আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০১৫ সালে ইরান যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার ফলে দেশটির ওপর থেকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। ফলে চুক্তিটি কার্যত ভেঙে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প পরমাণু ইস্যুতে ইরানকে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দেন।
ওমানের মধ্যস্থতায় পরমাণু ইস্যুতে নতুন একটি চুক্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার (২৩ মে) ইতালির রাজধানী রোমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই জানায়, আলোচনায় অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।
ষষ্ঠ ধাপের আলোচনার আগে ওমান সফর করছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। দুইদিনের সফরে গত মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানী মাস্কাটে পৌঁছান তিনি। গত বছরের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো আরব রাষ্ট্রে এটা তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।
মাস্কাটের আল আলম প্রাসাদে ইরানি প্রেসিডেন্টকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক। এরপর সন্ধ্যায় সেখানে দুই রাষ্ট্রপ্রধান দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, তেহরান ইরান-মার্কিন পরোক্ষ আলোচনার প্রক্রিয়ায় ওমানের সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকার প্রশংসা করে এবং আশা করে যে, এর ফলে ভালো ফলাফল আসবে।
ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে ওমানের কৌশলগত অবস্থানের উপর জোর দিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, ওমানের উপর তেহরানের পূর্ণ আস্থা রয়েছে এবং এই আস্থা উভয় পক্ষের উপর সম্পর্ক জোরদার করার জন্য একটি যৌথ দায়িত্ব অর্পণ করে। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান সকল ক্ষেত্রে ওমানের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত এবং বিশ্বাস করে, দুই দেশের এমন ক্ষমতা রয়েছে যা একে অপরের এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতির জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।
তার কথায়, ‘আমরা মুসলিমদের মর্যাদা ও মহত্ত্বের জন্য আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যা কিছু আছে তা করতে প্রস্তুত। আমাদের প্রত্যেকের এমন ক্ষমতা রয়েছে যা একে অপরের এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য জাতির কল্যাণ ও অগ্রগতির জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, কোনো বহিরাগত শক্তি মুসলিম দেশ ও জাতিগুলোকে দমন করতে পারবে না।’পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ইরান অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওমানের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত।
এদিন ইরানের প্রেসিডেন্ট ও ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক আল সাইদের উপস্থিতিতে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ১৮টি চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও আইনি, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, মিডিয়া, প্রযুক্তি, জ্বালানি ও খনি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে করা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৯ মে ২০২৫, /রাত ১২:২১