শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

রাঙামাটির শিক্ষা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ২১ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দুদকে

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
  • ৬৭ Time View

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজ নিয়ে ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২১ কোটি টাকার টেন্ডার অন্যকে পাইয়ে দেয়ার লক্ষে অবৈধভাবে সংশ্লিষ্ট্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নন রেসপন্সিভ করার অভিযোগে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে। রাঙামাটিস্থ দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহিদ কালাম অভিযোগ প্রাপ্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।গত ২৯/০৪/২০২৫ ইং তারিখে প্রদত্ত অভিযোগপত্রে, মো: আলী ইমাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ইইডি, চট্টগ্রাম সার্কেল (চেয়ারপারসন) ও জনাব বিজক চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী, ইইডি, রাঙামাটি (মেম্বার সেক্রেটারী) জেলাদ্বয় যোগসাজশ করে নিয়মবহির্ভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ আমার প্রতিষ্ঠানের নামে চলমান দেখিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে টেন্ডার আইডি নং- ১০৫৩৮৮৭ ও ১০৫৩৮৮৮ হতে আমার প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে নন রেসপন্সিভ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।  

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, রাঙামাটি জেলা কর্তৃক বিগত ১৮/১২/২০২৪ খ্রি: তারিখ ই’জিপিতে আহ্বানকৃত দরপত্রের টেন্ডার আইডি নং- ১০৫৩৮৮৭ ও ১০৫৩৮৮৮ তে অংশগ্রহণ করে ১০% নিন্মদরে দরপত্র দাখিল করি। মোট ৩ জন ঠিকাদার উভয় দরপত্র দুটিতে ১০% নিম্নদরে দরপত্র দাখিল করেন। প্রথম মূল্যায়ন এর সময় মো: আলী ইমাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ইইডি, চট্টগ্রাম সার্কেল ও জনাব বিজক চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী, ইইডি, রাঙ্গামাটি জেলা যোগ সাজশ করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টেন্ডার ক্যাপাসিটি কম দেখিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানকে নন রেসপন্সিভ হিসাবে মূল্যায়ন করে আমাকে দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম হতে বাদ দেয়। 

বিষয়টি প্রধান প্রকৌশলী, ইইডি, শিক্ষা ভবন, ঢাকা-কে অবহিত করার পর প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক পুন:রায় মূল্যায়নের জন্য ইজিপি এ দেওয়ার নির্দেশ পর তারা উভয়ই আমাকে আবারো টেন্ডার কার্যক্রম হতে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন ফন্দি আঁটে। বৈধ কোন উপায় না পেয়ে অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ আমার প্রতিষ্ঠানের নামে চলমান দেখিয়ে আমাকে নন রেসপন্সিভ করে দেয়। অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাজের টেন্ডার আইডিগুলো হলো: ৬৬৮৭৮৭, ১৩৩৯৬৪। যা মহোদয় কর্তৃক যাচাই করলেই এর সত্যতা মিলবে।তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জনাব মো: আলী ইমাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব বিজক চাকমা তাদের হীন চরিতার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উল্লেখিত ২টি কাজ একই ঠিকাদারকে (শুভঙ্কর-কিউসি) দিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও উক্ত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

 
এদিকে, ইতোমধ্যেই এই অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট্য অভিযোগকারিরা ইপ্রকিউরমেন্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানাগেছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিতে আগামী ২১ মে তারিখে এই বিষয়ে শুনানীর দিনধার্য্য করা হয়েছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।এরআগে গত ৯ই মে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প পরিদর্শনে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ঢাকা) এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আলী ইমাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (চট্টগ্রাম) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান আলী এসময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলেন।

 
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, দুদকে অভিযোগ দিয়েছে এটি জানার পরেও সেদিন ৯ই মে তড়িঘড়ি করে ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজ দুটির “নোহা” দিয়ে দেওয়া হয়েছে।সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানাগেছে, ই-প্রকিউরমেন্টে অভিযোগ দাখিলের পরপরই সকল ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় বর্তমানে রাবিপ্রবি’র ছাত্র-ছাত্রী হোষ্টেল নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ২১শে এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়েছে।এদিকে, এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মি. জাহিদ কালাম হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় অভিযোগ প্রাপ্তি সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমরা অভিযোগটি ঢাকা পাঠানো হয়েছে; অনুমতি পাওয়াগেলে এই বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।এরআগে উক্ত অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সৈয়দ মামুনুল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এই সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।

অপরদিকে, অভিযোগপত্রে উল্লেখিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ঢাকা) এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আলী ইমাম এর মুঠোফোনে কল দিয়ে এবং হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি। এছাড়াও এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনিব্যস্ত আছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন। পরবর্তীতে তার ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিলে তিনি সেটা সিন করলেও কোনো বক্তব্য দেন নি।এদিকে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে কাজ করেছেন এমন একাধিক ঠিকাদার ও অফিসের সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গত প্রায় এক দশকে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে যেসকল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয়েছে; সে-সকল কাজের মেটেরিয়াল সার্টিফিকেট এর প্রায়গুলোই জাল সার্টিফিকেট বলে জানাগেছে।

 
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় চুয়েট এর প্যাড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিশেষ কায়দায় জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট্য ঠিকাদারেরা এসকল মেটারিয়াল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে সেগুলো রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে জমা দিয়ে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিলগুলো উত্তোলন করে নেয়। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে যেমনিভাবে বঞ্চিত হচ্ছে; তেমনিভাবে এসকল কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ?

কিউএনবি/অনিমা/১৮ মে ২০২৫, /সন্ধ্যা ৭:৪৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit