মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

এক হাজার বছর আগের ‘বালতি’র রহস্যভেদ!

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫
  • ৫৪ Time View

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : প্রাচীন এক ধাতব বালতি। তার ভেতরে পোড়া হাড়, একটি চিরুনী আর কিছু অজানা আঁশ। এই বালতি ঘিরেই গত শতকের এক রহস্য এবার অনেকটাই উন্মোচিত হলো ইংল্যান্ডের সাফোক এলাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা সাটন হু-তে।

সিএনএনের খবর অনুসারে, ১৯৩৮-৩৯ সালের দিকে আবিষ্কৃত হওয়া সপ্তম শতাব্দীর অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন রাজকীয় কবরস্থান সাটন হু বহুদিন ধরেই ইতিহাসপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্র। সেই স্থানেই ১৯৮৬ সালে দুর্ঘটনাবশত খুঁজে পাওয়া এক ছয় শতাব্দীর বাইজানটাইন বালতির খণ্ডাংশ নিয়ে গবেষণা চলছিল বহু বছর। এবার নতুন খননে বালতির সম্পূর্ণ তলদেশ ও তার ভিতরের রহস্য উদঘাটন করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

বালতির ভেতরে কী ছিল?
সাম্প্রতিক খননে একটি মাটির ব্লকে বালতির অংশবিশেষ পাওয়া যায়। সেটিকে স্ক্যান ও এক্স-রে করার পর গবেষকেরা দেখতে পান—বালতির ভিতরে আছে আগুনে পোড়া মানব ও প্রাণীর হাড়। আছে একটি অবিকৃত চিরুনি, যা হরিণের শিং থেকে তৈরি। ধারণা করা হচ্ছে, বালতিতে থাকা হাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে একটি খুলি ও গোড়ালির অংশ, সম্ভবত উচ্চবংশীয় কোনো ব্যক্তির দেহাবশেষ।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানান, এ ধরণের বালতিতে কবরের নিদর্শন খুবই বিরল। সাধারণত মৃতদেহ দাহ করে মাটির পাত্র বা ব্রোঞ্জের পাত্রে সংরক্ষণ করা হতো। তবে বালতিকে ব্যবহার করার ঘটনা এবারই প্রথম।

বালতিটির গঠন ও ইতিহাস
বালতির নিচের অংশে আছে সুশোভিত খোদাই, যেটিতে দেখা গেছে উত্তর আফ্রিকার শিকার দৃশ্য—যোদ্ধা, সিংহ, কুকুর ও অস্ত্রশস্ত্রের চিত্র। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি বাইজানটাইন সাম্রাজ্যে (বর্তমান তুরস্কের আন্তাকিয়া অঞ্চলে) তৈরি হয়ে পরে পূর্ব ইংল্যান্ডে এসে পৌঁছায়। সম্ভবত এটি ছিল কূটনৈতিক উপহার, কিংবা কোনো সৈনিকের লুটের মাল। বালতির তলদেশে পাওয়া কঙ্কালের পাশে ছিল কিছু অজানা আঁশ ও পাতা। গবেষকেরা মনে করছেন, এগুলোর ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির পরিচয় বা সময়কাল সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

কেন এমন মর্যাদায় দাহ?
গবেষণায় জানা যায়, অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন যুগে ঘোড়া বা অন্য দামি প্রাণীসহ মরদেহ দাহ করানো হতো সম্মানের প্রতীক হিসেবে। সাটন হু-র এই বালতিটি হয়তো এমনই কোনো ব্যক্তির শেষ স্মৃতি, যিনি জীবনে ক্ষমতা, সম্মান বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সাটন হু: ইতিহাসের জীবন্ত পাঠশালা
সাটন হু-র খননকাজ এক দীর্ঘ সময়যাত্রা। ৯০ ফুট দীর্ঘ এক কাঠের জাহাজের ভেতরে রাজা রাদওয়াল্ডের সমাধি, ঘোড়ার কবর, নানা ধাতব নিদর্শন ও সামগ্রী নিয়ে এটি এক ঐতিহাসিক চমক। নতুন খননের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, এই স্থানটি শুধু রাজকীয় নয়, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যম বা উচ্চ শ্রেণির মানুষদেরও চিরশয্যার স্থান ছিল।

সাটন হু-তে বর্তমানে চলমান একটি দুই বছরের গবেষণায় অংশ নিচ্ছে ন্যাশনাল ট্রাস্ট, ফিল্ড আর্কিওলজি স্পেশালিস্টস এবং বিখ্যাত ‘টাইম টিম’। তারা মনে করছেন, বালতির এই নতুন আবিষ্কার অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন যুগের কবর রীতিকে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।

টাইম টিমের গবেষক হেলেন গিক বলেন, এটি একটি আশ্চর্যজনক সংমিশ্রণ—দক্ষিণের ধ্রুপদী জগতের একটি পাত্রে রাখা হয়েছে উত্তরের দাহিত দেহাবশেষ। এই বালতি আসলে সাটন হু’র অদ্ভুত জগতের প্রতিচ্ছবি। যেখানে আছে জাহাজ কবর, ঘোড়ার কবর, এখন আবার ‘বাথ-বালতির কবর’। কে জানে, ভবিষ্যতে আর কী অপেক্ষা করছে!

কিউএনবি/অনিমা/২৭ মে ২০২৫, /সকাল ৫:৫৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit