মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

তাপমাত্রা বাড়ায় মশার উপদ্রব ও ম্যালেরিয়া বাড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞানীরা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩
  • ১০৪ Time View

স্বাস্থ্য ডেস্ক : গবেষকরা লক্ষ করেছেন, যে বছরগুলোতে গরম বেশি পড়ে, ওই সময় মশার সংখ্যাও বেড়ে যায়। পৃথিবী যত উষ্ণ হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মশারা ধীরে ধীরে ওপরের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, অর্থাৎ ওপরের দিকে বাসা বাঁধছে। 

উঁচু জায়গায় ম্যালেরিয়া বহনকারী মশার বসবাসের উপযোগী তাপমাত্রার পরিসর দিন দিন বাড়ছে। দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উচ্চভূমি থেকে পূর্ব আফ্রিকার পাহাড়ি, জনবহুল অঞ্চলে এ ঘটনার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। 

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর ঢাল ও পূর্ব ইথিওপিয়ার পর্বতসহ যেসব অঞ্চল একসময় মশার বসবাসের অনুপযোগী ছিল না, ওসব অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ এখন নতুনভাবে ম্যালেরিয়ার সংস্পর্শে আসতে পারে।সাব-সাহারান আফ্রিকার ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনীষা কুলকার্নি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে বেশি উচ্চতার জায়গাগুলোর উষ্ণতা বাড়তে থাকলে মশারা পাহাড়ের ওপরেও টিকে থাকতে পারবে।

২০১৬ সালে মনীষার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সুউচ্চ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোতে ম্যালেরিয়া বহনকারী মশার আবাসস্থল মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার বেড়েছে। অন্যদিকে কম উচ্চতার জায়গাগুলোতে গরম এত বেড়েছে যে তা এ জাতীয় মশার বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। 

একই ধরনের ঘটনা অন্যত্রও পাওয়া গেছে। যেমন, ২০১৫ সালে গবেষকরা লক্ষ করেছেন, এভিয়ান ম্যালেরিয়া বহনকারী মশা ধীরে ধীরে তাদের বাসস্থান ওপরের দিকে, স্থানীয় হাওয়াইয়ান পাখির বাসার সমান উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ফলে পাখিগুলো আরও ওপরের দিকে বাসা বাঁধতে বাধ্য হয়। যেহেতু ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ৯৬ শতাংশই আফ্রিকায় হয়, তাই এ গবেষণার অধিকাংশই ওই অঞ্চলে হয়েছে।

মনীষা কুলকার্নি তানজানিয়া ও কেনিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি গবেষণা করেছেন। দেশ দুটির জনসংখ্যা বাড়ছে। ২০২১ সালে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় যত মৃত্যু হয়েছে, তার ৬ শতাংশ হয়েছে কেনিয়া ও তানজানিয়ায়।

২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ২৯ শতাংশ কমেছে। তবে বিশেষ করে আফ্রিকায় এখনও ম্যালেরিয়ায় অনেক মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ বিশ্ব ম্যালেরিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ সালে ২৪৭ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।

জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অভ পাবলিক হেলথের মশা বিশেষজ্ঞ ডগ নরিস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মশার বাসস্থানের সম্প্রসারণ বা পরিবর্তনের মধ্যে যোগসূত্র বাস্তব। উল্লেখ্য, তিনি এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না।

তবে ভবিষ্যতে মশার জনসংখ্যার এরকম স্থানান্তর মানুষের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় গোটা সাব-সাহারান আফ্রিকাজুড়ে মশার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে পতঙ্গগুলো প্রতি বছর তাদের বাসা ৬.৫ মিটার (প্রায় ২১ ফুট) করে উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছে।

নরিস বলেন, নিজেদের বাসস্থানের ব্যাপারে মশা অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। একেক ম্যালেরিয়া বহনকারী প্রজাতি একেক ধরনের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পছন্দ করে। মানুষ মশারি, কীটনাশক ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। 

নাইরোবিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অভ ইনসেক্ট ফিজিওলজি অ্যান্ড ইকোলজিতে ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেন জেরেমি হেরেন। তিনি বলেন, মশার বাসস্থান বাছাই করার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে, এমন প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। তবে ম্যালেরিয়া কীভাবে ছড়াবে, এখনই সেই পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

যেমন, কেনিয়ায় গবেষকরা মশার ম্যালেরিয়ায় ‘ব্যাপক পরিবর্তন’ লক্ষ করেছেন। হেরেন জানান, একসময় সর্বত্র পাওয়া যেত এমন একটি মশার প্রজাতি এখন দেশটিতে বলতে গেলে খুঁজেই পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, এই পরিবর্তনের কারণ সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বরং কীটনাশক মেশানো জাল।

তবে গরম পরিবেশে মশা সাধারণত দ্রুত সংখ্যায় বাড়ে বলে জানান নরিস।

শুধু তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই মশা সুবিধা পায় না। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন যে তীব্র আবহাওয়া দেখা দেয়, সেটিও মশার জন্য খুবই অনুকূল। 

বর্ষা যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন পানিতে বংশবিস্তারকারী মশারা বসবাসের জন্য আরও ভালো জায়গা খুঁজে পায়। আবার খরায় মশার এসব বাসস্থান শুকিয়ে গেলেও, মানুষ এ সময় কনটেইনারে পানি জমিয়ে রাখে, যা মশার বংশবিস্তারের জন্য আরও দারুণ জায়গা। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে কেনিয়ায় খরার সময় চিকনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই চিকনগুনিয়াও মশকবাহিত রোগ।

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকেও গবেষকরা দেখিয়েছেন, ইথিওপিয়ার পর্বতমালায় তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হারও কমে যায়।

 

আগে আবহাওয়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবকে অনেকটাই মন্থর করে দিত। এখন আর সেটি হচ্ছে না।

 

ইলিনয় ইউনিভার্সিটি আরবানা-চ্যাম্পেইনের গবেষক পামেলা মার্টিনেজ বলেন, তার দলের গবেষণায়ও উঠে এসেছে যে ম্যালেরিয়া ও তাপমাত্রার, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন মধ্যে সম্পর্ক আছে। তাদের গবেষণাটি ২০২১ সালে গবেষণা জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে। 

 

মার্টিনেজ বলেন, তারা দেখেছেন যে তাপমাত্রা কমে গেলে সার্বিকভাবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও কমে যায়। এ থেকেই প্রমাণ হয়, সংক্রমণের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে।

 

সূত্র : এপি, টিবিএস

কিউএনবি/অনিমা/২৩ জুলাই ২০২৩,/বিকাল ৪:০৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit