আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে গৃহীত চুক্তিকে দুই দেশই ইতিবাচকভাবে দেখছে।
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করার পরই এই প্রতিক্রিয়া আসে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার ভোর ৪টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ এবং রয়টার্স জানিয়েছে, এই চুক্তি হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সমাপ্তি ঘটাতে ভূমিকা রাখবে। গত এক বছরে এই সংঘাতে হাজার হাজার সামরিক ও বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই যুদ্ধবিরতিকে ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার ভোর থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এখন শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করাই এই চুক্তির উদ্দেশ্য।’
বাইডেন আরও বলেন, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানিজ সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি চুক্তি ভঙ্গ হয়, ইসরায়েল তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এই যুদ্ধবিরতিকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এই চুক্তি বেসামরিক জনগণের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনবে। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। স্টারমার আরও বলেন, গাজাতেও যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। সব জিম্মি মুক্ত করতে হবে এবং মানবিক সহায়তার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। একই সময়ে লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গেও সংঘাত শুরু হয়। প্রথমে সীমিত সংঘর্ষ হলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে লেবাননে বিমান হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। অক্টোবরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী এবং হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে হত্যা করে।
হিজবুল্লাহও পাল্টা আক্রমণ চালালে সংঘাত ভয়াবহ রূপ নেয়। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চেষ্টা চললেও তা এতদিন সফল হয়নি। সম্প্রতি বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন নতুন কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। তাদের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রস্তাব দেয়, যা লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহ গ্রহণ করে। পরে ইসরায়েলও নীতিগতভাবে প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।
রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এই প্রস্তাবে সম্মতি জানান। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় চুক্তি অনুমোদনের পর নেতানিয়াহু বলেন, আমরা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে চুক্তি লঙ্ঘিত হলে শক্ত জবাব দেওয়া হবে।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। তবে যদি হিজবুল্লাহ ফের সশস্ত্র হওয়ার চেষ্টা করে, ইসরায়েল দ্রুত আঘাত হানবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি সংঘাতে ক্লান্ত দুই পক্ষের জন্যই স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে। তবে এর বাস্তবায়ন এবং টেকসই সমাধান নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের ওপর।
কিউএনবি/অনিমা/২৭ নভেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৩:০৪