ডেস্ক নিউজ : ঢাকা শহরের ৭৩ শতাংশ ভবন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। এই অপরিকল্পিত ভবন কীভাবে ঝুঁকিমুক্ত করা যায় তার জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাজধানীর ভবনগুলো পরীক্ষা করা হবে। দ্রুত নগরায়ণ হলেও পরিকল্পিত উন্নয়নের যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে। নগর দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় প্রেক্ষিতে ঢাকা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে।
শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) কনফারেন্স হলে রাজউক, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম ও বিআইপি আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।
বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অধ্যক্ষ মো. ছালেহ উদ্দিন, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকো প্রতিনিধি।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান ও ড. মো. শাকিল আখতার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনুসারে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের ৮০ ভাগ জনসংখ্যা নগরে বসবাস করবে। তবে শঙ্কার বিষয় হলো বাংলাদেশের এই দ্রুত নগরায়ণ এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ঢাকার ওপর। বিবিএস ২০১১ মোতাবেক নগরে বসবাসরত জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ঢাকায় বসবাস করছে যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ড্যাপ অনুযায়ী ঢাকার জনঘনত্ব ৩০০-৮০০ একর, যা নগরটিকে করে তুলেছে অত্যান্ত ঘনবসতিপূর্ণ।
এছাড়া বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে নগরের ৭৩ শতাংশ অবকাঠামোই অপরিকল্পিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৫-১৮ শতাংশ ঢাকায় ঘটিত, যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ পুকুর জলাশয় ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি যে শহরের বাসিন্দা সেই সিলেট এক সময় পুকুরের শহর ছিল। সেখানেও এতো অপরিকল্পিত উন্নয়ন হয়েছে বলাই বাহুল্য।
তিনি বলেন, উন্নয়ন হয়েছে এখন সময় এসেছে টেকসই শহর, টেকসই নগরায়ণের দিকে নজর দেওয়ার। শহরে যারা বাস করেন তারা শুধু নিজের চিন্তাই করেন। বাংলাদেশেই একমাত্র প্রতিটি ভবনের পাশে ওয়াল দেওয়া। এটি উন্নত দেশগুলোতে নেই। এভাবে ভবনের চারপাশে ওয়াল দেওয়ার ফলে সড়কে প্রশস্থতা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যদি কোনো দুর্যোগ ঘটে তাহলে হেলিকপ্টার দিয়ে মোকাবিলা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই সময় এসেছে এসব ওয়াল সংস্কৃতি বন্ধ করা। পুকুর, খেলার মাঠ, পার্ক উদ্ধার করতে হবে। আর কোথাও একটি পুকুর যেন ধ্বংস না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব জায়গায় কঠোর হতে হবে বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
শহরের যানজট কমানোর জন্য সবার জন্য গাড়ি না দিয়ে গণপরিবহনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশেই এতো ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, রাজউক যে ড্যাপ প্রণয়ন করেছে। সেই ড্যাপের নির্দেশনা মানতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, শিগগিরই ঝুঁকি মানচিত্র প্রকাশ করা হবে। এই কাজটি করতে পারলে ভবনের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে ঝুঁকি মানচিত্র দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তিনি বলেন, নির্মাণাধীন ভবন সেটা যেন ঝুঁকিপূর্ণ না হয় সেজন্য বিএনবিসি নীতিমালা ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী নির্দেশনা মানতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধে যে ৭৩ শতাংশ ভবন প্ল্যান ছাড়া গড়ে উঠেছে এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্ধারণের জন্য তৃতীয় পক্ষ নিয়োগ করা হবে। সেখানে এই খাতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা থাকবেন। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২৫ জুলাই রাজউকে একটি সভা হবে। সেই সভায় চূড়ান্ত হবে। কোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে সেটি মজবুতকরণ করা হবে। সেই ব্যয় ভবনের মালিক ও প্রতিষ্ঠানকেই দিতে হবে। কোনো বাড়ির মালিক দিতে না পারলে সেটি কীভাবে হবে তাও নীতিমালায় থাকবে।
কিউএনবি/অনিমা/২২ জুলাই ২০২৩,/রাত ১১:৩২