শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

কে এই লড়াকু হামাস নেতা সিনওয়ার?

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবরটি গতকাল বৃহস্পতিবার যৌথভাবে নিশ্চিত করেছে দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও দেশটির নিরাপত্তা সংস্থা।

গত বছরের ৭ অক্টোবর দখলদার ইসরাইলে আকস্মিক হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হয় সিনওয়ারকে। যার ফলে গাজার অকুতোভয় এই বীরকে ধরার জন্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র হন্যে হয়ে খুঁজতে ছিল। 

তাকে খোঁজার জন্য গাজা উপত্যকায় তারা হাজার হাজার সৈন্য এবং ড্রোন মোতায়েন করে। এছাড়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং বিভিন্ন জনের সহযোগিতা নেয় ইহুদি দেশটি। তবে তুষার শুভ্র সাদা চুল এবং কালো আইব্রুর অধিকারী সিনওয়ার গত বছর ইসরাইলে হামলার পর এক প্রকার অদৃশ্য হয়ে যান। ওই হামলায় ১২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস।

সিনওয়ার ১৯৬২ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি খান ইউনিস স্কুলে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরবি স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১১ সালে তিনি গাজা উপত্যকার এক নারীকে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। 

৬২ বছর বয়সি এই নেতা তার জীবনের ২৩ বছরই কাটিয়েছেন দখলদার ইসরাইলের কারাগারে। ১৯৮২ সালে ২০ বছর বয়সে তিনি প্রথম গ্রেফতার হন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে। তাকে চার মাসের প্রশাসনিক আটকাবস্থায় রাখা হয়। মুক্তির পর মাত্র এক সপ্তাহ পরে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং বিনা বিচারে ছয় মাস কারাগারে রাখা হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং আট মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

১৯৮৮ সালে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং দুই ইসরাইলি সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যার পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা করার সন্দেহে চার ফিলিস্তিনিকে হত্যার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তার বিচার করা হয়। এ মামলায় তাকে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাবাসের সময় সিনওয়ার ইসরাইলি কারাগারে হামাস বন্দীদের সুপ্রিম লিডারশিপ কমিটির নেতৃত্ব দেন। একের পর এক অনশন ধর্মঘটের সময় কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ পরিচালনা করতে সহায়তা করেন। এ সময় তাকে বিভিন্ন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার দুইবার কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু উভয় প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সিনওয়ার তার কারাজীবনকে পড়া-লেখা, হিব্রু শেখা এবং রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বই রচনা ও অনুবাদ করার কাজে ব্যবহার করেন। তিনি ২০১১ সালে ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের এক বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসাবে মুক্তি পান।

মুক্তির পর, ২০১২ সালে আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের সময় সিনওয়ার হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোতে নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালে তিনি হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০১৭ সালে গাজায় আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০২১ সালে তিনি আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে চার বছরের মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ‘মাজদ’ নামে পরিচিত হামাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা। এটি মূলত সন্দেহভাজন ইসরাইলি এজেন্টদের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা এবং ইসরাইলি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের ট্র্যাক করার মতো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয় পরিচালনা করে।

সিনওয়ারের বাড়িতে একাধিকবার বোমা হামলা হয়েছে। তাকে একজন সতর্ক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। তিনি খুব কমই প্রকাশ্যে কথা বলতেন। সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবর, ২০২৪-এ ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের আক্রমণের মূল হোতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তেহরানে এক ইসরাইলি বিমান হামলায় ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হওয়ার পর হামাস আগস্টে সিনওয়ারকে তার শীর্ষ নেতা নির্বাচন করে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ অক্টোবর ২০২৪,/দুপুর ২:১৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit