আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এদিকে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে মেনেনডেজের বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অন্ত তিনজন সিনেটর তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন মেনেনডেজ।
প্রবীণ রাজনীতিক (৬৯) বব মেনেনডেজ নিউ জার্সির সিনেটর। ২০০৬ সাল থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। সম্প্রতি আবারও তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী র্যাবের বিষয়েও কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়েছিলেন মেনেনডেজ?
অভিযোগে বলা হয়, মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী নাদিন আর্সলানিয়ান মেনেনডেজ নিউ জার্সির তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নগদ অর্থ, সোনা, দামি গাড়ি ও একটি বাড়ির বন্ধকের জন্য ঘুষ নিয়েছেন। কৌঁসুলিদের অভিযোগ, তারা গোপনে প্রভাব খাটিয়ে মিসরীয় সরকারকে সহায়তা এবং তিন ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা দিতে ঘুষ নিয়েছিলেন। অভিযোগ ওঠার পরই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
তদন্ত শুরুর পর কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যান বব মেনেনডেজ। এরপর সিনেটর পদ ছাড়ার দাবিও উঠেছে। এর মধ্যেই গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হন।
এদিন প্রকাশ করা ৩৯ পাতার অভিযোগে বলা হয়, মেনেনডেজের রাজনৈতিক অবস্থান ও ক্ষমতা তাকে এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়াতে উৎসাহিত করেছে। মেনেনডেজের বিরুদ্ধে তিনটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। যার একটি হচ্ছে ঘুষের ষড়যন্ত্রের। এই ষড়যন্ত্রে তার স্ত্রী নাদিনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নিউ জার্সির তিন ব্যবসায়ী ওয়ায়েল হানা, হোসে উরিবে ও ফ্রেড ডাইবস নামক তিন ব্যক্তিও আছে।
তবে নাদিন মেনেনডেজের একজন আইনজীবী বলেন, যে তিনি এ সকল অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন এবং ফেডারেলের এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বলেও জানিয়েছেন। জানা গেছে, এই মামলায় বব মেনেনডেজ ও অন্যান্য আসামীরা আগামী বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে আদালতে হাজির হবেন।
এছাড়া এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মার্কিন সিনেটর হিসেবে মেনেনডেজের ক্ষমতা ব্যবহার করে মিশরের সাথে একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগতভাবে লাভবান করার এবং এ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষি বিভাগকে চাপ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে উদ্ধার নগদ ৫ লাখ ডলার
অভিযোগ অনুযায়ী, তদন্তকারী কৌঁসুলিরা ২০২২ সালে মেনেনডেজের বাড়ি ও সেফ ডিপোজিট বাক্সে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে প্রায় ৫ লাখ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। কৌঁসুলিরা বলছেন, কিছু খামে ওই সব ব্যবসায়ীর আঙুলের ছাপ বা ডিএনএ পাওয়া গেছে যাদের কাছ থেকে সিনেটরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তকারীরা মেনেনডেজের গ্যারেজে পার্ক করা একটি বিলাসবহুল গাড়িও খুঁজে পান। গাড়িটি তিন ব্যবসায়ীর একজন হোসে উরিবে মেনেনডেজকে দিয়েছিলেন। সেই সাথে বাড়ি থেকে অন্যান্য ব্যবসায়িক পরিচিতিসহ সোনার বারও খুঁজে পান কৌঁসুলিরা।
বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণাবারবার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠা মেনেনডেজ বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত সমালোচিত আরও নানা কারণে। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে আরও সাত সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় নেমেছিলেন বব।
সে সময়ের ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র কাছে বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
মেনেনডেজ ও তার সহকর্মীরা দাবি করেছিলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত র্যাব চারশ মানুষকে বিচারহীন হত্যার শিকার করেছে। গুম, খুন মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ তুলে র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছিলেন বব মেনেনডেজ।
তবে এসব দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিলেও চিঠিতে অভিযোগের সপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি মেনেনডেজ। পর্যবেক্ষকদের কারো কারো ধারণা, বৈদেশিক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে মেনেনডেজ সে সময়ের মার্কিন সরকারের প্রভাবশালীদের দিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, বব নিজের পদের প্রভাব খাটিয়ে মিশরীয় সরকারকে সহায়তায় দেয়া, কিংবা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠা ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়তো কারো কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন তিনি। তবে মেনেনডেজ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে আদালতেই। আইনি প্রক্রিয়ায় হয়তো বের হয়ে আসতে পারে থলের বিড়াল।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৪:২১