আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হংকংয়ের র্যাম্বলার চ্যানেলের পাড় ঘেঁষে অবস্থিত বিশাল বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানো চলছিল প্রতিদিনের মতোই। কিন্তু এপ্রিলের ৯ তারিখ দুপুর ১২টা ১ মিনিটে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘পারস্পরিক’ শুল্ক কার্যকর হলো, তখন কোনো সাইরেন বাজলো না, থামলো না পণ্য পরিবহনও। অথচ সেই মুহূর্তেই বিশ্ব বাণিজ্যের এক নতুন যুগে প্রবেশ করলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, শুরু হলো বাণিজ্য যুদ্ধের নতুন পর্ব।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে একের পর এক ধাক্কা দিয়ে চলেছে। চীনও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। শুল্কের এই লড়াই ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। চীনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত করা হয়েছে ফেন্টানাইল উৎপাদনের অভিযোগে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। উচ্চমূল্যের কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমবে, যা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। জেপি মরগান পূর্বাভাস দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দায় পড়ার ৬০ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক শুল্ক বিলম্বের কারণে এই শঙ্কা কিছুটা কমেছে। চীনের অর্থনীতিও চাপে রয়েছে। দেশটি দীর্ঘমেয়াদি সম্পত্তি খাতের মন্দা ও মূল্যহ্রাসে ভুগছে। ১২৫ শতাংশ শুল্কের প্রভাবে চীনের জিডিপি এ বছর প্রায় ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাশ।
চীনা রপ্তানিকারকরা এখন বিকল্প পথ খুঁজছেন। তারা নিজেদের পণ্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে সেগুলোকে ফিনিশড গুডসে রূপান্তর করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির চেষ্টা করছেন। তবে এই কৌশলও যুক্তরাষ্ট্রের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে না। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য উপদেষ্টা ভিয়েতনামকে ‘চীনের উপনিবেশ’ বলেও মন্তব্য করেছেন। বিশ্বের বাণিজ্যিক কাঠামো যে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে, তা স্পষ্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তি প্রায় ভেঙে পড়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ এপ্রিল ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৪০