এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় কোনো টেন্ডার ছাড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফেরদৌস খানের বিরুদ্ধে। গাছ বিক্রি করা টাকার কোনো হিসেবজানেনা সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা বলছেন তিনিও জানেননাগাছ বিক্রির টাকার খবর। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
জানা যায়, উপজেলার সুকপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নির্মানের জন্য টাকা বরাদ্দ দেন সরকার। নির্মাণ কাজে বাধা হয় বিদ্যালয়ের ৩০/৪০ বছর বয়সী একটি মেহগনি ও একটি রেইন্টি কড়ই গাছ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গাছ কাটতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। পরে যথাযথ নিয়ম না মেনে টেন্ডার ছাড়াই গাছ দুটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় উপজেলা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফেরদৌস খান।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নির্মাণ কাজের জন্য দুটি গাছ কাটার প্রয়োজন হয়। আমি বিধি মোতাবেক রেজুলেশন করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিই। এর মধ্যে কয়েকজন এসে গাছ কাটতে শুরু করেন। আমি বাধা দিলে উপজেলা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফেরদৌস খান আমাকে জানায় নিয়ম মেনেই গাছ কাটা হচ্ছে। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, গাছ বিক্রির টাকা কোথায় আছে আমার উপর মহলই বলতে পারবেন।এদিকে উপজেলার ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নির্মানের জন্য একটি মেহগনি গাছ কাটার প্রয়োজন হয়। প্রধান শিক্ষক একই ভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে রেজুলেশন জমা দেয়। শিক্ষা অফিস থেকে গাছটির ভিত্তিমুল্য নির্ধারনের জন্য বন বিভাগকে জানায়। এর পরে কোনো নিয়ম না মেনেই বন কর্মকর্তা ফেরদৌস খান সে গাছাটিও বিক্রি করে দেন।
ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রেজুলেশন দেওয়ার দুই তিনদিন পরে কয়েকজন লোক গাছ কাটতে শুরু করেন। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান এই গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বনবিভাগের কাছ থেকে তারা ক্রয় করেছেন। টেন্ডারের চিঠি দেখতে চাইলে তারা বন কর্মকর্তা ফেরদৌস খানের কাছে ফোন ধরিয়ে দেন। অপর দিক থেকে তিনি বলেন, টেন্ডারের চিঠি আমার কাছে আছে আপনি এসে নিয়ে যান। আমি অফিসে গেলে তিনি চিঠি দেখাতে পারেননি। এক পর্যায়ে ওই প্রধান শিক্ষকের বাধার মুখে গাছটি বনখেগো কর্মকর্তা ফেরদৌস খানের হাত থেকে রক্ষা পায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সুকপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ বিক্রির জন্য রেজুলেশন পেয়ে বন বিভাগকে গাছগুলোর ভিত্তি মূল্য নির্ধারনের জন্য বলা হয়। এর মধ্যে আমাকে কিছু না জানিয়ে অবৈধভাবে বন বিভাগ গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। টাকা কি করেছের বন বিভাগের লোকজনই ভালো জানেন।একটি সুত্র জানিয়েছেন, কেবলমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ নয় উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি রাস্তার পাশের সরকারি গাছ সুযোগ পেলেই বনসংরক্ষণ কর্মকর্তা ফেরদৌস খান বিক্রি করে টাকা পকেস্থ করেন।বন বিভাগের একটি সুত্র জানিয়েছেন, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয় বন বিভাগ।
উপজেলা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফেরদৌস খান বলেন, সুকপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গাছ টেন্ডার ছাড়া বিক্রি করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। কিভাবে টেন্ডার ছাড়া সরকারি গাছ বিক্রি করা হয়েছে এবং গাছ বিক্রির টাকা কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন, কিভাবে গাছ বিক্রি করা হয়েছে আর টাকা কোথায় আছে এই বিষয়ে ঐবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তার অফিসাররাই ভালো জানেন।ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি একসাথে চা খাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ফোন বিছিন্ন করে দেন।
কিউএনবি/অনিমা/১০ অক্টোবর ২০২৪,/বিকাল ৪:৫৬