আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় জোর সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। দেশটির ১২ মাইল ভেতরে ঢুকে পড়েছে বর্বর সেনারা। বাড়িয়েছে হামলাও।
৬৫ বছর বয়সী গ্রামের প্রবীণ আলী আল-আহমাদ বলেছেন, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঘরবাড়ি তল্লাশি শুরু করে এবং কিছু ঘর ধ্বংস করে দেয়। অনেক পরিবারকে একটি স্কুলে রাখা হয়।’ গত চার মাস ধরে গ্রামটি ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রায় ৩৫০ জনকে তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আল-আহমাদ। যদিও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শুরুর দিকে দক্ষিণ সিরিয়ায় আক্রমণ ‘অস্থায়ী’ বলে অভিহিত করেছিলেন কিন্তু ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়।
সম্প্র্রতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ইসরাইল অনির্দিষ্টকালের জন্য সিরিয়ায় থাকতে প্রস্তুত। সিরিয়ার আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ ফায়াদ বলেছেন, ‘ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তারা মানবিক সহায়তা প্রদানের অজুহাতে বেসামরিক যানবাহনে করে হামিদিয়ে গ্রামে প্রবেশ করছেন।’ ২৪ ফেব্রুয়ারি কুনেইত্রা এবং দারা শহরেও হামলা শুরু করে ইসরাইলি সেনারা। সিরিয়ায় সরকার পতনের পর প্রথম জাতীয় সংলাপ সম্মেলনের ঠিক পরেই এই হামলা চালানো হয়। যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার জন্য সব সম্প্র্রদায়ের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন।
আল-রাফিদ গ্রামের ৪৭ বছর বয়সী ওমর হানুন বলেছেন, আল আসবাহ গ্রামের ১০০ বছরের পুরোনো গাছগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া তাদের কাছাকাছি আসা যে কাউকেই গুলি করে হত্যা করছে তারা। আল-রাফিদের আরেকজন বাসিন্দা শেখ আবু নাসর বলেছেন, ‘আমরা দখলদার রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিই না। আমরা একা কিন্তু অন্য কেউ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করলেও আমরা এখানে আমাদের জমিতেই থাকব।’
অধিকৃত গোলানের সীমান্তবর্তী গ্রাম কোডানার একটি স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক বদর সাফি বলেছেন, ‘কয়েক ডজন ইসরাইলি সেনা সেখানকার বাসিন্দাদের জমি দখল করেছে। কুকুর নিয়ে শহরে নিয়মিত টহল দিয়েছে। তারা কতবার আমাদের গ্রামে প্রবেশ করেছে তার হিসাব আমি জানি না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার এক প্রতিবেশী এবং বন্ধুর জমিও দখল করেছে সেনারা। সে এখন আমার বাড়িতে থাকে। সে প্রতিদিন কাঁদে কারণ সে সবকিছু হারিয়েছে।’
ইসরাইল তার দখলদারিত্বকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য আরেকটি কৌশল ব্যবহার করছে তা হল দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজের (দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সংখ্যালঘু) সমর্থন দাবি করা। ইসরাইল দ্রুজের আনুগত্যের ওপর নির্ভর করে স্থায়ীভাবে তাদের উপস্থিতিকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে।
স্পষ্টভাবে বলতে গেলে দ্রুজের অনেকটা কাছে টানারই চেষ্টাই চালাচ্ছে ইসরাইল। ১ মার্চ নেতানিয়াহু এবং কাটজ ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজের একটি গ্রাম জারামানাকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। দামেস্ক শহরতলিতে সংঘর্ষের খবরের পর কাটজ ঘোষণা করেন, ‘আমরা সিরিয়ার চরমপন্থি ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে দ্রুজের ক্ষতি করতে দেব না। যদি সরকার জারামানায় তাদের ও পর আক্রমণ করে তাহলে আমরা জবাব দেব।’
দামেস্কের উপকণ্ঠে একসময়ের ছোট্ট এলাকা জারামানা আজ দশ লক্ষেরও বেশি শ্রমজীবী সিরিয়ানদের আবাসস্থল। এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ সিরিয়ায় তাদের দখলকৃত এলাকাগুলো থেকে সরে যাবে না। প্রকৃতপক্ষে, দখলদারিত্ব আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। ইসরাইল তার অবস্থান শক্ত করে আরও জমি দখল করেই চলেছে। তবে, কুনেইত্রা এবং দারায় হামলার পর স্থানীয় জনগণ ইসরাইলি আক্রমণ প্রতিরোধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে।
আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দামেস্কের বিভিন্ন অংশে, একই সঙ্গে দারা, খান আরনাবেহ, সুওয়াইদা এবং কুনেইত্রার একাধিক শহর ও গ্রামে বিক্ষোভ হয়েছে। এমনকি দ্রুজ সম্প্রদায়ও মানবিক সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে করে একত্রিত হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৩ এপ্রিল ২০২৫,/রাত ১১:৪০