মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

চৌগাছায় ঘরে ঘরে চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির মহোৎসব

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)
  • Update Time : শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৬৯ Time View

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ঘরে ঘরে চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির মহোৎসব।শীতকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামের ঘরে ঘরে চলছে কলাই আর চালকুমড়া দিয়ে বড়ি বানানোর মহোৎসব। সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের বড়ি তৈরির রাঙাউৎসব। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত হাড় কাপানো শীত পরছে। তবুও তা উপেক্ষা করে গ্রাম অঞ্চলের ঘরে ঘরে এখন চলছে শীত মৌসুমের অন্যতম মজাদার গ্রামীর খাবার কুমরো বড়ি তৈরি।শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি গ্রাামে গ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরির যেন মহোৎসব চলছে। বাড়ির আঙিনা,বাড়ীর ছাদে ও আশেপাশে মাচা করে সেখানে শুকানো হচ্ছে শীতের জনপ্রিয় খাবার বড়ি। স্বাদে ওমান ভালো হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে বড়ির চাহিদা। বাড়তি আয়ের পথ তৈরি হওয়ায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বড়ি তৈরি করছেন নারীরা। অনেক পরিবার বড়ি তৈরী করে তা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। মাষকলাই ভিজিয়ে সেই ডালের সঙ্গে পাকা চালকুমড়ো কুরা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ সুস্বাদু বড়ি। শীতের সময় গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ মহিলা পালা করে বড়ি তৈরি করার কাজটি করে থাকেন। কুমড়ো বড়ি তরকারির একটি মুখরোচক খাদ্য। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা।

চৌগাছা পৌর শহরের বাকপাড়া গ্রামের আকলিমা বেগম বলেন, উপজেলার নারীরা এই বড়ি তৈরি করার জন্য বেশ কয়েক মাস আগে থেকে চাহিদামতো পাকা চালকুমড়োর ব্যবস্থা করেন। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন হয়। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়া অন্য ডালেও তৈরি করা যায় এই বড়ি। মচমচে করে রোদে শুকাতে পারলে এই বড়ির ভালো স্বাদ পাওয়া যায়।এ সময় গ্রামের প্রতিটা বাড়ীতে কমবেশি কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা আত্মীয় স্বজনদের দেওয়া ও বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন। শীতের সময় কুমড়ো বড়ির চাহিদাথাকে বেশী, আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন।নারায়নপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের বড়ি তৈরি করা রুমা বেগম জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়।চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিভাবে কুরে কুচি করে রাখতে হয়।এরপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। যাতে করে কুমড়ায় থাকা পানিনিংড়িয়ে যায়। অন্যদিকে ডালের পানি ছেঁকে ঢেঁকি বা শিলপাটায় বেটে নিতে হয়। বর্তমানে শিলপাটাও ঢেঁিক ব্যবহার কমে গেছে। বিদ্যুত চালিতম্যাসিনে ডাল কুটার কাজ করেন। এরপর কুটা-বাটা ডালের খামিরের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হয়। যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়, ততক্ষণখুব ভালো করে হাত দিয়ে এ মিশ্রণ মিশাতে হয়।

এরপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির ছোট ছোট আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হয়। এভাবে বড়ি তিন থেকে চার দিন রোদে শুকিয়ে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। আন্দুলিয়া গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়। এ বড়ি নিজেদের খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়।চৌগাছা বাজারের কুমড়ো বড়ির ব্যবসায়ী সুকুমার সরকার বলেন, এখানকার কুমড়ো বড়ি খুব সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলের বড়ি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বিশেষ করে ঢাকায় এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, শীত মৌসুমে গ্রামের নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছে। গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

কিউএনবি/অনিমা/ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩/বিকাল ৪:১১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit