এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় সরকারি মর্যাদ বাওড়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাওড় থেকে দিন দুপুরে শতশত ট্রাক বালু উত্তোলন করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই!। উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের সরকারি মর্যাদ বাওড়ে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বোমা (ড্রেজার) মেশিন দিয়ে বালুউত্তোলন করে তা বিক্রি করছে স্থানীয় একটি চক্র। এতে একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, তেমনি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এলাকার ফসলি জমি রক্ষা বাঁধ, রাস্তা-ঘাট, জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা।
প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই প্রকাশ্যে চক্রটি তাদের অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এসব দেখার মতো কেউ নেই। যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী সড়ক, কালভার্ট, বিভিন্ন স্থাপনার সর্বন্মি এক কিলোমিটারের মধ্যে নদী, বাওড়, খাল ও পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। এ আইনকে অবজ্ঞা করে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা গ্রামের শফি উদ্দীন শেখের ছেলে ও পাতিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যেক্তা তৌহিদ শেখ, রাহুল আলীর ছেলে টিটো, পাতিবিলা মাঠ পাড়ার মোসাফেফর আলীর ছেলে ফারুফ আহম্ম্দে, সাদেক আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন, হায়দার আলীর ছেলে লিটন হোসেন, আতিয়ার রহমান শেখের ছেলে মিঠু, রওশন আলী ও আলা উদ্দীনসহ তাদের লোকজন প্রতিদিন শতশত ট্রাক বালু লুট করছে।
সরেজমিনে সরকারি মর্যাদ বাওড়ের গেলে চোখে পড়ে বাওড়ের এক অংশে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বালু তোলা লেবার জিয়ারুল ও কবির হোসেন নামের দুই ব্যক্তি। জানতে চাইলে তারা বলেন, অবৈধ ড্রেজার মেশিনটির মালিক পাতিবিলা গ্রামের আতিয়ার রহমান শেখের ছেলে মিঠু। তারা জানায় এ বালু নিচু জমি ভরাট, বাসা-বাড়ি ও নির্মাণ কাজসহ বিভিন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য স্বল্প খরচে বালু উত্তোলন করে তা তারা বিক্রি করেন। প্রতিদিন প্রায় শত ট্রাক বালু এ সরকারি বাওড় থেকে তুলে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হয়। এক ট্রাক বালুর দাম ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে বালুর দাম নির্ভর করে দূরত্বের ওপর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবৈধ ড্রেজার মেশিন এক জন মালিক বলেন, আমরা উপর মহলকে ম্যানেজ করেই সরকারি বাওড় থেকে বালু লুট করে থাকি। কোন কোন সময় বাওড়ের বালু তোলার জায়গা দখল করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলযোগ হলে কেউ কেউ তখন সাংবাদিক বা প্রশাসনের কানে দেন। স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, বোমা (ড্রজার) মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন স¤পূর্ণ অবৈধ। বালু উত্তোলন করতে হলে সরকার স্বীকৃত নির্ধারিত বালু মহাল থেকে তা উত্তোলন করতে হয়। পুকুর, ডোবা-নালা বা গ্রামের বদ্ধখাল থেকে বালু উত্তোলনের সময় সেখানে যে শূন্যস্থান তৈরি হয় তার কারণে আশপাশের ভূমি বা ভূমিতেঅবস্থিত বিভিন্ন স্থাপনা, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি ও গাছপালা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
অবৈধ বোমা (ড্রেজার) মেশিন মালিক ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের ড্রেজার মেশিন যে অবৈধ সেটা আমরা জানি। বাওড়ে আমরা একাই না আরো অনেকেই অবৈধ বোমা (ড্রেজার) মেশিন চালাচ্ছে। এমনকি সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজেও অবৈধ বোমা (ড্রেজার) মেশিন দিয়ে স্বল্প খরচে বালু উত্তোলন আমরা করে থাকি। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, অবৈধ বোমা (ড্রেজার) মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছি। উত্তোলনকারী চক্রটির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ জুলাই ২০২৪,/রাত ৮:০৪