রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

আমানতের খেয়ানত মারাত্মক অপরাধ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : মুসলমানদের একে অপরের বিশ্বস্ত হতে হবে- রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এ শিক্ষাই দিয়েছেন। ইসলাম সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা। এ জীবনব্যবস্থায় কোনোভাবেই অসত্য এবং অন্যায়ের স্থান থাকতে পারে না। একজন মানুষ অপর মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণামূলক আচরণ করবে না এটি ইসলামী সমাজের কাক্সিক্ষত ও কাম্য বিষয়। পবিত্র কোরআনে এবং রসুলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে এ বিষয়ে বারবার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘যখন দুই পক্ষ মিলে যৌথ কোনো কাজ করে, আমি তখন তাদের (সঙ্গে) তৃতীয় পক্ষ হই। যে পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে খেয়ানত তথা বিশ্বাসঘাতকতা না করে।’ (-সুনানে আবুদাউদ, হাকেম)।

এ হাদিসে রসুল (সা.) আরও বলেন, মানুষের চারিত্রিক গুণাবলির মধ্য থেকে যে গুণটি সবচেয়ে আগে অদৃশ্য হয়ে যাবে তাহলো আমানতদারি তথা বিশ্বস্ততা। আর শেষ অবধি যা রয়ে যাবে তা হচ্ছে নামাজ। এমন অনেক নামাজি আছে যারা কোনো কল্যাণই অর্জন করতে পারে না। আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন- রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা খেয়ানত কর না, কেননা খেয়ানত কতই না শাস্তি ও তিরস্কারযোগ্য। (-আবু দাউদ ও তিরমিজি)।

সততা হলো মানবজীবনের প্রধান মূলধন। যারা এ সম্পদে সমৃদ্ধ তারা সমাজের সবার আস্থার পাত্র। যে কারণে ইসলাম ব্যক্তিগত সততাকে গুরুত্ব দিয়েছে। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমানতের খেয়ানতকারীকে হাজির করে বলা হবে- ‘তোমার কাছে গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দাও। সে জবাব দেবে, ইয়া পরওয়ারদেগার! কীভাবে তা ফিরিয়ে দেব? পৃথিবী তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা জিনিসটি যেভাবে রাখা হয়েছিল ঠিক অনুরূপ আকারে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে তাকে দেখানো হবে। অনন্তর তাকে বলা হবে- যাও, ওখানে নেমে ওটা তুলে আন। অতঃপর সে নেমে গিয়ে সেটি কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবে। তার কাছে জিনিসটির ওজন পৃথিবীর সব পর্বত অপেক্ষা বেশি মনে হবে। তার ধারণা হবে, তুলে আনলেই সে দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে। কিন্তু সে যখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে চলে আসবে, অমনি উক্ত জিনিসটি নিয়ে পুনরায় জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে যাবে। এভাবে সে চিরকালই জাহান্নামে থাকবে। অনন্তর হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নামাজ, অজু, গোসল, পরিমাপ ও পরিমাপের দাঁড়িপাল্লা সবই আমানতের শামিল, আর কারও রক্ষিত জিনিস সর্বাপেক্ষা বড় আমানত।

প্রত্যেক মুসলমানকে পরস্পরের প্রতি যেমন বিশ্বস্ত হতে হবে তেমন আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশ পালনেও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের এবং জেনেশুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত কর না।’ (-সুরা আনফাল-২৭)।

এ আয়াতের শানে নজুল সম্পর্কে ইমাম ওয়াহেদি (রহ.) বলেন, বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু লুবাবা (রা.) এর ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। মুসলমানগণ যখন বনু কুরায়যাকে অবরোধ করে রেখেছিলেন, আর বনু কুরায়যার মহল্লায় লুবাবার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা অবস্থান করছিল। রসুল (সা.) তখন কোনো এক বিশেষ প্রয়োজনে আবু লুবাবা (রা.)-কে বনু কুরায়যার কাছে পাঠালেন। কুরায়যা গোত্রের লোকেরা জানতে চাইল : আবু লুবাবা! সা’দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা যদি অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসি, তাতে আমাদের কী পরিণতি হবে বলে তুমি মনে কর?’ আবু লুবাবা (রা.) আপন গলার দিকে ইশারা করে বুঝাতে চাইলেন, তোমাদের সবার গলা কেটে ফেলা হবে, কাজেই তোমরা তা করতে যেও না। তার এ আচরণ ছিল আল্লাহ ও রসুলের খেয়ানতের পর্যায়ভুক্ত। আবু লুবাবা (রা.) নিজেই স্বীকারোক্তি করেন, ‘আমি পা স্থানচ্যুত করার পূর্বেই বুঝতে সক্ষম হলাম, আমি আল্লাহ ও তার রসুলের খেয়ানত করে ফেলেছি।’ (এরপর হজরত আবু লুবাবা (রা.) দীর্ঘ ছয় দিন মসজিদে নববীর একটি কাঠের খামের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখেন এবং তওবা মঞ্জুর হওয়ার ঘোষণা আসার পরই তিনি বাঁধনমুক্ত হন।) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ বান্দাদের জন্য যা কিছু (যে বিষয়গুলো) ফরজ করেছেন, তাই আল্লাহর আমানত।’ অর্থাৎ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহর দেওয়া ফরজ আদেশ-নিষেধ ভঙ্গ বা অমান্য কর না। হজরত কালবি (রা.) বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্যচারিতাই হচ্ছে খেয়ানত। আল্লাহর ফরজকৃত বিধানের ব্যাপারে প্রত্যেকেই আমানতদার।

আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মোনাফেকের চিহ্ন তিনটি : যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং যখন তার কাছে কিছু গচ্ছিত রাখা হয়, তখন তা খেয়ানত করে। (-বোখারি ও মুসলিম)।

আহমাদ, বাযযার ও তাবারানির বর্ণনায় রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার আমানতদারি নেই তার ইমান নেই এবং যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না তার ভিতর দীন নেই। সব ব্যাপারেই খেয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা দোষণীয়। তবে একটা অন্যটা অপেক্ষা বেশি দোষণীয় হতে পারে। যে লোক ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করল, আর যে কারও অর্থ-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা বা আরও বড় কোনো অপরাধ করল, তারা উভয়ে সমান নয়।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

কিউএনবি/অনিমা/২৭ অগাস্ট ২০২৪,/রাত ১১:১৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit