সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:১৭ অপরাহ্ন

চোখে নানা ধরনের ছানি ও চিকিৎসায় লেন্স

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩
  • ১০৪ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : এক চোখে ছানি পড়লে অন্য চোখেও ছানি পড়বে বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে এক চোখ থেকে অন্য চোখে ছানি ছড়ায় না। চোখের ভেতরের লেন্স অস্বচ্ছ বা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়াই চোখের ছানি রোগ। ছানির ইংরেজি নাম ক্যাটার্যাক্ট। বয়স্ক মানুষের এটি একটি সাধারণ সমস্যা। ছানিতে চোখের ওপর একটা সাদা পর্দা পড়ে বলে অনেকে ধারণা করলেও বিষয়টি আসলে তা নয়। ছানি শুধুই স্বচ্ছ লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া।

লেন্স যেভাবে কাজ করে

চোখের লেন্সের বেশির ভাগই (প্রায় ৬৫ শতাংশ) জলীয় পদার্থ। বাকি ৩৫ শতাংশ প্রোটিন ও লবণ জাতীয় পদার্থ। স্বাভাবিক অবস্থায় লেন্স পরিষ্কার ও স্বচ্ছ থাকে।

কোনো বস্তু থেকে যখন আলো এসে চোখে পড়ে, তখন সেই আলো চোখের একেবারে সামনের স্বচ্ছ কর্নিয়ার ভেতর দিয়ে চোখের মধ্যে প্রবেশ করে। তারপর স্বচ্ছ লেন্সের ভেতর দিয়ে আলো চলে যায় চোখের পেছনে রেটিনায়। রেটিনায় বস্তুটির একটি ছবি বা প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। আর সেই বার্তা বৈদ্যুতিক স্পন্দনের আকারে যখন মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছে তখনই বস্তুটি স্পষ্ট দেখা যায়।

চোখের কর্নিয়া আর লেন্স রেটিনার ওপর আলোর ফোকাস করে ছবি তৈরি করে। লেন্সটি যদি স্বচ্ছ হয় তাহলে সহজেই এর ভেতর দিয়ে আলো গিয়ে রেটিনায় পড়তে পারে। কোনো কারণে লেন্স মেঘাচ্ছন্নর মতো হলে অর্থাৎ তার স্বচ্ছতা কমে গেলে ভেতর দিয়ে বেশি আলো প্রবেশ করতে পারে না। তখন রেটিনায় ছবি স্পষ্ট হয় না। যদি একেবারেই আলো যেতে না পারে, তাহলে কোনো ছবিও তৈরি করে না। ওই সময় মানুষ অন্ধত্ববরণ করে।

উপসর্গ

ছানির প্রধান উপসর্গ চোখে ঝাপসা দেখা। ছানি যত ছড়ায় আর যত ঘন হয়, চোখের দৃষ্টি তত বেশি ঝাপসা হয়। ছানি পড়া রোগীরা প্রথম দিকে একটি জিনিসকে দুটি (ডবল) দেখে। সবকিছু মনে হয় জোড়া জোড়া বা একাধিক। একটু বেশি আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়, বেশি আলো সহ্য করতে কষ্ট হয়। ছানির শেষ পর্যায়ে চোখের কালো অংশ সাদা দেখায়।

ছানির কারণ

কেন ছানি হয় বা চোখের লেন্স অস্বচ্ছ হয়—বিজ্ঞানীরা এখনো এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে বয়সের ভারে, আঘাতে, চোখের ও দেহের অন্য কোনো অসুখে এবং বংশগত বা জন্মগত ত্রুটির কারণেও ছানি পড়তে পারে বা দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন আসতে পারে।

ধরন

চোখে বিভিন্ন ধরনের ছানি হয়। যেমন- বার্ধক্যজনিত ছানি : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বয়স হলে চোখে ছানি পড়ে। অর্থাৎ বয়স হলে প্রাকৃতিক নিয়মে যেমন চুল পাকে, তেমনি চোখে ছানিও পড়ে। বয়সের স্বাভাবিক ক্রিয়ায় চোখের লেন্সের ভেতরের জলীয় ও স্বচ্ছ পদার্থ শক্ত ও অস্বচ্ছ হয়ে যায়। এটাই বার্ধক্যজনিত ছানি, যা সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর বেশি দেখা যায়।

জন্মগত ছানি

গর্ভকালীন মায়ের অপুষ্টি, জীবাণুগত প্রদাহ (যেমন রুবেলা ভাইরাস বা জার্মান মজেলসের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ), অক্সিজেন স্বল্পতা ইত্যাদির জন্য চোখে ছানি নিয়ে নবজাতক জন্মাতে পারে। কাজেই গর্ভাবস্থার প্রথম সাত মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন প্রসূতি মা রুবেলা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এই ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর দেহে সঞ্চারিত হতে পারে। ফলে শিশু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে। এসব ত্রুটির মধ্যে ছানি একটি। একে জন্মগত ছানি বা কনজেনিটাল ক্যাটার্যাক্ট বলে।

আঘাতজনিত ছানি
কোনো কারণে চোখে ক্ষত সৃষ্টি হলে, জোরে আঘাত লাগলে, খোঁচা লেগে চোখ ফুটো হয়ে লেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে ছানি পড়তে পারে। এ ছাড়া চোখে কোনো রাসায়নিক পদার্থ লেগে চোখ পুড়ে লেন্সের ক্ষতি হলেও ছানি পড়তে পারে। প্রচণ্ড- গরমেও অনেক সময় চোখে ছানি পড়ে। সানগ্লাস না পরে বেশিক্ষণ ঘরের বাইরে থাকায় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে চোখের লেন্স নষ্ট হয়েও ছানি পড়তে পারে। এগুলোকে আঘাতজনিত বা ট্রম্যাটিক ক্যাটার্যাক্ট বলে।

রোগজনিত ছানি

কোনো অসুখ বা সংক্রমণে চোখে ছানি পড়া খুব সাধারণ ব্যাপার। যেমন—ডায়াবেটিস গ্যালাকটেসিমিয়া ও হাইপারথাইরয়েডিজম। এসব রোগের কারণে ছানি পড়লে তাকে মেটাবলিক ক্যাটার্যাক্ট বলে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসজনিত চোখের ছানি বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই চোখেই ছানি হয়, এক চোখে কম হয়। অর্থাৎ এক চোখে ছানি পড়লে অন্য চোখেও ছানি পড়বে বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে এক চোখ থেকে অন্য চোখে ছানি ছড়ায় না। দুই চোখেই আলাদাভাবে ছানি পড়ে।

চিকিৎসা

প্রথমেই জানতে হবে, ওষুধে ছানি পুরোপুরি সারে না। অর্থাৎ এমন কোনো ওষুধ নেই যা দিয়ে চোখের ছানি সারানো যায়। খাদ্য বা ব্যায়ামেরও কোনো ভূমিকা নেই। ছানির একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন বা শল্যচিকিৎসা। এর মাধ্যমে অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া ঘোলাটে লেন্সটি বের করে ফেলতে হয়। ওই স্থানে কৃত্রিম লেন্স দেওয়া হয়। তখন দেখতে আর অসুবিধা হয় না। সেই কৃত্রিম লেন্স ছানি চশমা, কন্টাক্ট লেন্স কিংবা ইন্ট্রাঅকুলার লেন্সের যেকোনো একটি হতে পারে।

অপারেশন খুব সাধারণ

ছানি অপারেশনের একাধিক পদ্ধতি আছে। এর উদ্দেশ্য চোখের ভেতরের ঘোলাটে লেন্স বাদ দেওয়া। চোখ কেটে যেমন লেন্স তুলে বাদ দেওয়া যেতে পারে, তেমনি ক্রায়োপ্রোব দিয়েও লেন্সটা তুলে ফেলা যেতে পারে। কখনো আলট্রাসনিক ওয়েভ দিয়ে লেন্সটি ভেঙে তারপর ছোট্ট একটা নলের মধ্য দিয়ে সেই গলিত পদার্থ বাইরে টেনে আনা হয়।

শিশুদের ছানি অপারেশন আরও সহজ। কৈশোরে চোখের পেশি খুবই নরম থাকে। সে জন্য চোখের সামান্য একটু অংশ কেটে লেন্সের পদার্থগুলো সহজেই শোষণ করে আনা হয়। এ জন্য ছানি অপারেশন এখন খুবই সাধারণ বিষয়। হাসপাতালেও তেমন থাকার দরকার হয় না। তবে রোগের উপসর্গ চিহ্নিত করা মাত্রই একজন চক্ষু চিকিৎসকের সহায়তায় সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা উচিত।

লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

কিউএনবি/অনিমা/০১  অগাস্ট ২০২৩,/বিকাল ৪:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit