আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) প্রকাশিত সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটি বা সিএসডিএস-এর প্রাক-নির্বাচন জরিপ অনুসারে, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) প্রতিদ্বন্দ্বী জোট ইন্ডিয়া জোটের চেয়ে ১২ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে রয়েছে।
জরিপ মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও এনডিএ জোটে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তবে জীবিকা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো এবারের নির্বাচনে ভারতীয় ভোটারদের প্রধান উদ্বেগ উঠে আসছে। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সমাজের কিছু অংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। যা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জরিপ মতে, এখনই নির্বাচন হলে কংগ্রেস ২১ শতাংশ ভোট পাবে। কংগ্রেসের শরিকরা পাবে ১৩ শতাশ। বিজেপি পাবে ৪০ শতাংশ। বিজেপির শরিকরা পাবে ৬ শতাংশ। বিএসপি পাবে মাত্র ৩ শতাংশ। বামপন্থিরা পাবে ২ শতাংশ এবং অন্যান্য দলগুলো পাবে ১৫ শতাংশ। দ্য হিন্দু।
জরিপ মতে, ভারতের জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও ক্ষমতাসীন এনডিএ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট। তবে ২০১৯ সালের প্রাক-নির্বাচন জরিপে তুলনায় এবার সংখ্যাটা কমে এসেছে।
২০১৯ নির্বাচনের আগে ৬৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছিলন যে, তারা ‘কিছুটা’ বা ‘পুরোপুরি’ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট। ২০২৪ সালে জরিপে সেই সংখ্যা কমে ৫৭-তে নেমেছে। অর্থাৎ এবার জরিপে অংশ নেয়া ৫৬ ভাগ মানুষ বলেছেন, তারা সরকারের কাজে সন্তুষ্ট।
জরিপ মতে, গত পাঁচ বছরে সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট জনগণের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালের আগে সরকারের প্রতি ‘কিছুটা’ বা ‘পুরোপুরি’ অসন্তুষ্ট মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ।
২০২৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে। অর্থাৎ এবার ৩৭ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা বিজেপি সরকারের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট নন। ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণাঞ্চলে জনগণের মধ্যে অসন্তোষের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম বলে জরিপে বলা হয়েছে।
সব ধর্মের সহাবস্থান চান ৭৯ শতাংশ মানুষসিএসডিএস লোকনীতি প্রাক-নির্বাচন জরিপ মতে, ভারতে সব ধর্মের সহাবস্থান চান দেশটির ৭৯ শতাংশ মানুষ। তারা মনে করেন, ভারত শুধু হিন্দুদের নয়, সমানভাবে সব ধর্মের মানুষের। মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ভারত শুধু হিন্দুদের।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, শহরের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ ধর্মীয় বহুত্ববাদে বিশ্বাস করেন। শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে এই বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় যা ৮৩ শতাংশ। অপরদিকে শিক্ষিত নন এমন ৭২ শতাংশ মানুষও ধর্মীয় বহুত্ববাদে বিশ্বাস করেন।
অপর দিকে জরিপে অংশ নেয়া মাত্র ৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, রামমন্দির তাদের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের এই পদক্ষেপকে বেশি পছন্দ করেছেন মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ।
৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ হিন্দু পরিচয়কে সুসংহত করবে। বিশেষ করে ধনী ও উচ্চবর্ণের মানুষ এটির পক্ষে। সংখ্যায় এরা ৫৮-৫৯ শতাংশ। ভারতে নানা জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বাস। তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলিম। জনসংখ্যার প্রায় ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশটির জনসংখ্যার ২ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। অন্যান্য ধর্ম হলো শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন। দেশটিতে এই তিন ধর্মের মানুষ যথাক্রমে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, ০ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
ভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রতি ভারতীয়রা সাধারণত সহিষ্ণু ও ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবাপন্ন। দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সমাজের মূলস্রোতের সমর্থন পায় না। তবে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় সংঘাতের কারণ যত না আদর্শগত তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক বলে মনে করা হয়।
ভারতের সংবিধানে দেশটিকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়েছে। যা নৈতিকতা ও আইনশৃঙ্খলাগত কিছু বিধিনিষেধ ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রে সব নাগরিকদের স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালনের সুযোগ দেয়।
ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি করতে পারে বিজেপি, মনে করেন ৪৫ শতাংশ মানুষ
আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। সাত দফার ভোটগ্রহণ চলবে ১ জুন পর্যন্ত। এরপর শুরু হবে ভোট গণনা। ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন।
নির্বাচন সামনে করে সম্প্রতি ভারতের ১৯টি রাজ্যে জরিপ পরিচালনা করে সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটি বা লোকনীতি-সিএসডিএস। ১০ হাজার ভোটার এই জরিপে অংশ নেন।
জরিপের ফলাফলে নির্বাচন নিয়ে ভারতের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। জরিপ মতে, ভারতের ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার উদ্বেগজনকভাবে কমেছে।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশ মানুষ আগামী সপ্তাহ থেকে অনুষ্ঠিততব্য নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার অভাব প্রকাশ করেছেন। জরিপে অংশ নেয়া প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন বিজেপি নির্বাচনে কারচুপি করতে পারে।
বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ
জরিপে ফলে বলা হয়েছে, ২৭ শতাংশ ভোটার বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর ২৩ শতাংশ ভোটারের মূল উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি।
প্রায় ৬২ শতাংশ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে ভারতে চাকরি খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্বে সবচেয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম ভারত। কিন্তু পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটিতে বেকরত্ব এবং মূল্যস্ফীতিও ক্রমশ বাড়ছে।
ভারতে ২০২২-২৩ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঠিক আগে দিয়ে ২০১৩/১৪ সালে দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
সরকারি পরিসংখ্যা অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালে ভারতে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী শহুরে তরুণদের মধ্যে প্রায় ১৬ শতাংশ দক্ষতার অভাব এবং যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার হয়ে আছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৩ এপ্রিল ২০২৪,/সন্ধ্যা ৭:৩৩