বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন

ঢাবি ডিবেটিং সোসাইটির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব চান বিতার্কিকরা

জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • Update Time : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৯৪ Time View

জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভিত্তিক বিতর্ক চর্চার সামাজিক সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি'(ডিইউডিস) এর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব চান বিতার্কিকরা।আজ ৯ ফেব্রুয়ারি(২০২৪) শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পক্ষপাতিত্ব এবং অনিয়মের ডিইউডিস নির্বাচন বর্জন কর্মসূচির অংশ হিসেবে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বিতার্কিকবৃন্দ” ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এই দাবি জানান ‌।বিতার্কিকরা তাদের বক্তব্যে বলেন,”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একমাত্র বিতর্ক সংগঠন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি’। আমরা এই সংগঠন কে ভালবাসি। দোষ সংগঠনের নয়। দোষ হচ্ছে যারা সংগঠন পরিচালনা করেন, তাদেরই। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কমিশন, অস্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং মডারেটর প্যানেলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ”।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বিতার্কিক ও ভ্রাতৃপ্রতিম হল বিতর্ক সংগঠনগুলোর নেতারা জানান, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু অনৈতিক উপায়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, মডারেটর প্যানেলের সহযোগিতায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা কমিটিকে দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা করে। কিন্তু সাধারণ বিতার্কিকদের বাধার মুখে তারা একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে একটা সাধারণ সভা আয়োজন করে’। সভায় হল সংগঠনগুলোর  যৌক্তিক দাবীগুলো শুনতে সভাপতি , সাধারণ সম্পাদক ও মডারেটর অনাগ্রহ প্রকাশ করেন ।বিভিন্ন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কক্ষে আসন গ্রহণ করতে দেয়ার সামান্য সৌজন্যতাটুকু দেখাতে ব্যর্থ হয়। একাধিক হল বিতর্ক সংগঠন এ  সাধারণ বার্ষিক সভাকে বর্জন করে’। তারা আরো অভিযোগ করেন,’ওইদিন একুশে হলে ‘’দ্বাদশ ভাষাদিবস জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৪’’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার ফলে একুশে হল ডিবেটিং ক্লাব আজকে সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। একটি হলের অংশগ্রহণ ছাড়াই এই সভা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না’। 

বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ডে অভিযোগ করে তারা বলেন ,”একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ভ্রাতৃপ্রতিম হল বিতর্ক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা না করেই স্বেচ্ছাচারী উপায়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও নির্বাচনের বিভ্রান্তকার তারিখ ঘোষণা করে সংগঠনে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর ইতিবাচক সমাধানের পথকে বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা করেছেন তারা।আমাদের ন্যায্য দাবীকে তোয়াক্কা না করে চিফ মডারেটরের অনুপস্থিতিতে মডারেটর শান্তা তাওহিদা ম্যাম অবৈধ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে গতকাল ৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় সাধারণ সভা আয়োজন করে, যেখানে হল সংগঠনগুলোর  যৌক্তিক দাবীগুলো শুনতে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কক্ষে আসন গ্রহণ করতে দেয়ার সামান্য সৌজন্যতাটুকু দেখাতে ব্যর্থ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি মাহবুব মাসুম অনৈতিক চুক্তিতে ডিইউডিএস এর সভাপতি হওয়ার দোষে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছিলো। তাকে সহযোগিতা করা সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেনও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। তাই নির্বাচন কমিশনার পদে তাদের স্বনিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ যা বিতার্কিকরা প্রত্যাখ্যান করেছে । এটা ডিইউডিএস এর নির্বাচনকে অস্বচ্ছ ও একপাক্ষিক করার নোংরা প্রচেষ্টা।তারা আরো বলেন ,মডারেটর প্যানেল এর অসহযোগিতামূলক ও পক্ষপাতী আচরণ বিতার্কিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। ডিইউডিএস প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য মহোদয় নির্দেশ দেয়ার পরও চিফ মডারেটরের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বিতার্কিকরা। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা জানান এবং পূর্ববর্তী এক সাক্ষাতে তিনি জানান যে চিফ মডারেটর হওয়া সত্ত্বেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি হওয়ার কারণে তাঁর বিতার্কিকদের কথা শোনার সময় নেই। এমনকি গঠনতন্ত্রকে মানবসৃষ্ট বলে উপহাস করেন তিনি ।তিনি বলেন যে মানুষের বানানো নিয়ম মানুষই লঙ্ঘন করতে পারে। গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে  বিতার্কিকদের প্রতি অসহযোগিতামূলক আচরণে বিতার্কিকদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও তার এই ধরণের অসহযোগিতায় এটিই প্রতীয়মান হয় যে চিফ মডারেটর সহ মডারেটর প্যানেল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির অসদাচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতিকে প্রত্যক্ষ সমর্থন করছেন।তারা বলেন ,”নির্বাচনের মনোনয়ন ফর্মের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দশ হাজার (১০,০০০) টাকা যা সাধারণ বিতার্কিকদের পক্ষে বহন করা কার্যত অসম্ভব”।মানববন্ধনে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বিতার্কিক ও ভ্রাতৃপ্রতিম হল সংগঠনগুলোর  প্রত্যাশা ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির এই অচলায়তন ভেঙে বিতর্কের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক’।মানববন্ধনে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজিব হোসেন বলেন, “আমরা চিফ মডারেটরের কাছ থেকে কোনো সুরাহা পাইনি। তিনি ভিসি স্যারের কথাকেও হয়তো তোয়াক্কা করেন না। তিনি বলেন ,’গঠনতন্ত্র মানুষ বানায়, মানুষ ভাঙে’। এভাবে করে সংগঠন কীভাবে চলবে”। এছাড়াও তিনি মডারেটর প্যানেলের পদত্যাগের দাবী তোলেন। রোকেয়া হলের বিতার্কিকদের সংগঠন ‘রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গন’ এর দফতর সম্পাদক সামিয়া মাহবুব বলেন,”এখানে আমরা যারা উপস্থিত হয়েছি, আমরা প্রত্যেকেই ‘ডিইউডিএস’কে ভালোবাসি। দোষ সংগঠনের নয় । দোষ হচ্ছে যারা সংগঠন পরিচালনা করে, তাদেরই। আমরা গণতান্ত্রিক সংগঠনে ‘প্রশ্নবিদ্ধ: নির্বাচন চায়না। প্রত্যেক হলেই বছরের পর বছর পুরনো কমিটি পড়ে আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে এমন ‘নজির’ স্থাপন করা হোক যাতে ভবিষ্যতে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের সাহস কেউই করতে না পারে”।এ সময় তারা ৫ দফা দাবি জানান।সাধারণ বিতার্কিক ও ভ্রাতৃপ্রতিম হল সংগঠনগুলোর দাবীসমূহ: 

