স্পোর্টস ডেস্ক : ঘটনাটা ২০০৯ সালের। ক্যাপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অতিরিক্ত একজন ক্রিকেটারকে মাঠে নামায় স্বাগতিকরা। তিনি আবার স্কোয়াডে ছিলেন না। তবে টেস্ট ক্রিকেটে চোটাক্রান্ত হলে স্কোয়াডের বাইরে থেকেও একজনকে নামানো যায়। যেভাবে ইংল্যান্ডের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেমেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রবিন দাস। আর সেদিন প্রোটিয়াদের হয়ে নামতে দেখা গিয়েছিল সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটকে। করেছিলেন একটি রানআউটও।
সাদা পোশাকের ক্রিকেট তো বটেই, দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়েও সেটাই তার প্রথম ও শেষবার নামা। তারপর আর কখনই তাকে দেখা যায়নি জাতীয় দলের আশপাশে। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎই নতুন করে আলোচনায় তার নাম। কারণ সেদিনের সেই ২১ বছর বয়সী অতিরিক্ত ফিল্ডারটি ১৪ বছর পর ৩৫ বছর বয়সে পেয়েছেন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। তবে সেটা দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, নেদারল্যান্ডসের হয়ে বিশ্বকাপে মাতাবেন তিনি।
বুড়ো আনকোরা ক্রিকেটারটার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কিন্তু ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিল। ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময় তিনি অসাধারণ দুটি ক্যাচ নিয়েছিলেন। যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাতে সেরা একজন ফিল্ডার হিসেবে সবার নজর কেড়েছিলেন। ইউটিউবে তার ক্যাচের শিরোনাম হয়েছিল ‘ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্যাচ’ হিসেবে। এঙ্গেলব্রেখটের অলরাউন্ডার পরিচয়টাকেও ছাপিয়ে যে ক্যাচ তাকে সেরা একজন ফিল্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কেটেছে সময় কেটেছে কেপ কোবরাসে। পাশাপাশি প্রাদেশিক ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিয়মিত খেলেছেন তিনি। খেলেছেন সাউথ ওয়েস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন প্রোভিন্সের হয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলতেন তিনি। এছাড়া কোবরাসের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রাদেশিক এই দলটিতে তার একাদশে জায়গাও নিয়মিত। সেখানে দেখা গেছে তিনি একজন স্টাইলিস্ট ডানহাতি ব্যাটসম্যান। চারদিনের ম্যাচে তার ক্রিজে মাটি আঁকড়ে ধরে থাকার সামর্থ্য লক্ষ্য করা গেছে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৪ ম্যাচের ৮৫ ইনিংসে তার গড় ৪০-এর বেশি। ফিফটি আছে ১০টি ও ৭টি আছে সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ২১৪ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস। করেছেন ৩ হাজার ৬৭ রান। এ ছাড়া লিস্ট এ ক্রিকেটে ৫৮ ম্যাচের ৪৬ ইনিংসে প্রায় ৪৬ গড়ে তার রান ১ হাজার ২৭৫ রান। সর্বোচ্চ ৯৭ রানের অপরাজিত ইনিংস। আছে ১০টি ফিফটি। ৪৫ টি-টোয়েন্টি খেলে প্রায় ২৪ গড়ে ৫৬৮ রান। সর্বোচ্চ আছে ৫৮ রানের ইনিংস।
শুধু কি ব্যাট হাতে! বল হাতেও তিনি দারুণ কার্যকরী। পরিসংখ্যান অন্তত সেই তথ্যই দেয়। প্রথম শ্রেণিতে তার ঝুলিতে আছে ৩৭ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট আছে একবারই। ৭৪ রান খরচা করে পেয়েছিলেন। এ ছাড়া লিস্ট এ ক্রিকেটে ৪১ ও স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে তার ঝুলিতে আছে ৩১ উইকেট।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্স আহামরি কিছু নয়। যে কারণে তার জায়গা হয়নি জাতীয় দলে। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিটা আর জড়াতেই পারলেন না গায়ে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এঙ্গেলব্রেখটের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। পরে তার বোলিং অবৈধ ঘোষণা করা হয়। অ্যাকশন শুধরে পরের বছর সেটা বৈধ করে ক্রিকেটে ফিরেন। কিন্তু সেই মৌসুমে আর কেপ কোবরাসের দলে তাকে নেওয়া হয়নি। নিজেই চুক্তি থেকে সরে গিয়েছিলেন। কারণ প্রাদেশিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলতে চান বলে। তাই দলটির স্কোয়াড থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালেই তাকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের শেষবার দেখা গিয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে জায়গা কুড়াতে না পারা এঙ্গেলব্রেখট এই বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি প্রোভিডেন্স হোটেলে বিজনেস ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। তিনি কেপটাউনে স্টেলেনবোশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সময়ই পড়াশোনা করেন।
চাকরিতে যোগদানের পর নিজেও হয়তো ভেবেছিলেন ব্যাট-প্যাড তুলে রাখবেন। কিন্তু জীবনে আসলে শেষ বলে কিছু নেই। আর সেটাই প্রমাণ করলেন তিনি। ৩৫তম জন্মদিনের সাত দিন আগে তিনি জাতীয় দলে ডাক পেলেন প্রথমবারের মতো। সেটাও আবার বিশ্বকাপের স্কোয়াডে।
জোহানাসবার্গে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার একজন অফ স্পিনার ও ডান হাতি ব্যাটসম্যান। সম্প্রতি ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে একটি ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। যেখানে তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস, ব্যাটসম্যান ম্যাক্স ও’দাউ; ও নিদামানরু তেজা তার সঙ্গী ছিলেন। সেখানে তার পারফরম্যান্স মন জুগিয়েছে কোচের। তাতে সুযোগ মিলেছে ডাচদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।
ডাচদের কোচের গুরু দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। তিনি নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকান। এই কোচ তার বিষয়ে জানাতে গিয়ে বলেন, ‘কোবরাসে আমি তাকে কিছুদিন কোচিং করিয়েছিলাম। তারপর সে খেলা ছেড়ে চলে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসে। সেখানেই সে স্থানীয় পর্যায়ে খেলছিল। আমাদের অধীনেই ছিল সে। এক মাস আগে আইসিসির কাছে তার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমাদের সবুজ সংকেত দেয়। তাই তাকে নিয়েই বিশ্বকাপের পরিকল্পনা সাজিয়েছি আমরা।’
কিউএনবি/আয়শা/০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ৮:০০