শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

আমার কন্যাকে যেন প্রধানমন্ত্রী দেখে রাখেন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩
  • ১৮৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : হাসপাতালের বারান্দায় টানা কান্না করছে ৭ মাসের কন্যাশিশু লামিয়া। আর মা রিমা আক্তার বারান্দায় হা-হুতাশ করছেন। একবার নার্স, আবার ডাক্তারের কাছে দৌড়াচ্ছেন। স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পোস্টঅপারেটিভ  (পিওডব্লিউ) কেয়ারে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। 

ছোট্ট কন্যাশিশু জানে না তার বাবা মোব্বাশের (২৮) জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। হয়তো একদিন জানবে বিনা অপরাধে তার বাবাকে রাজনৈতিক সমাবেশে আওয়ামী লীগের দু,গ্রুপে সংঘর্ষে লিপ্ত কোন নেতাকর্মী ছুরিকাঘাত করেছেন। যে ছুরিকাঘাতে বাবার নাড়িভূড়ি বের হয়ে পড়েছিল। বাবাকে কাছে পেতে কন্যােশিশুটির কি যে আকুতি- বলছিলেন সিনিয়র কয়েকজন নার্স। 

তাদের ভাষ্য, শিশুটির বাবা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। ওখানে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ছোট্ট শিশুটি ছটফট করছে বাবার কাছে যেতে। তারা নিরুপায়, শিশুর আকুতি পূরণ করতে পারছে না। দায়িত্বে থাকা এক নার্সের চোখের কোনো তখন জল টলমল করছিল।

মোব্বাশের রাজধানীর আরামবাগ এলাকায় কুলির কাজ করেন। অর্থাৎ মানুষের কেনা বাজার মাথায় করে গাড়ি, রিকশায় তুলে দেন। বিনিময়ে ২০ টাকা ৫০ টাকা পান। শুক্রবার বিকালে বাবার জন্য বাটন মোবাইল কিনতে গিয়েছিল পল্টনের গুলিস্তান মার্কেটে।  ওই সময় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে নিজ দলের দু’গ্রুপের মারামারিতে ছুরিকাঘাতে গুরুতরর আহত হন পথচারী মোব্বাশের। 

আঘাতে পেটের নাড়িভূড়ি বেরিয়ে যায়, এ অবস্থায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ গেট বরাবর মাটিতে পড়ে ছিলেন মোব্বাশের। পথচারী এবং পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়, তখন সন্ধ্যাট সোয়া ৬টা। একই সংঘর্ষে গুরুতর আহত আরও ৪ জনকে আনা হয় হাসপাতালে। ওই সময় অজ্ঞাতনামা এক যুবকের মৃত্যু হয়। রাতেই ভর্তি করা হয় মোব্বাশেরকে। অজ্ঞাতনামা লাশের নামটুকু জানা গেছে মধ্যরাতে, তার নাম রেজাউল। তার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। তার ঠিকানা জানা যায়নি। 

এদিকে শনিবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালটির ১০৫ নম্বর পিওডব্লিউ  ৭ নং বেডে মোব্বাশেরকে রাখা হয়েছে। তার পেটে অন্তত ১৯টি সেলাই করা হয়েছে। তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে।  পাশে যেতেই চোখে পড়ে, অচেতন অবস্থায় দুচোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। বিড়বিড় করে কি যেন বলতে চাচ্ছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে থাকা মোব্বাশেরের বাবা বজলুর রশিদ কান্না করছিলেন। বাবার কান্নায় মোব্বাশের চোখে মেলে। বলতে থাকেন, ‘আমার কন্যাকে এনে দাও। আমি কন্যাকে দেখতে চাই। আমার কিছু হলে, মরে গেলে তাকে কে দেখবে। আমার কলিজার কী হবে। আমি কি বাঁচব, নাকি মরে যাব। আমি মরে গেলে আমার মেয়েকে যেন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) দেখে রাখেন। আমার মেয়ে আমার সব। আশা ছিল, কুলির কাজ করেই মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দেব’ এমনটা বলতে কাঁদতে থাকেন মোব্বাশের। ওই সময় এই প্রতিবেদক বিশেষ এ ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে পড়েন। 

গুরুতর আহত মোবাশ্বের
গুরুতর আহত মোবাশ্বের

তখন দুপুর ১টা বাজে। বারান্দায় পড়ে স্বামীর জন্য  প্রার্থনা করছিলেন স্ত্রী রিমা আক্তার। বুক থাপড়িয়ে বলছিলেন, তার স্বামী ভালো মানুষ, নিরীহ মানুষ। রাজধানীতে দিনমজুরের কাজ করে আমাদের সংসার চালান। স্বামীকে যেন সবোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করা হয়। স্বামীকে যারা মৃত্যুর মুখে ফেলছে তাদের বিচার করা হোক। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। 

রিমার কান্না থামাতে পারছে না মা মনোয়ারা বেগম। সঙ্গে থাকা মা জানান, মেয়েকে শান্ত্বনা দিতে পারেন না। ছোট্ট নাতি ছটফট করছে। মেয়ের জামাইয়ের কিছু হলে, মেয়ে নাবতি কী করে বাঁচবে। রিমা দু,হাত তুলে বলছিল, ‘আমার স্বামীকে তুমি বাঁচিয়ে রাখ। যারা আমার স্বামীকে মেরেছে তাদের ধ্বংস কর। আমার স্বামী আমার কাছে ফেরেস্তার মতো।’

পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছিল মোব্বাশের বাবা বজলুর রশিদ। বললেন, তার ছেলের কী অপরাধ ছিল। ছেলেকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ছেলের অবস্থা ভালো নেই। এ হাসপাতালেই (ঢামেক হাসপাতাল) আরেক ছেলে মাহফুজ (১৭) গত বছর মারা গেছে। ওই ছেলেও দিন মজুরের কাজ করতো। উঁচু সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে আহত হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।  এখন মৃত্যুর সঙ্গে বড় ছেলে লড়ছে। 

বাবা বজলুর রশিদ জানান, তিন ছেলে নিয়ে আরামবাগ এলাকায় ৬ হাজার টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন। সবাই দিনমজুরের কাজ করেন। নিজ হাতে সন্তানদের রান্না করে খাওয়ান। বললেন, শুক্রবার তার জন্য। একটি মোবাইল কিনতে গুলিস্তান গিয়েছিল ছেলে মোব্বাশের। দেশে মানুষের বুঝি নিরাপত্তা নেই। সাধারণ মানুষ কেন মরবে, রাজনীতির কারণে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কেন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাবে? 

রাজনৈতিক দলের নেতকর্মীদের উদ্দেশ করে বাবা বজলুর রশিদ বলেন, যার যায় সে বুঝে। হাসপাতালে এসে দেখে যান, আমার ছেলে কী অবস্থা। আমার ছেলেকে আপনারা কী করেছেন। আমার ছেলে মারা গেলে আপনারা কী দায় নেবেন? আমরা গরীব, তাই কিছুই হবে না, এটাও জানি। তবে আল্লাহ নিশ্চয় ন্যা য় বিচারক। একদিন আপনাদের বিচার নিশ্চয় হবে। তখন আপনাদের পরিবার সদস্যেরাও এমন করে কাদঁবে। 

কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাঈদ বলেন, তার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে। আঘাতে নাড়িভূড়ি বের হয়েছিল। চিকিৎসা চলছে। অপারেশন করা হচ্ছে। 

কিউএনবি/অনিমা/২৯ জুলাই ২০২৩,/বিকাল ৩:০৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit