মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

যে কারণে দুই হাতেই ব্লাড পেশার মাপা উচিত

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১০২ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ব্লাড প্রেশার বা শরীরে রক্তের চাপ মাপার মেশিনকে স্ফিগমোমেনমিটার বলে। বর্তমানে ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মেশিন বহুল ব্যবহৃত হলেও গত একশ বছরের উপরে ব্লাড প্রেশার মেশিন ছিল মার্কারি বা পারদ দিয়ে তৈরি। ১৮৮১ সালে Von Basch সর্ব প্রথম স্ফিগমোমেনমিটার আবিষ্কার করলেও ১৯৮৬ সালে Scipione Riva-Rocci মার্কারি প্রথম সেটা আধুনিকায়ন করেন।

ডাক্তারের কাছে গেলে রোগীর মুখে তার সমস্যা শোনার কিংবা জানার পর প্রতিটি ডাক্তার সার্বিকভাবে রোগী বা মানুষটি কেমন আছেন, তার শরীরের সার্বিক অবস্থা সেই মুহূর্তে কেমন, তা জানতে কয়েকটি মৌলিক পরীক্ষা করেন। হাতের কব্জিতে চেক করেন পালস, বাহুতে চেক করেন ব্লাড প্রেশার, কপালে হাত দিয়ে অথবা থার্মো যন্ত্র দিয়ে দেখেন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা, বুকের দিকে তাকিয়ে গুনে নেন শ্বাস-প্রশ্বাসের হার। এমন করে একজন মানুষের শরীরে ওই মুহূর্তে কোনো সমস্যা আছে বা যাচ্ছে কিনা, তার প্রাথমিক একটা ধারণা নেন চিকিৎসক। এই প্রাথমিক কাজগুলোর একটি এবং অন্যতম হলো শরীরের রক্তচাপ মাপা।

ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ হলো রক্তবাহী নালিতে রক্তের চাপ। শরীরে রক্তনালি দুই প্রকার। Artery বা ধমনি, Vein বা শিরা। শরীরের সব রক্ত নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট। এই হার্ট পাম্প করে ধমনির মধ্যে দিয়ে সারা দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত পৌঁছে দেয় এবং শিরার মাধ্যমে সেই রক্তগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে আবার হার্টে এসে পৌঁছায়। হার্ট হলো রক্তের সাময়িক রিজার্ভার, আবার একই সঙ্গে পাম্প মেশিন।

বিশেষ করে Artery বা ধমনির মধ্যে দিয়ে রক্ত যখন শরীরের বিভিন্ন অংশে যায়, রক্তগুলো তখন রক্তবাহী নালিতে চাপ দেয়। সেই চাপকে বলা হয় ব্লাড প্রেশার বা রক্তের চাপ। এ চাপটি মাপা হয় হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা মেপে। হার্ট যখন পাম্প করে সারা শরীরে রক্ত পৌঁছায়, তখন যে চাপ দেয়, সেটিকে বলে সিস্টোলিক প্রেশার। আর যখন কোনো চাপ না দিয়ে পরবর্তী চাপের আগে হার্ট বিশ্রামে থাকে, তখন হার্টের চাপ কমে আসে এবং যে চাপটি অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলে ডায়াস্টোলিক প্রেশার।

এই দুটো চাপ একটা রেঞ্জের মধ্যে থাকলে ধরে নেওয়া হয় হার্ট ভালো আছে, আর রেঞ্জের বাড়তি কমতি হলে ভাবে হার্ট সমস্যাগ্রস্ত। এই রেঞ্জের বেশি হয়ে গেলে তাকে বলে হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশন, রেঞ্জের থেকে কমে গেলে বলে লো ব্লাড প্রেশার বা হাইপোটেনশান। আর রেঞ্জের মধ্যে থাকলে তাকে বলে নরমাল ব্লাড প্রেশার বা নর্মটেনশন। ব্লাড প্রেশারের নরমাল রেঞ্জ ধরা হয় ১২০/৮০। ১২০ হলো তার সিস্টোলিক চাপ, ৮০ হলো তার ডায়াস্টোলিক চাপ। যদি প্রেশার বেড়ে গিয়ে ১৪০/৯০ হয়, তখন তাকে বলে হাই ব্লাড প্রেশার, আবার প্রেশার কমে গিয়ে ৯০/৬০-এর নিচে চলে গেলে তাকে বলে লো ব্লাড প্রেশার।

ব্লাড প্রেশার সচরাচর মাপা হয় বাম হাতের বাহুতে। যদিও এতে বিশেষ কোনো সুবিধা বা পার্থক্য নেই। বেশিরভাগ মানুষ ডানহাতি বলেই বাম হাতে প্রেশার মাপা হয়। সঙ্গে প্রেশার মাপার সময় বাহু হার্টের লেভেলে থাকলে প্রেশার নির্ভুল হয়। অধিকাংশ ডাক্তার কিংবা চিকিৎসাসেবা দানকারীরা অনেকদিন থেকেই ডান হোক আর বাম হোক, এমন এক হাতে ব্লাড প্রেশার মেপে থাকেন।

গবেষণায় দুটো রেজাল্ট পাওয়া গেছে-

এক. যদি দুই হাতের ব্লাড প্রেশারের সিস্টোলিক বা বেশি সংখ্যাটি অথবা ডায়াস্টোলিক বা কম সংখ্যাটির যে কোনো একটির পার্থক্য ১৫-এর বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ হাতে, পায়ে অথবা শরীরের কোথাও হচ্ছে।

দুই. যদি দুই হাতের ব্লাড প্রেশারের সিস্টোলিক বা বেশি সংখ্যাটি অথবা ডায়াস্টোলিক বা কম সংখ্যাটির যে কোনো একটির পার্থক্য ১০-এর বেশি হয় তাহলে কার্ডিওভাসকুলার কোনো সমস্যায় ভুগছেন।

দুই হাতের এই পার্থক্যটি সংখ্যায় সামান্য কিংবা দশের কম হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সচরাচর কম বয়সীদের চেয়ে বেশি বয়সিদের মধ্যে এমন পার্থক্যের রেঞ্জ দেখা যায়। কারণ বয়স বাড়লে রক্তে কলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে রক্তনালিতে কলেস্টেরল ক্লগ তৈরি হয়ে রক্তনালির প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে।

অনেকসময় হার্টের মূল রক্তনালি এওর্টাতে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হলে তখনও দুই হাতের ব্লাড প্রেশারে পার্থক্য দেখা দেয়।

লেখক : চিকিৎসক, ইংল্যান্ডে কর্মরত

কিউএনবি/অনিমা/২৮ ডিসেম্বর ডিসেম্বর ২০২৩,/সকাল ১১:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit