রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন

গাজা নয়, অসহায় বিশ্ব

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৮৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিধ্বস্ত গাজার অজ্ঞাত এক সড়ক। জিপ-ট্রাক নিয়ে রাস্তায় মারমুখী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সেনারা। আর তাদের সামনেই হাঁটু গেড়ে একের পর এক বসে আছে কয়েক ডজন অসহায় পুরুষ। ইসরাইলের হামলায় বিধ্বস্ত জনশূন্য ভবনটির ঠিক নিচের ফুটপাতেই মঞ্চস্ত হচ্ছে ইসরাইলি নির্যাতনের এ বর্বর দৃশ্য! গ্রেফতারের আগে কী ঘটেছে- তার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা জুতো-স্যান্ডেল। অন্তর্বাস ছাড়া আর একটা সুতোও নেই নিরপরাধ-নিরস্ত্র মানুষগুলোর শরীরে। পিঠ মুড়িয়ে পেছনে বাঁধা দুই হাত। মাটির দিকে মুখ করে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে দাঁড়ানো ‘যমদূতের’ গাড়িতে। তারপর মোটা কাপড়ে চোখ বেঁধে একে একে তাদের গাড়িতে তুলছে সেনারা। অলি-গলি ঘুরে গাজাবাসীকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালুময় এক প্রান্তরে!

কী করুণ দৃশ্য! গোটা বিশ্বের চোখের সামনে কী অমানবিক ধৃষ্টতা ইসরাইলের! অথচ আরব বিশ্বসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্বের সবগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রই বেসামরিক জনগণকে হত্যা-নির্যাতন থেকে দূরে থাকতে বলছে ইসরাইলকে। গত ৬৩ দিনে (শুক্রবার পর্যন্ত) এই কথাটিই অন্তত কয়েকশ বার বলেছে! কিছুতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না ইসরাইল। শুনছে না কারও কথাই। পাত্তা দিচ্ছে না বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রকেই। গাজায় ইসরাইলের হামলার গত দুই মাসে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বিশ্বনেতাদের। অবরুদ্ধ এ জনপদের আর্তচিৎকারে প্রতিদিন সেই সত্যটিই ভেসে বেড়ায়, শুধু গাজাবাসী নয়, ইসরাইলের কাছে অসহায় গোটা বিশ্বই।

শুক্রবার গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অসহায় গাজাবাসীর এই গ্রেফতারের ভিডিও নতুন করে নাড়া দিয়েছে বিশ্বের ঘুমন্ত বিবেককে। কত নৃশংস ইসরাইল! নারী-শিশু হত্যার পাশাপাশি হামাস নিধন অজুহাতে এখন গণগ্রেফতার চালাচ্ছে পুরো গাজা উপত্যকায়। যখন তখন মর্জিমতো ধরে নিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত উত্তর গাজার খলিফা বিন জায়েদ এবং নিউ আলেপ্পো স্কুল থেকেও একাধিক বাস্তুচ্যুতকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ডাক্তার, সাংবাদিক, শিক্ষানবিশ এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন। আটকের সঠিক সময় জানা না গেলেও বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেড মনিটর এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এমনকি আটকৃতদের ছবিসহ ভিডিও প্রকাশ করা হলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

ইসরাইল মিডিয়া সেই ছবিগুলোকে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বাহিনী হামাসের আত্মসমর্পণ বলে উল্লেখ করলেও এ তথ্যকে ভুয়া বলছেন গাজার বেসামরিকরা। তাদের দাবি, ভিডিওতে থাকা মানুষজন গাজার নিরীহ-নিরস্ত্র বেসামরিক। এমনকি ছবি দেখে অনেকে নিজেদের আত্মীয়-পরিবার-সহকর্মীদেরও চিহ্নিত করেছেন। আটককৃতদের মধ্যে এমনই একজনের আত্মীয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আল-মাদৌন। তিনি বলেন, একটি ছবিতে তার চাচাতো ভাই আবৌদ এবং ভিডিওতে তার ভাই মাহমুদকে দেখেছেন। এদের মধ্যে আবৌদ একজন দোকানদার তবে মাহমুদ কোনো কাজে জড়িত নয়। মাদৌন আরও জানান, তারা (ইসরাইলিরা) বাজার এলাকার থেকে একটি পরিবারের কয়েকজন, আমার ভাই মাহমুদ (৩২), তার ছেলে ওমর (১৩) এবং আমার বাবাসহ (৭২) পরিচিত অনেককে আটক করেছে। ভিডিও ও ছবিতে বেসামরিকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বার্তা সংস্থা আল আরবি আল জাহিদ। একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, আটকদের মধ্যে তাদের একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের সহকর্মী দিয়া আল-কাহলোটকে বেইট লাহিয়ার মার্কেট স্ট্রিট থেকে তার ভাই, আত্মীয়সহ গ্রেফতার করা হয়েয়ে। সেখানে অন্যান্য বেসামরিক নাগরিকও ছিল। দখলদাররা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জামাকাপড় খুলে ফেলতে বাধ্য করেছিল। তাদের তল্লাশি চালিয়েছিল। গ্রেফতার করার সময় তাদের অপমান করেছিল। গাজার বেসামরিকদের ওপর এমন জুলুম নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারিকে। ছবির বিষয়ে সরাসরি মুখ না খুললেও তিনি জানান, আমরা অনেক বন্দিকে দেখেছি, হামাস সন্ত্রাসীদের তারা আইডিএফ স্থল অভিযানের সময় গ্রেফতার হয়েছিল। আমরা তদন্ত করে দেখছি কাদের সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক আছে, আর কাদের নেই। আমরা তাদের সবাইকে গ্রেফতার করি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করি। আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পথের প্রতিটি দুর্গকে ভেঙে ফেলতে থাকব। গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহতের খবরের মাঝেই এ ছবিগুলো প্রকাশ করেছে বিশ্ব গণমাধ্যম। 

শুক্রবার যুগান্তরকে পাঠানো গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৮৭ জনে। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এদিন সকালেও হামলা চালিয়েছে। ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়ছে শিবিরের ভেতর।

যুদ্ধবিরতির আহ্বানের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোট : গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান নিয়ে শুক্রবার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, যা ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করা হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘ সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ প্রয়োগের বিরল পদক্ষেপ নেওয়ার পর এই পদক্ষেপ এলো। এই অনুচ্ছেদ জাতিসংঘ মহাসচিবকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য হুমকি হতে পারে’ এমন যে কোনো বিষয় কাউন্সিলের নজরে আনার অনুমতি দেয়। কয়েক দশক ধরে এই ভূমিকা কেউ পালন করেনি। বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে গুতেরেস বলেন, ইসরাইল ও গাজার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিদ্যমান হুমকিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে ঐক্য খুঁজে বের করার এটি পঞ্চম প্রচেষ্টা হবে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উপস্থাপিত আগের চারটি খসড়া প্রস্তাব নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

গাজার পর বৈরুতকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার হুমকি নেতানিয়াহুর : লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহ যদি হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধের মধ্যে নতুন কোনো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে তাহলে বৈরুত ও দক্ষিণ লেবানন অঞ্চলে গাজা ও খান ইউনুসের মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর পরিদর্শনকালে হিজবুল্লাহ ও লেবাননের প্রতি এই হুমকি উচ্চারণ করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, যদি হিজবুল্লাহ ইসরাইলকে নতুন আরেকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে বাধ্য করে, তবে তা নিজ হাতে বৈরুত ও দক্ষিণ লেবাননকে গাজা ও খান ইউনুসে (ধ্বংসস্তূপে) পরিণত করবে। কারণ এটি এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এর আগে একই হুমকি দেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। বলেছেন, প্রয়োজনে লেবাননের রাজধানী বৈরুতকেও গাজায় পরিণত করা হবে অর্থাৎ গাজার মতো বিধ্বস্ত অঞ্চলে পরিণত করা হবে।

কিউএনবি/অনিমা/০৮ ডিসেম্বর ২০২৩/রাত ১০:২৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit