আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে গত বৃহস্পতিবার হামলা চালায় একটি রুশ বিমান যাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা অস্বাভাবিক একটি হামলা বলে বর্ণনা করেছেন। হামলাটি এমন এক বিস্ফোরণ ঘটায় যা তিন ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। এই আক্রমণে এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে যা ভীষণ শক্তিশালী। এতোটাই শক্তিশালী যে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা একে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম)-এর বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বলে জানিয়েছে। সেদিন হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিভিশনে এক ভাষণে জানান, রাশিয়া একটি নতুন ‘মধ্যবর্তী-পাল্লার কনভেনশনাল ক্ষেপণাস্ত্র’ উৎক্ষেপণ করেছে, যার কোডনেম ‘ওরেশনিক’। এটির গতি ছিল শব্দের গতির ১০ গুণ, অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ২.৫ থেকে ৩ কিলোমিটার গতিতে। যা প্রতিহত করার কোনো উপায় নেই।
ভয়ানক এই ‘অপ্রতিরোধ্য’ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে দেখছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের বিশেষজ্ঞরা ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাশিয়ার সামরিক সরবরাহব্যবস্থা ও অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকানোর উপায় খুঁজছেন। ইউক্রেনের তদন্ত কর্মকর্তারা যেখানে ক্ষেপণাস্ত্রটির ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করছেন, সেখানে গতকাল রবিবার অল্প কয়েকজন সাংবাদিককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই দলে রয়টার্সের একজন সাংবাদিকও ছিলেন। নিরাপত্তার খাতিরে সাংবাদিকদের সেই স্থানের নাম প্রকাশ না করতে বলা হয়েছে।
ইউক্রেনের দুজন বিশেষজ্ঞ সতর্কতার সঙ্গে সাংবাদিকদের ‘ওরেশনিক’ বিষয়ে অল্পকিছু তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নিতে রাজি হননি। এমনকি নিজেদের পূর্ণ নাম প্রকাশ করতেও অস্বীকার করেন। তারা বলেন, সেটি একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল এবং এর আঘাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি ঘণ্টায় ১৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি গতিতে ছুটে আসে নিপ্রোতে আঘাত হানে। এই বিশেষজ্ঞদের একজন ইভান। তিনি বলেন, ‘এটি প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল। আরও সুনির্দিষ্ট কিছু বলার জন্য সময় ও ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্টাংশের যত্নসহকারে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।’
এদিকে, সামরিক বিশ্লেষক ভ্লাদিস্লাভ শুরিগিন রুশ সংবাদমাধ্যম ইজভেস্টিয়াকে বলেছেন- ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে ভেদ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি আরো বলেন, এটি পারমাণবিক ওয়ারহেড ব্যবহার না করেও গভীর সুরক্ষিত বাঙ্কার ধ্বংস করতে পারে। রিস্ক অ্যাডভাইজারি কোম্পানি সিবিলিনের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসি ভেরিফাইকে জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এই সংঘাতে রাশিয়ার স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত এবং উন্নত সিস্টেম এই হুমকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
কিউএনবি/অনিনমা/২৫ নভেম্বর ২০২৪,/দুপুর ২:৪৫