বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১২ অপরাহ্ন

জান্নাতি মানুষের ছয় গুণ

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৩৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : জান্নাত মহান আল্লাহর প্রিয় ও অনুগত বান্দাদের জন্য প্রস্তুতকৃত একটি আবাসনব্যবস্থা। পরম সুখের চিরস্থায়ী ঠিকানা, যা অসংখ্য নিয়ামত দ্বারা সজ্জিত ও সুশোভিত। যেখানে মানুষের কোনো চাওয়া ও প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকবে না। এটি মুমিনজীবনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ও বাসনা।

তবে ঈমান-আমলের স্তরভেদে মুমিনরা জান্নাতের বিশেষ সুবিধা ও মর্যাদা লাভ করবেন। সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ জান্নাত ‘জান্নাতুল ফেরদাউস’-এর উত্তরাধিকারস্বত্ব যাঁরা পাবেন, তাঁদের বৈশিষ্ট্য ও বর্ণনা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে। যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত। যারা অনর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকে।

যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয় থাকে। যারা লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।…আর যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের নামাজে যত্নবান থাকে। তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে।

তারা শীতল ছায়াময় জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, যাতে তারা হবে স্থায়ী অবস্থানকারী।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১-১১)
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা অর্জনে একজন মুমিন জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারস্বত্ব লাভ করতে পারে। নিম্নে এর সারসংক্ষেপ আলোচনা করা হলো :

১. নামাজে বিনয়াবনত হওয়া : অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা, অন্তরের প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনসহ মুমিন বান্দার জন্য অসংখ্য কল্যাণ এবং সওয়াব আছে নামাজে। তবে নামাজ হতে হবে একনিষ্ঠভাবে, বিনয়াবনত হয়ে ও যথাযথ নিয়ম মেনে। আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এমন লোকও আছে, যারা নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও নামাজের রুকন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুজু না থাকায় তারা নামাজের পরিপূর্ণ সওয়াব পায় না।

বরং তারা ১০ ভাগের এক ভাগ, ৯ ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ বা অর্ধাংশ সওয়াব প্রাপ্ত হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৭৯৬)
২. অনর্থক বিষয় থেকে বিরত থাকা : যে কথা ও কাজে পার্থিব এবং পরকালীন কোনো কল্যাণ নেই, এমন বিষয়কে ‘অনর্থক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনর্থক বিষয় পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহকে উসকে দেয় এবং অন্যের দোষ চর্চা ও গোনাহে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। অনর্থক বিষয়ের অবতারণার মাধ্যমে ব্যক্তির আত্মসম্মান বিবর্জিত হয়। অনর্থক কর্মকাণ্ড ও বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আদর্শ মুসলিম এবং প্রকৃত মুমিনের সৌন্দর্য ও স্বকীয়তা ফুটে ওঠে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সুন্দর মুসলিম হওয়ার একটি নিদর্শন হলো, অর্থহীন কাজ পরিত্যাগ করা।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৭)

৩. জাকাত আদায়ে সচেষ্ট থাকা : জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ। পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর অসংখ্য জায়গায় নামাজের সঙ্গে সঙ্গে জাকাতের প্রসঙ্গ বিধৃত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও, রাসুলের আনুগত্য করো; যাতে তোমরা আল্লাহর রহমত পেতে পারো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৬)

পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো ও জাকাত প্রদান করো এবং তোমরা যে নেক আমল নিজেদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)

তা ছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন, সুদমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ, সম্পদের পরিশুদ্ধকরণ, আত্মিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে জাকাতের সঠিক ও সুপরিকল্পিত প্রয়োগে। জাকাতের বিধান লঙ্ঘন এবং জাকাত প্রদানে ঢিলেমি ও ছলচাতুরীর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে।  

৪. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা : মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শারীরিক সুস্থতা মহান অল্লাহর অমূল্য দান। এগুলোর সামান্য ত্রুটিতে মানুষকে চরম বিপাকে পড়তে হয়। শারীরিক সুস্থতার যথাযথ মূল্যায়ন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুমিনকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়। কেননা পরকালে এ ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। হাদিস শরিফে মানুষকে শরীরের দুটি অঙ্গ সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। একটি মুখ, অন্যটি লজ্জাস্থান। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র।’ আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

৫. আমানত রক্ষা ও অঙ্গীকার পূর্ণ করা : সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারিতা ও অঙ্গীকার পূর্ণ করা ইত্যাদি; এগুলো মানুষের উৎকৃষ্ট ও উন্নত গুণাবলির অন্যতম। এগুলোর সঙ্গে মানুষের ঈমান-আমল ও দ্বিনের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন খুতবা খুব কম দিয়েছেন, যাতে এ কথা বলেননি যে ‘যার আমানতদারি নেই, তার ঈমান নেই এবং যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না, তার মধ্যে দ্বিন নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৬০৭)

৬. নামাজে যত্নবান হওয়া : সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। এটি মুমিন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। যে ব্যক্তি নামাজে যত্নবান, তার জন্য ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন সহজ হয়ে যায়। নামাজে অবহেলা খাঁটি মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। পবিত্র কোরআন-সুন্নাহে একাধিক স্থানে নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে। সাহাবায়ে কেরাম, সালফে সালেহিন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদিন প্রমুখের জীবনে এর বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়। নাফে (রহ.) বর্ণিত, ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) তাঁর শাসনামলে বিভিন্ন অঞ্চলের গভর্নরদের কাছে একটি জরুরি পত্র লেখেন, ‘আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নামাজ। যে নামাজের হেফাজত করল এবং নামাজের প্রতি যত্নবান হলো, সে ইসলামকে হেফাজত করল। আর যে নামাজকে নষ্ট করল, সে দ্বিনের অন্যান্য বিধান আরো বেশি নষ্টকারী হবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ০৬)

কিউএনবি/অনিমা/০৪ জানুয়ারী ২০২৪,/রাত ৯:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit