বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৯ অপরাহ্ন

আলোচনায় খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৩২ Time View

ডেস্কনিউজঃ দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত জটিল’ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। মাঝেমধ্যেই প্রয়োজন পড়ছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সাপোর্টের।

মেডিকেল বোর্ড তার পরিবারকে জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে লিভার প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্লান্ট) করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিএনপি ও তার পরিবার। নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে দলটি।

আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে আর কিছু করার নেই। তবে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আইন পরিবর্তনে কোনো বাধা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক  বলেন, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার অনুমতি চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার আবেদন করেছেন। সরকারের মনোভাব যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য দরকার হলে আবারও আবেদন করা হবে। মানবিক বিবেচনায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিলে যুক্তরাজ্য অথবা জার্মান নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী তার পরিবার।

ওই নীতিনির্ধারক আরও জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠানো আবেদনের শেষাংশে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার্থে ও তার শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাইরে ‘অ্যাডভান্স মেডিকেল সেন্টারে’ চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। এমতাবস্থায়, সব শর্ত শিথিলপূর্বক তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি এবং বিদেশ গমনের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে সোমবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের আর কিছু করার নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্ত যুক্তভাবে তার সাজা স্থগিত রেখে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। এখন আইনের যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় তাহলে খালেদা জিয়াকে দেওয়া শর্তযুক্ত মুক্তি আগে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে আগের অবস্থায় যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আবেদন সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে করা যায় না। সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। আইন মোতাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামতের জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়েই বিদেশ যাওয়ার আবেদন করতে হবে। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে হলে তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে। তখন আগের আদেশ বাতিল হয়ে যাবে। আদেশ বাতিল হয়ে গেলে তিনি (খালেদা জিয়া) বাইরে থাকতে পারবেন না।

তবে ড. শাহদীন মালিক  বলেন, ‘৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত পরিবর্তনে আইনগত কোনো বাধা নেই। সরকার বেশ কয়েকবার তার কারামুক্তির মেয়াদ বর্ধিত করেছে। অর্থাৎ শর্ত পরিবর্তন করেছে। অতএব বিদেশে চিকিৎসার জন্য নির্বাহী আদেশে যে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় থাকবেন এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এখানে ঢাকা শব্দটা বাদ দিয়ে নতুন আদেশ জারি করতে আমি আইনগত কোনো বাধা দেখি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর যে ব্যাখ্যা তাকে (খালেদা জিয়া) জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এই ব্যাখ্যা আইনের যৌক্তিক ব্যাখ্যা বলে আমার কাছে মনে হয় না।’

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে আবেদন করার কথা বলে সরকার সময়ক্ষেপণ করে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে আদালতের আদেশের প্রয়োজন নেই। সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে অস্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়েছেন। নির্বাহী আদেশেই তাকে বিদেশ পাঠাতে পারেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন করোনা মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রথমটি হলো তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

গত ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিনে খালেদা জিয়ার লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, কিডনির কর্মক্ষমতা কিছু কমতে থাকায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। যে কারণে কয়েকবার তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, লাঞ্চসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কামুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড তার রিকমেন্ডেশনে বলেছে।

এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। ৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।

কিউএনবি/বিপুল/২৫.০৫.২০২৩/ রাত ১০.৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit