফ (প্রসীত)-এর তিনজন সদস্যকে ঘটনাস্থল থেকে এলএমজি রাইফেল, গোলাবারুদ ও আইডি কার্ডসহ আটক করা হয়। আটককৃতদের হলো: (১) মনসুখ চাকমা-৫০, পিতা মৃত; বিন্দু কুমার চাকমা, (২) সিন্ধু মনি চাকমা-২৩, পিতা মনসুখ চাকমা ও (৩) অন্তর চাকমা-১৯, পিতা সোনামুনি চাকমা।
অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে ১টি এসএমজি (সাবমেশিন গান), ১২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৪৬ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, কয়েকটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলাগুলির সময় ঘাগড়া উল্টো পাড়ার এক পাহাড়ি ব্যক্তি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ(প্রসীতপন্থী) মূল দলের সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবছর ১০গুণ হারে বেশি চাঁদা আদায় করছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
পাশ্ববর্তী দেশগুলো থেকে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের লক্ষ্যে হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের পাশাপাশি ব্যাপকহারে সশস্ত্র তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে সংগঠনটি। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সংস্কার কমিশনের সাথে মতবিনিময়ের প্রথম পর্বের পর ইউপিডিএফকে পরের বৈঠকগুলোতে আর না ডাকার সিদ্ধান্তের পরপরই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইউপিডিএফর সন্ত্রাসীরা। চলতি বছরে বেশ কয়েকবার রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ কর্মসূচীও পালন করেছে চুক্তি বিরোধী এই ইউপিডিএফ।
এই সংগঠনের সক্রিয় সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। তারা স্থানীয় জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিল। এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. ফরহাদ হোসেন প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমরা রাঙামাটির সার্বিক পরিস্থিতির প্রতি সার্বক্ষনিক নজর রাখছি। নাগরিকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে বা যাহারা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিবো।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ জুন ২০২৫, /সন্ধ্যা ৭:০৪