মোঃ সালাহউদ্দিন আহমেদ ,নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি : নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের মাথরা গ্রামে বহুদিন পর অনুষ্ঠিত হলো গ্রামীন পুরনো সংস্কৃতির ঐতিহ্য গাজীর গীত। উৎসবমুখর পরিবেশে শিশু কিশোর বয়োবৃদ্ধ ও গ্রামের মানুষের অংশ গ্রহণে বুধবার রাত নয়টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত মাথরা গ্রামের শামসুল মিয়ার ছেলে কাজল মিয়ার বাড়ির উঠনে চলে মোতালেব ও খোরশেদ মিয়ার দলের পরিবেশনে এই গাজীর গীত।
কালের প্রবাহে অযত্নে অবহেলায় ক্রমশ লোকচক্ষুর অন্তরালে হারিয়ে যাচ্ছে “গাজীর গীত”। গাজির গীতের শিল্পরস কৃত্য নাট্যের সীমা অতিক্রম করে আধুনিক শ্রোতাকে ধর্মযুক্ত মানবীয়তার আহবান করে। বিয়ে কার্য সম্পন্ন, সন্তান লাভ, রোগব্যাধির নিরাময়, ব্যবসা-বানিজ্যে মুনাফা, অধিক ফসল প্রাপ্তি এরুপ মনবাসনা পুরনার্থে গাজীর গানের পালা দেয়া হয়। মাথায় পাগড়ী পরে দলনেতা হাত পা দুলিয়ে ঘুরে ঘুরে গান পরিবেশের সময় ঢোলক বাঁশীবাদক ছাড়াও দোহারী থাকে ৪/৫ জন ।
প্রথমে আসর বন্দনা এরপর গাজীর জন্মবৃত্তান্ত, বিশালাকৃতির দৈত্য, রাক্ষসের সাথে ভয়ংকর যুদ্ধের বর্ননা, নানা বিপদ থেক মুক্ত করে পূণ্যবাণ ভক্ত সওদাগরের নৌকা বহর রক্ষা এসব বর্ণনা এমনভাবে উপস্থাপন করে যে দর্শক শ্রোতারা মুগ্ধতায় আত্মাভরে। ধর্ম আসক্ত ও সম্প্রীতির বাণী মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেয় এই গাজীর গান।এলাকার প্রবীণরা আলাপে বললেন, গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকেও নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় মূলত শীতের রাতে বাড়ির উঠানে গাজীর গানের আসর বসত। ছেলেসন্তানের খতনার মতো অনুষ্ঠান বা মানত হিসেবে গাজীর গানের আসর বসত বেশি। গত এক দশকের মতো সময় ধরে এ অঞ্চলে ‘গাজী-কালুর পালাগান’ অনেক কমে গেছে। যে শিল্পীরা টিকে আছেন, তাঁদের বিচরণ মূলত গ্রামে। এখনো মাঝেমধ্যে গাজীর গানের আসর বসে কালের বিবর্তনে গাজীর গীত হারিয়ে যেতে বসায় এর শিল্পীরাও হারিয়ে যাচ্ছেন।
কিউএনবি/অনিমা/৩০ নভেম্বর ২০২৩,/দুপুর ১:২৫