শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন

আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভের আমল

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : পরকালে মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হবে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ। মহান আল্লাহ জান্নাতিদের তাঁর সাক্ষাৎ দান করবেন। এর আগে বিচার দিবসে সব মানুষ আল্লাহর সামনে সমবেত হবে। তবে সবার জন্য আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়া সম্মানের হবে না, বরং কারো কারো জন্য তা হবে ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা।

তাই মুমিন পরকালে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আশা যেমন করবে, তেমন সামনে লজ্জিত হওয়ার ভয়ও করবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন কোনো কোনো মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কোনো কোনো মুখমণ্ডল হবে বিবর্ণ, আশঙ্কা করবে যে এক ধ্বংসকারী বিপর্যয় তাদের ওপর আপতিত হবে।’ (সুরা : কিয়ামা, আয়াত : ২২-২৫) 

রবের প্রতি চাই সুধারণা

পরকালে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি ক্ষমা ও দয়ার আচরণ করবেন বলেই বিশ্বাস পোষণ করবে মুমিন।

আল্লাহর প্রতি তারা কখনো মন্দ ধারণা পোষণ করবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করে, আমি তেমনই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)
হাইয়ান আবুন-নদর (রহ.) বলেন, আমি ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রহ.)-এর সঙ্গে  আবুল আসওয়াদ জুরাশি (রা.)-এর কাছে যাই। তিনি তখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন।

ওয়াসিলা তাকে সালাম দিয়ে বসলেন এবং আবুল আসওয়াদ (রা.)-এর ডান হাত ধরে তার দুই চোখে ও চেহারায় মুছলেন। কেননা এই হাত রাসুল (সা.)-এর কাছে বাইয়াত নিয়েছিল। ওয়াসিলা (রহ.) তাঁকে বললেন, আপনার রবের ব্যাপারে আপনার ধারণা কেমন? আবু আসওয়াদ (রা.) মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিত দিলেন তিনি উত্তম ধারণা পোষণ করেন। ওয়াসিলা (রহ.) বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার ব্যাপারে আমার বান্দা যেমন ধারণা করে, আমি তেমনই।

সুতরাং সে আমার ব্যাপারে যেমন খুশি ধারণা পোষণ করুক।’
আল্লাহর প্রতি সুধারণার অর্থ

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘আলেমরা বলেন, আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণার অর্থ হলো এই বিশ্বাস করা যে তিনি বান্দার প্রতি দয়া করবেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তারা আরো বলেন, সুস্থ অবস্থায় বান্দা ভীত ও আশান্বিত থাকবে; উভয়টি সমান অবস্থায় থাকবে। কারো মতে ভয়ের মাত্রা বেশি থাকবে। তারপর যখন মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পেতে থাকবে, তখন আশার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে অথবা কেবল আশাই করবে। কেননা ভয়ের উদ্দেশ্য হলো পাপ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং বেশি বেশি আল্লাহর আনুগত্য করা। সে পরিস্থিতিতে এগুলো করা অসম্ভব হয়ে যায়। সুতরাং তখন আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা মুস্তাহাব, যে সুধারণায় অন্তর্ভুক্ত হয় আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষিতা ও তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ।’ (শরহুন নববী আলা মুসলিম : ১৭/২১০)

মুমিন হৃদয়ে আল্লাহর প্রগাঢ় ভয়

মুমিন বান্দা তাঁর হৃদয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয় লালন করে। আল্লাহর প্রতি সুধারণা কখনো তাকে তাঁর ভয় থেকে মুক্ত করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করেছিল? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা ছাড়া কেউ আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করে না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৯)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘এ কারণে হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, মুমিন আল্লাহর আনুগত্য করে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়। আর পাপী ব্যক্তি পাপকাজ করে নিজেকে নিরাপদ ভেবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৪৫১)

শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে বাজ (রহ.) বলেন, ‘এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পাপে অবিচল থাকা এবং আল্লাহর অধিকারে অবহেলা করার পরও তার পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করার ব্যাপারে বান্দাকে সতর্ক করা। আল্লাহর সাধারণ রীতি হলো, বান্দা পাপে লিপ্ত হলে এবং আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কাজ করার পরও আল্লাহ তাদের ছাড় দেন ও তাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেন। ফলে তারা উদাসীন অবস্থায় হঠাৎ করে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার উপযুক্ত হবে। কেননা তারা পাপে অটল ছিল ও আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবত।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বাজ : ২৪/২৩২)

আশা ও ভয়ের মাঝে ঈমান

শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে বাজ (রহ.) বলেন, ‘মুসলিমের করণীয় হলো নিরাশ না হওয়া এবং নিজেকে নিরাপদও মনে না করা। সে যেন আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা নিরাপদ ভাবা ব্যক্তিদের নিন্দা করেছেন এবং নিরাশ ব্যক্তিদেরও নিন্দা করেছেন। একদিকে আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা কি আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করেছিল? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা ছাড়া কেউ আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করে না।’ অন্যদিকে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ সুতরাং মুমিন নারী ও পুরুষ আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি থাকবে। মুমিন আল্লাহকে ভয় করবে, পাপ কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে, পাপ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করবে, তাওবা কবুলের ব্যাপারে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের আশা করবে। তবে কখনো নিজের অপরাধ ও পাপের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত বোধ করবে না, বরং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাপের অনুশোচনা করে যাবে। বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব : ৪/৩৮)

মুমিনের প্রশান্তি শুধু জান্নাতে

মুমিনের প্রশান্তি শুধু জান্নাতেই অর্জিত হতে পারে। জান্নাতে প্রবেশের আগে মুমিন কখনো নিজেকে নিরাপদ মনে করবে না, সে নিজেকে আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ মনে করবে না। শুধু জান্নাতে প্রবেশের পরই সে নিরাপদ বোধ করবে। ইমাম আহমদ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বান্দা কখন প্রশান্তির স্বাদ পাবে? তিনি বলেন, ‘জান্নাতে প্রথমবার পা রাখার পর।’ (তাবাকাতুল হানাবিলা : ১/২৯৩)

আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করার তাওফিক দিন। আমিন।

কিউএনবি/অনিমা/০৯ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ১০:১০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit