স্পোর্টস ডেস্ক : ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর ৪ দিনের মাথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ ঘোষণায় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এবং ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক উয়েফা রাশিয়ার জাতীয় দল এবং ক্লাবগুলোকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়। কিন্তু ফিফা অত্যন্ত অস্পষ্ট এবং কূটনৈতিক ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে সে দাবি এড়িয়ে যায়। অথচ ফিফার মূলনীতিতে স্পষ্ট বলা আছে, ‘ফিফা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সকল মানবাধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার করছে এবং এই অধিকারগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। যেকোনো ধরনের বৈষম্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তা স্থগিতাদেশ বা বহিষ্কারের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য।’
অথচ গাজায় ইসরাইলের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও ফিফা-উয়েফা নিশ্চুপ। পরিসংখ্যান বলছে, গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪৪ জন ফুটবলারকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যেখানে ফিফা বরাবরই ফুটবলারদের সুরক্ষা নিয়ে সোচ্চার থাকার বার্তা দেয়, সেখানে এত সংখ্যক ফুটবলারকে হত্যার পরও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা একো ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব তথ্য-প্রমাণ ফিফার কাছের বিশদ আকারে উপস্থাপন করেছে। এরপরও দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো নেয়নি ফিফা।
এমনকি ইসরাইলি ক্লাবগুলো দখলকৃত পশ্চিম তীরে ম্যাচ আয়োজন করলেও ফিফা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইসরাইল কর্তৃক আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের বিষয়টি সামনে এনে ২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিল, ‘চুরি করা ভূমিতে ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি দিয়ে ফুটবলের মতো সুন্দর একটি খেলাকে কলঙ্কিত করেছে ফিফা।’
উল্টো গ্যালারিতে উপস্থিত সাধারণ দর্শকরা যখন ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তখন তাদের নানাভাবে হেনস্তা করেছে ফিফা ও উয়েফা। ২০২৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচ চলাকালে স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকের কিছু সমর্থক মাঠে ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করেছিলেন। এই সামান্য প্রতিবাদকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যা দিয়ে সেল্টিককে ১৯ হাজার ডলার জরিমানা করে উয়েফা।
ফিফা এবং উয়েফার মতোই ইসরাইলের গণহত্যা দেখেও না দেখার ভান করা আরেক সংস্থা আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কাউন্সিল (আইওসি)। রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে সংস্থাটি, যার ফলে অলিম্পিকে রাশিয়ার পতাকা নিয়ে অংশ নিতে পারেননি দেশটির অ্যাথলেটরা। কিন্তু ইসরাইলি অ্যাথলেটদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। এভাবেই ইসরাইলের গণহত্যাকে নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থাগুলো।
কিউএনবি/আয়শা/০৭ এপ্রিল ২০২৫,/রাত ১১:০০