রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন

জান্নাতে নারীরা যে বিশেষ নিয়ামত পাবেন

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ৭৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে, নবীজি (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক জীবন গঠন করবে, সে পরকালে জান্নাতের আশা রাখতে পারে—চাই সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিলেন যে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কোনো পুরুষ অথবা নারী আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে এবং যাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং যাদেরকে আমার রাস্তায় কষ্ট দেওয়া হয়েছে, আর যারা যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ বিলুপ্ত করে দেব এবং তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)

জান্নাতের নিয়ামত, বিশেষ করে শুধু পুরুষের জন্যই নয়, বরং কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)

এখানে নারী-পুরুষের কোনো তারতম্য করা হয়নি। এর দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহ জান্নাতে নারীদেরও বহু নিয়ামত দান করবেন।
আজ আমরা জানার চেষ্টা করব, মহান আল্লাহ জান্নাতি নারীদের কী কী দান করবেন।

চির যৌবন ও লাবণ্য পাবেন : জান্নাতি নারীরা হুরের মতো সুন্দর হবেন, তাঁদের হুরের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য দেওয়া হবে। তাঁরা বৃদ্ধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও জান্নাতে তাঁরা যুবতি হয়ে যাবেন। দুনিয়ায় যেমনই থাকুন, আখিরাতে অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করবেন।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক বৃদ্ধা মহিলা নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বলেন, ওহে! কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, (তা শুনে) সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। নবী (সা.) বলেন, তাকে এ মর্মে খবর দাও যে তুমি বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী।’ [সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৫-৩৬]। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৭৯)

স্বামী সোহাগিনী ও সমবয়স্কা হবেন : জান্নাতি নারীরা জান্নাতে স্বামীভক্ত হবেন, যা নারীদের শ্রেষ্ঠ চরিত্র। পাশাপাশি তাঁরা তাঁদের সমবয়স্কা হবেন, যা তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া ও প্রেমময় সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(জান্নাতি নারী হবে) সোহাগিনী ও সমবয়সী।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৭)

তাঁদের দুনিয়ার স্বামীকে পাবেন : জান্নাতি নারীদের তাঁদের দুনিয়ার স্বামী যদি জান্নাতি হন, তবে তাঁকেই স্বামী হিসেবে পাবেন, তবে সেখানে সেই স্বামীর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে না, যা দেখে নারীদের আফসোস হতে পারে। কোনো নারীর যদি একাধিক বিয়ে হয়, তাহলে তাঁর শেষ স্বামী জান্নাতেও তাঁর স্বামী হবেন। এ জন্য হুজাইফা (রা.) তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘তুমি যদি চাও তাহলে জান্নাতেও আমার স্ত্রী হতে পারো, তাই আমার পরে অনত্র বিয়ে কোরো না। কেননা নারীরা জান্নাতে তার শেষ স্বামীকে পাবে।’ এ জন্যই আল্লাহ তাআলা নবীপত্নীদের জন্য নবীজির ওফাতের পর অন্যত্র বিয়ে করা হারাম করেছেন। তাঁরা জান্নাতেও নবীজি (সা.)-এর স্ত্রী হবেন। আর যাঁরা বিয়ের আগেই দুনিয়া থেকে চলে যাবেন, তাঁরা মহান আল্লাহর পছন্দের পাত্রের সঙ্গে জান্নাতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। (বায়হাকি)

অন্য হুরদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে : কোরআনের বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, জান্নাতে পুরুষদের কমপক্ষে ৭০টি হুর দেওয়া হবে, যাঁদের রানি হবেন দুনিয়ার স্ত্রী। কিন্তু জান্নাতি এই স্ত্রীদের নিজেদের মধ্যে কোনো দূরত্ব বা ঝামেলা থাকবে না। কারণ মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করানোর আগে মানুষকে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র করে নেবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’

(সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৭)

এখানে আয়াতের দ্বারা শুধু পুরুষ উদ্দেশ্য নয়, বরং সব জান্নাতি উদ্দেশ্য। জান্নাতে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের মায়া ও ভালোবাসা থাকবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে,

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুতু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না, মলমূত্র ত্যাগ করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের; তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মতো সুগন্ধময় হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর এক অন্তরের মতো হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৩২৪৫)

পূর্ণ চারিত্রিক পবিত্রতা : জান্নাতের নারীরা চরিত্রের দিক থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হবেন, তাঁদের মনে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। তাঁরা কখনো অন্যের স্বামীর দিকে দৃষ্টিও দেবেন না। জান্নাতি হুরদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেখানে থাকবে সতীসাধ্বী সংযত-নয়না কুমারীরা, পূর্বে যাদের স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ বা কোনো জিন।’

(সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৫৬)

এর থেকে বোঝা যায়, দুনিয়ার যে স্ত্রী জান্নাতি হুরদের সর্দার হবেন, তাঁরাও পূর্ণ সতীসাধ্বী হবেন। তাঁদের অন্তরে কখনো একাধিক পুরুষপ্রাপ্তির আশা জাগবে না।

কিউএনবি/অনিমা/০৪ অগাস্ট ২০২৪,/বিকাল ৩:৩৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit