বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

মানুষের মল দিয়ে জ্বালানি

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৯২ Time View

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : কেনিয়ার এক কোম্পানি মানুষের মল ব্যবহার করে ব্রিকেট তৈরি করছে। সেই প্রকল্পের আওতায় স্যানিটেশন, পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যাও মোকাবিলা করা হচ্ছে।

আমরা জানি, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ মোটেই অফুরন্ত নয়। সব ক্ষেত্রেই কি সেটা সত্য? যতদিন মানুষের অস্তিত্ব থাকবে, ততদিন একটি সম্পদ কখনওই ফুরিয়ে যাবে না। সেটি হল মল।

স্যানিভেশন নামে কেনিয়ার এক কোম্পানি মানুষের মল প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহারের কাজে হাত পাকিয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষতিকারক প্যাথোজেন সরিয়ে ফেলার পর সেই কাচামাল ব্রিকেট বা কাঠকয়লায় রূপান্তরিত করা হয়। 
কোম্পানির প্রতিনিধি ডেক্সটার গিকাস বলেন, “প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা সব সময়ে কৌতূহল দেখতে পাই। আসলে আগে সম্ভব মনে হয়নি, এমন আইডিয়ার মুখোমুখি হলে তখন বোঝা যায়, সেটা শুধু সম্ভবই নয়, তা থেকে মুনাফাও করা যায়। কিছু মূল্য সৃষ্টি করা যায়, কিছুটা উদ্ধার করা যায় এবং বর্জ্য থেকে আয় করা যায়।”

নাইরোবি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে নাইভাশায় এই কোম্পানি সক্রিয়। ট্রাক চালকরা আশেপাশের জনপদে গিয়ে বাসার বাথরুম থেকে মল সংগ্রহ করেন। সেখানকার পয়ঃপ্রণালী এখনও শুধু আংশিকভাবে উন্নত হওয়ায় উদ্ধার না করলে সেই বর্জ্য পানি মাটির নীচে চলে যেত।

জন কারিউকি ভ্যাকুয়াম ট্রাক অপারেটর হিসেবে প্রায় তিন বছর ধরে সেখানে কাজ করছেন এবং সেই প্রক্রিয়া তাকে মুগ্ধ করছে।

নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রথমে মনে হয়েছিল কাজটা বেশ খারাপ হবে। হয়তো স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম যে এই প্রক্রিয়ায় কোনও ধোঁয়া সৃষ্টি হয় না। ক্ষতিকারক গ্যাসও বের হয় না। কাঠকয়লার মধ্যে কার্বন মোনোক্সাইড থাকে। কিন্তু এই ব্রিকেটের মধ্যে তা নেই।”

প্রতি মাসে ১২টি ট্রাক বোঝাই কাদার আকারের মল সংগ্রহ করা হয়। প্রত্যেকটি ট্রাকে প্রায় ২০ হাজার লিটার তরল থাকে। কোম্পানি বেশিরভাগ বাথরুম তৈরি করে দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে সেই বিনিয়োগের সুফল ভোগ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত স্যানিভেশনের প্রকল্প ভালোভাবে চলছে। স্থানীয় মানুষও সন্তুষ্ট৷ প্লাস্টিকসহ সব রকমের বর্জ্য পয়ঃপ্রণালীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু সংগৃহিত কাদায় সে সব আলাদা করা হয়।

ডেক্সটার গিকাস বলেন, “আমরা মানুষকে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সুবিধা দিচ্ছি৷ যে বর্জ্য রোগব্যাধী সৃষ্টি করতো এবং পরিবেশ দূষণ করতো, আমরা তা সরিয়ে দিচ্ছি৷ আমরা জনপদে কাজ করছি, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান করছি।”

এই কোম্পানি পরোক্ষভাবে প্রায় একশো মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব করেছে৷ সরাসরি ৫৬ জন কোম্পানির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। গোটা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে তারা সক্রিয়। সবার আগে তরল ও কঠিন আলাদা করা হয়৷ তারপর তরল পদার্থ জেলার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

কঠিন পদার্থ বেশ কয়েকশো ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। তারপর সেটি প্রক্রিয়াজাত করে জৈব পদার্থের সঙ্গে মেশানো হয়। চূড়ান্ত ব্রিকেটে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ শুকানো মল থাকে। এই কোম্পানি মাসে প্রায় ১০০ টন মলযুক্ত ব্রিকেট তৈরি করে।

জন কারিউকির মতে, রান্নাসহ নানা কাজে এই ব্রিকেট ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটি আরও কার্যকর, অনেক বেশি টেকসই এবং এতে খাবার ভালোভাবে রান্না করা যায়। জ্বালানি হিসেবে এটির আরও ব্যবহার রয়েছে। চারকোলের অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব ছিল, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ব্রিকেট পরিষ্কারভাবে ব্যবহার করা যায়। কোনও ক্ষতিকারক নির্গমন ঘটে না।”

একটি ক্যাফের মতো নাইভাশার কিছু রেস্তোরাঁও সেই ব্রিকেট ব্যবহার করছে। আগে সেখানে পাথরের চুলায় লাকড়ি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেগুলোর দাম আরও বেশি ছিল। বর্ষার মৌসুমে লাকড়ি পাওয়াও কঠিন হতো। সূত্র:  ডয়েচে ভেলে

কিউএনবি/অনিমা/১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/বিকাল ৩:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit