ডেস্ক নিউজ : অনলাইনে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।
মামলার পর গত বছরের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনলাইনের যে অনুষ্ঠানে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ,সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন খাদিজা। গ্রেপ্তারের এক বছরেও তার জামিন হয় নি।
জানা যায়, খাদিজার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুইটি মামলার একটির বাদী নিউমার্কেট থানার এসআই খাইরুল ইসলাম এবং অন্যটির কলাবাগান থানার এসআই আরিফ হোসেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান বাদীরা। ভিডিওতে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশ বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন ।
খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্কুল জীবন থেকে তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি বিতর্ক করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও সেই ধারাবাহিকতা ছিল। এ ছাড়া ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন। তার একটি অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেন। সেটাই খাদিজার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
খাদিজার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, খাদিজা গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৪ এবং ২০ ধারা অনুসারে তাই তার বিচার হওয়ার কথা শিশু আদালতে। এ ছাড়া অল্পবয়স্ক, নারী ও কিডনি রোগী হিসেবে এমনিতেও তার জামিন পাওয়ার কথা। মামলা ২০২০ সালে করা হলেও খাদিজাকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০২২ সালের আগস্টে। এরপর বেশ কয়েকবার জামিন আবেদন করা হলেও নাকচ করেন।
এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জামিন পান। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সেই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করলে জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ জামিন আবেদন শুনানি চার মাস স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখেন।
খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন বলেন ,আমার মেয়ে নির্দোষ। অনুষ্ঠানে খাদিজা সঞ্চালনা করে, সেখানে অতিথি সরকার বিরোধী বক্তব্য দিলে এর দায় খাদিজার ওপর চাপানো হবে কেন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি বলেন, আমার মেয়ে জেলখানায় ভালো নেই। তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পড়াশুনা শেষ করার সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
খাদিজার বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন ,আমার বোন কিডনি ও মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছে। তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো না। দেখা করতে গেলে ঔষধ দিয়ে আসতে হয় ।খাদিজা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না। আমরা খাদিজার চিকিৎসার জন্য দ্রুত জামিন চাই। কারাগারে দেখা করতে গেলে খাদিজা বারবার তার শিক্ষাজীবনে ফেরার আকুতি জানিয়েছে।
তিনি বলেন , বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে খাদিজার ব্যাপারে সহযোগিতা চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ধমক দিয়ে বের করে দেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম অসহযোগিতা প্রত্যাশা করি নি।আমার বোন নির্দোষ।সরকারের কাছে তার জামিনসহ দ্রুত এই নিপীড়নমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানাই।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:০০