শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৩১ অপরাহ্ন

ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব ও মূলনীতি

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : প্রত্যেক মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা ও বিচক্ষণতায় সৃষ্টিগতভাবেই মতপার্থক্য ও ভিন্নতা রাখে। সব বিষয়ে সবাইকে এক হওয়ার কামনা করা একেবারেই অসম্ভব। বরং মানুষের মধ্যে মতানৈক্যের ধারা মহান প্রভু আল্লাহতায়ালারই সৃষ্টিগত রহস্য। তিনি আল কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘আপনার প্রভু ইচ্ছা করলে সব মানুষকে একই দলভুক্ত করে দিতেন, কিন্তু তারা সর্বদা মতভেদ করেই যাবে। তবে যার ওপর আপনার প্রভু সদয় হন, সে ব্যতীত। আর এ জন্যই তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা হুদ : ১১৮-১১৯)।

কবি কী সুন্দরভাবে গেয়ে গেলেন, ‘ফুলের চমৎকার দৃশ্য, বাহারি রঙের কারণেই হে পর্যটক!’

এ দুনিয়ার সৌন্দর্য তো মতভিন্নতার কারণেই। আধুনিক বিশ্বে মতভিন্নতার অধিকার না থাকলে রিসার্চ, আবিষ্কার ও উন্নয়নের ধারা থেমে যেত। ইসলাম ধর্ম সর্বজনীন ও পরিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম উদাহরণ হলো গবেষণামূলক, গ্রহণযোগ্য ও উপকারী ভিন্নমত পোষণকে এ ধর্মে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ভিন্নমত পোষণের সুযোগে ঝগড়া-বিবাদে উপনীত না হওয়ার লক্ষ্যে ইসলাম মতভেদের সীমারেখাও টেনে দিয়েছে। বাতলে দিয়েছে, বৈধ মতভেদের নিয়মনীতি, আদর্শ ও শর্ত শরায়েত। ইসলাম ধর্মের কিছু বিষয় আছে, যাতে মতানৈক্য করার মোটেই কোনো সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে মতভেদ করা মানেই ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তি। যেমন- ১. সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধভাবে এবং অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত বিষয়ে মতানৈক্য করার অনুমতি ইসলামে নেই। ২. যেসব বিষয়ে কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত এবং বোঝার জন্য কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই, এসব বিষয়েও মতভেদ করা বিভ্রান্তির অন্তর্ভুক্ত। ৩. কোরআন-সুন্নাহের আলোকে ইজমা তথা ঐক্যদ্ধভাবে মীমাংসিত বিষয়ে মতভেদ করাও বিভ্রান্তির অন্তর্ভুক্ত। ৪. ক্ষমতা লাভের ষড়যন্ত্র, ধনসম্পদ কুক্ষিগত করার লোভ, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জঘন্য প্রবণতা ও নিজের মনগড়া মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ঝগড়া-বিবাদে উপনীত হওয়াকে বিরোধ বলা হয়, যা শুধু বিরোধিতার স্বার্থেই করা হয়। এ ধরনের মতবিরোধ ইসলামী শরিয়তে সম্পূর্ণ হারাম।

যেসব বিষয়ে কোরআন-হাদিসে দলিল বিরোধপূর্ণ বা অস্পষ্ট অথবা যেসব বিষয়ে অকাট্য কোনো দলিল প্রমাণ নেই, এসব বিষয়ে মতভেদ করার সুযোগ আছে। তবে মত প্রকাশ ও মতভেদ করার ক্ষেত্রে ইসলামে মূলনীতি রয়েছে। রয়েছে সাহাবায়ে কেরাম ও আকবিরের অনুসৃত আদর্শ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সবার লক্ষ্য হতে হবে একমাত্র দাওয়াত বা দীনের প্রতি আহ্বান করা। কোরআন-হাদিসে বিধর্মীদের সঙ্গেও আদর্শ রক্ষা করে মতবিরোধ করা ও দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ করেছে। মহান রাব্বুল আলামিন হজরত মূসা (আ.)কে ফেরাউনের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলতে নির্দেশ করেছেন। (ত্বোয়াহা-৪৪)। মহানবী (সা.) সম্পর্কে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলের অতি আগ্রহী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল।’ (তওবা-১২৮)। মহানবী (সা.) তাঁর দাওয়াতি কর্মে অত্যন্ত বিনয়ী, ক্ষমাশীল উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রতিশোধপরায়ণতা, অশ্লীলতা ও বাড়াবাড়ির আশ্রয় কখনো গ্রহণ করেননি এবং অন্যদের ক্ষেত্রেও তা তিনি পছন্দ করতেন না। (সহিহ বোখারি)। সাহাবায়ে কেরাম (রা.), মুজতাহিদ ইমামগণ এবং মহান ব্যক্তিবর্গের মতবিরোধ ইতিহাস সংরক্ষণ করেছে। সংরক্ষণ করেছে তাঁদের অনুপম আদর্শ, শিষ্টাচার ও হৃদ্যতাপূর্ণ কোমল আচরণ। সবাই মতবিরোধের ক্ষেত্রে যদি তাদের আদর্শ অনুসরণ করে তাহলে মতানৈক্যের মাঝেও চমৎকার ঐক্য শোভা পাবে। ইনশা আল্লাহ!

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit