ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যার্তদের সাহায্য ঘাম ঝরানো আয়ও বাদ পড়েনি!
বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি ।
Update Time :
রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪
৬৯
Time View
বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো, শোন বলি রে পাগল মন।’- কণ্ঠশিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী দেবু গান ধরলেন। মুহুর্তেই জড়ো হয়ে গেলেন অনেকে। মঞ্চ থেকে ঘোষণা এলো বন্যার্তদের সহযোগিতায় তাদের এ পথ কনসার্ট। হাত বাড়ালেন মানবিক মনের মানুষেরা। ঘন্টা খানেকে মোটামুটি একটা ফান্ড হলো।
সাহায্যের হাত থেকে বাদ পড়েনি ঘাম ঝড়ানো আয়ও। তীব্র রোদ আর গায়ে পৌরসভার দেওয়া বিশেষ পোশাকে ঘেমে একাকার রিকশাচালক মমিন মিয়াও শরিক হলেন এতে। দুর্গতদের সাহায্যের জন্য দেওয়া বাক্সে ২০ টাকা ফেললেন। দাঁড় করিয়ে কথা বলতেই মমিন মিয়ার মলিন হাসি। বললেন, ‘দেওয়ার মতো সাধ্য নাই। তাও যতটুকু পারলাম শরিক হলাম। সবাই মিলে এগিয়ে এলে তো ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলোর দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।’
বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পথ কনসার্টের আয়োজন করে সুরতলা সংগীত নিকেতন, স্টুডিও রংধনু ও অভিন্দন সংগীত নিকেতন। ‘দেশ ভাসে বন্যায়, চুপ থাকা অন্যায়’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পথ কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন, জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত, ঠিকাদার সাবের চৌধুরী রনি, ব্যবসায়ি নজরুল ইসলাম, খেলাঘর জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান পারভেজ প্রমুখ এতে বক্তব্য রাখেন।
কনসার্টটি পরে মেড্ডা ও কাউতলী এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায়। জেলার আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় বন্যার্তদের সাহায্যার্থে এমন অনেক মানবিক মানুষ এগিয়ে এসেছে। দুই উপজেলাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। কেউ রান্না করা খাবার, কেউবা শুকনো খাবার আবার কেউ নগদ টাকা নিয়ে বন্যার্তদের মাঝে ছুটে যাচ্ছেন। আখাউড়া উপজেলায় মোট ৪৭টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। তবে ওই উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। কসবায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আক্রান্ত হয়ে ২৬টি গ্রাম। দুই উপজেলার বিভিন্নস্থানে সড়ক ভেঙে বেশ কিছু এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে আছে।
আখাউড়ার সামাজিক সংগঠন ‘হাসিমুখ’ শনিবার বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তারা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ ৫০টি পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ করে। এছাড়া অন্তত ১০০টি পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করেছে ওই সংগঠনটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক দল গত দু’দিন ধরেই আখাউড়া উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তাদের কার্যক্রমের আরো গতি বেড়েছে। বাড়ি বাড়িতে চলছে তাদের কার্যক্রম। সুহৃদ নামে শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনও ত্রান বিতরণ করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতাও বেশ চোখে পড়ার মতো। এছাড়া রেডক্রিসেন্ট, স্কাউটও এগিয়ে আসে।
দলের নেতা মো. কবির আহমেদের নেতৃত্বে শনিবার উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দও বিভিন্ন এলাকায় ত্রান বিতরণ করেন। নবীনগরের প্রবাসী আলতাফ হোসেনের মাধ্যমেও ত্রান বিতরণ করা হয়। অন্যান্য দিনের মতো সক্রিয় ছিলেন হেফাজত ইসলাম নেতৃবৃন্দ। বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন ইসলামী আন্দোলন।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি শনিবার বিকেলে বলেন, ‘আমরা একা কাজ করলে সময়মতো ত্রান পৌঁছানো যেতোনা। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এগিয়ে আসায় ক্ষতিগ্রস্থরা সময় মতো খাবারসহ অন্যান্য সহায়তা পৌঁছানো গেছে। এখন অনেকেই আমাকে ফোন করে বলছেন তাদের ত্রানের প্রয়োজন নেই। সবাই যেন ফেনীসহ অন্যান্য এলাকায় যান।’ বন্যার পানি এখন অনেকটাই কমে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে বলে তিনি জানান।