ডেস্ক নিউজ : একই দেশে দুই নীতি চলতে পারে না মন্তব্য করে নন-এমপিও শিক্ষকদের সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম বলেছেন, এটি চরম বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করে শিক্ষকদের সীমাহীন কষ্টের কথা চিন্তা করে স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় আমরা কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমেছি রাজপথ থেকেই আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে ছাড়ব।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঐক্য পরিষদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেন তিনি।
শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও সংগঠনের মোর্চা ‘সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ’ এর উদ্যোগে প্রথম দিনের শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক প্রিন্সিপাল মো. সেলিম মিয়া।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধান সমন্বয়ক প্রিন্সিপাল সেলিম মিয়া বলেন, “গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের টানা ১৭ দিনের আন্দোলন চলাকালে ১১ মার্চ আমাদের ৭ সদস্যের শিক্ষক প্রতিনিধি দলকে সচিবালয়ে আমন্ত্রণ জানান শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব। আলোচনার শুরুতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন- নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ এটা আপনাদের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি। আপনাদের দাবির কথা চিন্তা করে আগামী মে মাসের মধ্যে এমপিওর সকল কার্যক্রম শেষ করে পরিপত্র জারি করব এবং আগামী জুলাই মাস থেকে বেতন ধরা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। তাই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের জন্য বাংলাদেশের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা কাফনের কাপড় পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওর সুনির্দিষ্ট কোনও ঘোষণা না আসবে ততক্ষণ আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিসহ আরও কঠিন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
কর্মসূচিতে মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। বাংলাদেশে প্রায় ২০০০ অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ননএমপিও এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০-২৫ বছর তারও অধিক সময় ধরে বিনা বেতনে চাকরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এতে শিক্ষার মান নিম্ন দিকে যাচ্ছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের ধার প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করেছিলাম এই শিক্ষা বান্ধব সরকার বৈষম্য দূর করে স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে অসহায় শিক্ষকদের মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজে কোনও অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব মহোদয়কে বিনয়ের সহিত বলছি পরিস্থিতি খারাপের দিকে ঠেলে দিবেন না।
মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. নাজমুস সাহাদাত আজাদী বলেন, আমরা গত ২ মার্চ সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করি। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টার সম্মানিত এপিএস সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেছিলেন আমাদের বিষয়ে অবগত আছেন। আমাদের স্মারকলিপিটি তিনি প্রধান উপদেষ্টার নিকট হস্তান্তর করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। দুঃখের বিষয় প্রধান উপদেষ্টা এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার নিকট আকুল আবেদন করছি, অনতিবিলম্বে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির ঘোষণা করবেন।
সাংগঠনিক সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মো. মুনিমুল হক বলেন, আপনারা জানেন গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৭ দিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১১ মার্চ স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের দাবি সরকার মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি এবং এমপিওভুক্তি কাজের অগ্রগতি দেখতে না পাওয়ায় নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা হতাশ। এমনকি প্রস্তাবিত বাজেটে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির খাতে সুস্পষ্ট কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছি।
তিনি আরও বলেন, নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবি যৌক্তিক ও মানবিক এবং নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- যুগ্ম-সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান বিন সোলাইমান, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ বাকী বিল্লাহ, সমন্বয়ক সুপার ফরহাদ হোসেন বাবুল, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আফতাবুল আলম, সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর এরশাদুল হক, সমন্বয়ক প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বাবুল, প্রভাষক রায়হান কবির মিঠু, বিভিন্ন জেলা সভাপতি ও সম্পাদকসহ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
কিউএনবি/অনিমা/২২ জুন ২০২৫, /সকাল ১০:৩৫