স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়ম ও দূর্নীতি যেন থামছেইনা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহির্বিভাগে চিকিৎসা ফিস বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেই ক্ষান্ত হননি কর্তৃপক্ষ। এবার অভিযোগ পাওয়া গেছে পরীক্ষার নামে এ´রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি রিপোর্ট পেতে এবং কেবিনভাড়া দিয়ে গত দুইবছরে নিয়মবহির্ভূতভাবে রোগিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩৮ লক্ষাধীক টাকা আদায় করা হয়েছে। বহির্বিভাগে ফিস বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় সম্পর্কে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নিজেদের রক্ষা করতে নতুন করে ব্যাকডেটে ডুপ্লিকেট রেজিষ্ট্রার তৈরী করা হয়েছে। আর এ রেজিষ্ট্রারে প্রকৃত তথ্য গোপন করে( সংখ্যা কম দেখিয়ে) সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সরেজমিন গিয়ে অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানাযায়, সরকারি ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে এবং কেবিন ভাড়া নিয়ে চিকিৎসার জন্য রোগীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফিস নেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.তন্ময় কুমার বিশ্বাস দুই বছর আগে যোগদানের পর থেকে আদায় করা হচ্ছে কয়েকগুন বেশি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ সংশোধিত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটাল এক্সরে করতে ছোট সাইজ(প্রতিফ্লিম)১৫০ টাকা, বড় সাইজ ২০০ টাকা নেওয়ার কথা।
কিন্তু গতকাল সোমবার সকাল ১১ টায় সরেজমিন গিয়ে দেখাযায় ছোট সাইজের এক্সরের জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা, আর বড় সাইজের জন্য ২৫০ টাকা। লাউড়ী গ্রাম থেকে আসা দিপংকর কুমার জানান, হাতের আঙ্গুলের একটা এক্সরে করতে তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২০০ টাকা। আবার পাড়ালা গ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন জানান, তার বামহাতের এক্সরে করতে নেওয়া হয়েছে ২৫০ টাকা। প্রতি রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা আদায় করা হয়। প্রতিদিন ছোটবড় মিলে ১৮ থেকে ২৫ টি এক্সরে করা হয়।
প্রতিদিন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় সর্বনি¤œ দুই হাজার। সেই হিসেবে গত দুইবছরে আদায় করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশ^স্ত একটি সূত্র জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১৮ থেকে ২৫ টি এক্সরে করা হলেও রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১০ থেকে ১২ টি। আর এ জন্য সম্প্রতি তৈরী করা হয়েছে ডুপ্লিকেট রেজিষ্ট্রার। নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় সম্পর্কে এক্সরে বিভাগের দায়িত্বে থাকা ব্র্যাকের টেকনোলজিষ্ট নেহাল উদ্দিন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কার্ডিওগ্রাফার তুহিন আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভাল বলতে পারবেন।
অন্যদিকে আল্ট্রাসনো কক্ষে গিয়ে দেখাযায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মী শাহানাজ খাতুন আল্ট্রাসনো করছেন। ইব্রাহিম হোসেন ও আশিকুর রহমান নামে দুই রোগী জানান, তাদের কাছ থেকে আল্ট্রাসনোর জন্য নেওয়া হয়েছে ৩০০ টাকা করে। প্রতিদিন অন্তত: ১৫ থেকে ২০ টি আল্ট্রাসনো করা হয়। প্রতিমাসে ২৫ কর্মদিবসে অতিরিক্ত আদায় করা হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। সেই হিসেবে দুই বছরে আদায় করা হয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। ১১০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে শাহানাজ খাতুন জানান, বেশি নেওয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায়। তবে প্রতিদিন কতটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দেননি তিনি। অভিযোগ রয়েছে এখানেও রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করা হয় ৮ থেকে ১০ টি। ইসিজির ফিস নেওয়ার কথা ৮০ টাকা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ টি ইসিজি করা হয়। প্রতি রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ টাকা হারে আদায় করা হয়।
গত দুইবছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। চারটি কেবিন রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রতিটি কেবিন চার্জ দিনপ্রতি ১০০ টাকা হারে নেওয়ার কথা থাকলেও আদায় করা হয় ২৭৫ টাকা। ১৭৫ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়। দুই বছরে নিয়মবহিভর্ৃূতভাবে আদায় করা হয়েছে প্রায় পাঁচলক্ষাধীক টাকা। তবে ভূয়া বা ব্যাকডেটে ডুপ্লিকেট রেজিষ্ট্রার করার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ্বাস জানান, অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক কয়েকজন স্টাফের বেতনভাতা দেওয়াসহ অভ্যন্তরীন খরচ নির্বাহ করা হয়। উল্লেখ্য বহির্বিভাগে তিন টাকা এবং ভর্তি রোগীর জন্য পাঁচ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলে নেওয়া হয় ১০ টাকা এবং ২০ টাকা। এব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কিউএনবি/আয়শা/২২ এপ্রিল ২০২৪,/রাত ৮:০৮