ক) ডিইউডিএস এর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও নির্বাচন অনতিবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করতে হবে।

খ) ভ্রাতৃপ্রতিম হল সংগঠনগুলোর সাথে সংলাপ করে সকলের সহাবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সকল হল সংগঠনগুলোর সাথে সংলাপের মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। 

গ) মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ও পক্ষপাতদুষ্ট মডারেটর প্যানেলের অধীনে নির্বাচনকে বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে।

ঘ) অনতিবিলম্বে মডারেটর প্যানেল ও সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে হবে। এছাড়াও তাদের  অনিয়ম ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এই আচরণের  সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। 

ঙ) ভ্রাতৃপ্রতিম হল সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনা করে মনোনয়ন ফর্মের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।মানববন্ধন শেষে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে টিএসসির জনতা ব্যাংক পর্যন্ত পদযাত্রা করে। জনতা ব্যাংকের সামনে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ‘রুহের মাগফিরাত’ কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করে।

এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি’র সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান মাসুম জানান,”অভিযোগকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে দ্রুত ইসি মিটিং আহ্বান করা হয়।তাই এক সপ্তাহ আগে না জানিয়ে মাত্র একদিন আগেই তাদেরকে জানানো হয়েছে। বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক  পুনরায় নির্বাচন করার কোন সুযোগ নাই। তাই তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিভিন্ন হলের ডিবেটিং সোসাইটি গুলো কিভাবে পরিচালিত হবে সেটার স্বতন্ত্র নিয়ম আছে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব ডিইডিএস এর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নয়”।

বিতার্কিকদের অভিযোগ এবং দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের মডারেটর অধ্যাপক তাওহীদা জাহান (শান্তা) বলেন,”ডিইউডিসের ইসি সভা আহ্বান করেছে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সহ ইসি কমিটি।মডারেটর হিসেবে আমার দায়িত্ব তাদের কে সহযোগিতা করা। কিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বলে শুনেছি।তারা এক সপ্তাহ আগে আমার কাছে এসেছিলো। আমি তাদের বক্তব্য শুনেছি এবং চিফ মডারেটর ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ভিসি স্যার কে তাদের কথা জানিয়েছি”।

 

 

কিউএনবি/অনিমা/০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/সন্ধ্যা ৬:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit