বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্পের কাছে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন সেই প্রিয়া সাহা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৯৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : হোয়াইট হাউজে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে তার এক বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়ার ৪ বছর ৭ মাস পর সেই বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রিয়া সাহা।

শনিবার (২৪ জুলাই) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে জুইশ সেন্টারে ‘হিন্দু মিলনমেলা নিউইয়র্ক’ নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হিন্দু সমাবেশে প্রিয়া সাহা প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, একটা কথা বলা খুব দরকার। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন না যে, আমি কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে এই কথাগুলো তুলে ধরেছিলাম। এসব সংগঠন (বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকে যেমন জেনেছি, নিয়মিত বুঝেছি, আর কেউ যদি মনে করে যে হঠাৎ করে (ট্রাম্পের সঙ্গে) দেখা হয়েছে আর বলেছি, এটা কিন্তু তা নয়। ঐ পরিসংখ্যানগুলো, বিষয়গুলো তো আমার মধ্যে থাকতে হয়েছে, জানতে হয়েছে। যা আমাকে গুছিয়ে বলতে হয়েছে আমার সামর্থ্য অনুসারে এবং ঠিক ৪৩ সেকেন্ডের মধ্যে আমি অনেকগুলো বিষয় বলে ফেলেছি। যা দিয়ে মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে, তোলপাড় করেছে, প্রতিবাদ করেছে, সচেতন হয়েছে, সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার পেছনের কারণটা বলি, আমি ছোটবেলা দেখেছি আমার পূর্বপুরুষ মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা তালুকদার, বা ছোট জমিদার ছিল। তাদের অনেক জমি ছিল। এখন পর্যন্তও  আমাদের ৩শ’ একর সম্পত্তি রয়েছে আমার বাপ-দাদাদের। যে জমিটা এই মুহূর্তে দখল করে খায় রাজনৈতিক সবচাইতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে। বিষয়টি রাজনৈতিক নেতারা জানেন। 

প্রিয়া সাহা বলেন, একটি গ্রামকে কিভাবে সিস্টেম্যাটিকভাবে উচ্ছেদ করে তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের গ্রাম। কী কী করা হয় সেখানে, ধরেন যখন ফসল হয় আমরা রাতে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই বলে যে আযানের ধ্বনি শুনলে তাদের মন ভালো হয়ে যায়, আর আমি আঁতকে উঠি। কারণ ভোর রাতে তারা গরু ছেড়ে দিতো, আযানের পর তারা হয় ফসল কেটে নিয়ে যাবে, নয়তো আক্রমণ করবে। আযানের ধ্বনিতে আমি শিশুকাল থেকেই আতঙ্কে ছিলাম। সকাল হলেই মনে হয় এই বুঝি আক্রমণ করলো। 

প্রিয়া সাহা বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে হলো তারা আমাদের ঘের থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাবে। আমাদের বিধাব জেঠিমা ছিলেন, জেঠির একটি গরু ছিল, গাভী, স্বামী মারা গেলে সেটি বাবার বাড়ি থেকে দিয়েছিল, গাভিটি প্রসবের কাছাকাছি ছিল। তেমনি অবস্থায় গাভিটি জবাই করে খেয়ে ফেলে এবং বাছুরটা ভাসিয়ে দেয় নদীতে। কিন্তু তার কোন বিচার হয়নি। তারপরে, আমাদের অঞ্চলে (পিরোজপুর) বানিয়ারি নামে একটি গ্রাম আছে, সেই গ্রামে দুই/তিন বছর পরপরই একজন মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই পাড়ায় বৈষ্ণব বাড়ির একটি ছেলেকে মেরে ফেললো। 

হত্যার পর সুপারি গাছে চারদিকে চার হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় লাশটি। ছেলেটির চোখ ওপড়ে ফেলা হয়েছিল। সেই বৈষ্ণব পাড়ায় দেড় শতাধিক হিন্দু পরিবার ছিল, ঐ ছেলেটিকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার বিভৎস দৃশ্য দেখে ৬ মাসের মধ্যে পুরো বৈষ্ণব পাড়ার সকলে ভারতে চলে গেল। এর তিন বছর পর আরেকজনকে হত্যা করা হয় পার্শ্ববর্তী পাড়ায়। তারও চোখ উঠিয়ে মধ্যবানিয়ার পাড়ার যে সবচেয়ে ধনী পরিবার, তাদের বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে ওই লোকটির লাশ চুবায়ে রাখলো, শুধু মুখটা পানির ওপরে। যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের সকলেই চেনে। 

