শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন

ইসলামে সমালোচনার আদর্শ পদ্ধতি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪২ Time View

ডেস্ক নিউজ : সমালোচনার মাধ্যমে কোনো কিছুর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, উন্নতি বা সঠিক পথের দিকনির্দেশনা দেওয়া। সমালোচনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে। শিল্প, সাহিত্য, রাজনৈতিক বিষয়, সামাজিক সমস্যা বা ব্যক্তিগত আচরণসহ আরো অনেক কিছু।

সমালোচনার মাধ্যমে আমরা কোনো কিছু ভালোভাবে বুঝতে এবং আরো উন্নত করার সুযোগ পাই। ইসলামের দৃষ্টিতে সমালোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ন্যায়সংগত, গঠনমূলক ও সদিচ্ছা নিয়ে হতে হবে। নিচে ইসলামে সমালোচনার কিছু আদর্শ রূপরেখা তুলে ধরা হলো—

সদিচ্ছা ও সৎ উদ্দেশ্য থাকা

সমালোচনা করার মূল উদ্দেশ্য হতে হবে সংশোধন করা, অপমান করা বা কারো ক্ষতি করা নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকি ও তাকওয়ার কাজে একে অপরের সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে সাহায্য কোরো না।’
(সুরা : আল মায়িদা, আয়াত : ২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কল্যাণ কামনাই দ্বিন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহর, তার কিতাবের, তার রাসুলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের।

(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৫)

গোপনে সমালোচনা করা

কাউকে প্রকাশ্যে অপমান না করে, গোপনে তার ভুল বা দোষ সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। অন্যের দোষ প্রকাশ দ্বারা তার সম্মানহানি ঘটানো হয় এবং তাকে লাঞ্ছিত করা হয়।

এটা মহানুভবতার পরিপন্থী। মহানুভবতা আল্লাহ তাআলার গুণ। মুমিন ব্যক্তির উচিত এ গুণের চর্চা করা, অন্যের দোষের পেছনে পড়া নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না এবং তাকে দুশমনের হাতে সোপর্দও করে না।

যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা তার বিনিময়ে কিয়ামত দিবসে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪২, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩৪২)
কোমলতা ও দয়ার সঙ্গে সমালোচনা করা

ইসলাম কঠোরভাবে সমালোচনা করার বিপক্ষে। সমালোচনা যেন কঠোর না হয়, বরং নম্র ও দয়াশীল ভাষায় করা উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)-কে ফেরাউনকে উপদেশ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘তোমরা তাকে কোমল ভাষায় বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে বা আল্লাহকে ভয় করবে।’

(সুরা : ত্ব-হা, আয়াত : ৪৪)

সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সমালোচনা করা

সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সমালোচনা করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নৈতিক দায়িত্ব। যখন কোনো বিষয় বা কাজের সমালোচনা করা হবে, তখন সেটি সঠিক তথ্য, যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে করা উচিত, যাতে তাতে কোনো ধরনের ভুল বা অবাস্তব অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! যদি কোনো পাপী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করে দেখো, যাতে অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি না করে ফেলো এবং পরে তোমাদের করা কর্মের জন্য অনুতপ্ত না হতে হয়।’

(সুরা : আল-হুজুরাত, আয়াত : ৬)

অপমান বা তিরস্কার এড়ানো

সমালোচনা করার সময় এমন কোনো কথা বা আচরণ করা যাবে না, যা কাউকে অপমানিত বা হেয় করে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে উপহাস কোরো না এবং মন্দ নামে ডেকো না।’

(সুরা : আল-হুজুরাত, আয়াত : ১১)

অহংকার ও আত্মম্ভরিতা থেকে বাঁচা

সমালোচনা করার সময় নিজেকে অন্যের থেকে উত্তম মনে করা যাবে না। এটি ইসলামিক শিক্ষার পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তোমরা নিজেদের পবিত্র বলে দাবি কোরো না। তিনি ভালোভাবেই জানেন মুত্তাকি কে।’ (সুরা : আন-নাজম, আয়াত : ৩২)

ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু হওয়া

সমালোচনা করার সময় ধৈর্যশীল থাকা এবং উত্তেজিত না হওয়া জরুরি। উত্তেজনা বা রাগ পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তোলে।

সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করা

সমালোচনার জন্য উপযুক্ত সময় ও পরিস্থিতি নির্বাচন করতে হবে। মানুষকে লজ্জিত বা অসম্মানিত করে এমন সময়ে সমালোচনা করা উচিত নয়। এসব পদ্ধতিতে সমালোচনা করলে তা ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর এবং পারস্পরিক সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে।

কিউএনবি/অনিমা/১১ ডিসেম্বর ২০২৪,/সকাল ১১:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit