ডেস্ক নিউজ : জুলাই গণঅভ্যুত্থান নেতাকর্মী, সমন্বয়ক, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জন ব্যক্তিকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন।এই তালিকায় রয়েছেন- জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদসহ একাধিক নেতাকে গানম্যান দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনে সম্মুখসারির কয়েকজন যোদ্ধা, সমন্বয়ক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনীতিকরা দীর্ঘদিন ধরে প্রাণনাশের হুমকির মুখে রয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের তথ্য সরকারকে অবহিত করা হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমকে ইতোমধ্যে গানম্যান দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও জেপি প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন। এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, পাবনা-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাফির তুহিন, জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং এবি পার্টির ব্যারিস্টার ফুয়াদসহ আরও কয়েকজন রাজনীতিক গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। হাদির এক বোনকে অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান দেওয়া হবে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হবে।
পুলিশের আইজি বাহারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, যারা বেশি (ভারনারেবল) নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের একজন অস্ত্রধারী রক্ষী দিয়েছি। যারা কম ঝুঁকিতে আছেন তাদের কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, কিভাবে চলাফেরা করবেন। কোন সময় কখন কাকে কি জানাতে হবে। তিনি আরও জানান, সব বিষয় আমি বলতে পারব না। এসবির অতিরিক্ত আইজিপি তা দেখছেন।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকেই শিক্ষার্থী রিকসা এবং পাবলিক পরিবহনে চলাচল করেন, ফলে সবাইকে গানম্যান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে ১২ জন গানম্যান ও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন। দুই এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/২২ ডিসেম্বর ২০২৫,/রাত ১১:৩৪