শেখরা করে, মোক্তাররা করে, মোল্লারা করে-সকলেই তা জানে। এরপর ৩ বছর পাড় হতে না হতেই উত্তর বানিয়ারিতে ঘরে ঢুকে আমার এক কাকাতো ভাইকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে। সে ছিল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তার স্ত্রীও শিক্ষক। তাদের দুটা বাচ্চা। তার ঠাকুরদাও প্রাইমারি শিক্ষক ছিল। এই যে, মানুষ হত্যা করে ক্রমান্বয়ে একটি আতঙ্ক তৈরি করে। তার কোন বিচার হয় না। আমার গ্রামে আমার এক কাজিন-ব্রাদার বীরেন বিশ্বাসকে দিনের বেলায় পিটিয়ে হত্যা করলো মোল্লারা, তারও কোন বিচার হয়নি। 

আপনারা বলবেন মামলা হয়েছে? প্রতিটির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেই মামলা হয়েছে। আমাদের অঞ্চলের মানুষেরা মামলা করতে খুব জানে। কিন্তু ঐ যে, যেই জজ, সেই পুলিশ, সেই উকিল, সরকারি উকিল, ফাইন্যালি কিছু হয় না। এভাবেই প্রথমত: ফসল কেটে নেয়া, দ্বিতীয়ত: কিছুদিন পরপরই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা, তৃতীয় যে কাজটি করে তারা সেটি হলো ফলস মামলা দেয়া। আমাদের গ্রামে এমন অনেক ব্যক্তি আছে, আত্মীয়-স্বজন মানে বংশের লোক, তাদের বিরুদ্ধে ৫০, ৬০, ৭০টি পর্যন্ত মামলা দেয়া হয়। সবগুলোই ফলস। এ ধরনের মামলা দিয়ে বছরের পর বছর সহজ-সরল লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। অর্থাৎ বছরের বড় একটি সময় কোর্টে অতিবাহিত করার পরিবর্তে অনেকে ইন্ডিয়ায় চলে গেছেন। 

প্রিয়া সাহা বলেন, সর্বশেষ যেটি করা হলো, আমাদের জায়গার ওপর একশতটি চিংড়ির ঘের আছে, চিংড়ির ঘের থেকে অনেক টাকা আয় হয় তা সকলেই জানেন। সেই চিংড়ির ঘেরগুলো তারা দখল করে নিলো। ২০০৪ সালে যখন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীরা ক্ষমতায়, সে সময় আমার বাবার জমির ওপর বিশাল ইটের ভাটা করলো। কত মামলা-মোকদ্দমা করা হলো। কেউ শোনে না। এখনও দুটি ইটভাটা আছে, ইট কাটা হয় এবং এই ইট দিয়ে বাগেরহাটে সকল কন্সট্রাকশন কাজ করে। পিরোজপুরে সে বড় কন্ট্রাক্টর, এবং আমার বাবার জায়গার ওপরে সেই ইটের ভাটা।  

উল্লেখ্য, প্রিয়া সাহার বড়ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব জগদ্বীশ চন্দ্র বিশ্বাস (৬৮) শনিবার ঢাকায় পরলোকগমন করেছেন। এই বক্তব্যের সময় সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রিয়া বলেন, ভাইটি চলে গেলেন চিরতরে, মুখটি দেখতে পেলাম না শেষবারের জন্যেও। তাদের সবচেয়ে বড় ভাইটির বিদেহী আত্মার শান্তির জন্যে সকলের দোয়া চেয়েছেন প্রিয়া সাহা। 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিয়ে কথা বলার পর দেশে ফিরেননি প্রিয়া সাহা। ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি এনজিওর শেল্টারে রয়েছেন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার করেন বলে এই সমাবেশে উল্লেখ করেন প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। 

হোস্ট সংগঠনের প্রধান রামদাস ঘরামির সার্বিক তত্বাবধানে এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডা. প্রভাত চন্দ্রদাস। আলোচনায় অংশ নেন এটর্নী অশোক কর্মকার, ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, ড. দীলিপ নাথ, সোকরানী ধনপাত, শিতাংশু গুহ, সবিতা দাস প্রমুখ। 

স্বাগত বক্তব্যে সুশীল সিনহা নতুন মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এবারের নির্বাচনের পরও সংখ্যালঘুরা নিগৃহিত হয়েছে, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আশা করছি, অবিলম্বে ঘাতকেরা গ্রেফতার হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তাহলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভয়হীন চিত্তে বসবাসের সুযোগ পাবে। সমাবেশ শুরু হয় গীতা থেকে উচ্চারণের পর মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালিয়ে। সমাবেশে অংশ নেয়া নতুন প্রজন্মের সদস্যেরা বেশ উৎফুল্ল ছিল।

কিউএনবি/অনিমা/২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/সকাল ১১:৫৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit