শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন

পণ্য ও ডলারের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩
  • ৮৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হারে নিয়ন্ত্রণ আসছে না। বরং তা বেড়ে যাচ্ছে। এ দুই কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের ঘর থেকে বেড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। 

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশে মূল্যস্ফীতির হার সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে এ হার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠার পর থেকে আবার কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে তা ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ হার ৮ শতাংশের ঘরে; কিন্তু ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। মার্চ থেকে এ হার আবার বাড়তে শুরু করে।

ওই মাসে বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নামে। মে মাসে তা বেড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান নেয়; অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে ওঠে। জুনে সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নামে। অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি-এই পাঁচ মাস ৮ শতাংশের ঘরে থাকার পর মার্চ থেকে জুন-এই চার মাস ৯ শতাংশের ঘরে উঠেছে। আলোচ্য সময়ে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই এ হার বেড়েছে। 

গত বছরের মার্চ থেকে ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। এখনো বাড়ছে। এক বছরে ডলারের দাম বাড়ে ২৬ শতাংশ। এতে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি খরচ। একই সঙ্গে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ দুইয়ে মিলে মূল্যস্ফীতির হারে বাড়তি চাপ পড়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাবও মূল্যস্ফীতিতে রয়েছে। এগুলোর প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহণ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে পণ্যের দাম। বৈশ্বিক অস্থিরতায় পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাবেও পণ্যের দাম বাড়ছে।

সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দুই দেশের মধ্যে শস্য পরিবহণ চুক্তি হয়েছিল। এর মেয়াদ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এটি নতুন করে আর বাড়েনি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে গম, সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৈশ্বিকভাবে চালের উৎপাদন কম হওয়ায় এর দামও আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে। 

ইতোমধ্যে ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ চাল আমদানি কম করলেও গম, সয়াবিন তেল এগুলোর প্রায় সবটাই আমদানিনির্ভর। ফলে এগুলোর দাম বেড়ে ডলার বাজারে সংকট আরও প্রকট করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শিগগিরই মূল্যস্ফীতির যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শস্যচুক্তি বাতিল হওয়ায় এখন নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। এর প্রভাবে বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হবে, পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে। তখন মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ বাড়বে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে একটি বড় কারণ থাকে বাজারে টাকার প্রবাহ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে টাকার জোগান বৃদ্ধি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টাকার প্রবাহ বাড়েনি। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়ে বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের অর্থবছরে বেড়েছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টাকার প্রবাহ বাড়েনি। 

চলতি অর্থবছরেও এখনো টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, তা টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধিই নতুন করে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপের সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি আগের উপসর্গগুলো যেমন: জ্বালানি ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। 
আমদানি পণ্যের দাম বৈশ্বিকভাবে অনেক কমলেও দেশের বাজারে কমছে না, বরং বাড়ছে। যেসব পণ্যের আমদানি চাহিদার তুলনায় স্বাভাবিক রয়েছে, সেসব পণ্যের দামও বাড়ছে। আমদানি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দেশের পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপরও চাপ কমবে। 

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমার প্রভাব অনেক দেশের বাজারেই পড়তে শুরু করেছে। তারা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতির হার অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তা পারেনি। বরং বেড়ে যাচ্ছে। 

গত অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। পরে তা বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। এরপর তা আরও বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বছর শেষে এক বছরের গড় হিসাবে ৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং পয়েন্ট টু পয়েন্ট বা গত বছরের জুনের সঙ্গে চলতি বছরের জুনের হিসাবে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। চলতি অর্থবছরে এ হার ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) মনে করে, এ হার আরও বেশি হবে।

এদিকে আইএমএফ-এর প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে ভারতে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ, এটি তারা ৪ শতাংশ নামিয়ে আনতে চায়। ইন্দোনেশিয়ার মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি। এটি তারা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ। এটি তারা ২ শতাংশে নামাতে চায়। ইতালির ৮ শতাংশ, তারা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। জার্মানির মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ, তারা ২ শতাংশে নামাতে চায়। 

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, থাইল্যান্ড খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ থেকে ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। মালদ্বীপে ৮ থেকে কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে। মালয়েশিয়া ৭ দশমিক ৪ থেকে ৫ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ১১ দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। যুক্তরাজ্যে ১৯ দশমিক ৮ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। সুইডেনে ২২ দশমিক ১ থেকে কমে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। স্পেনের ১৬ দশমিক ৭ থেকে কমে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। সিঙ্গাপুরে ৮ দশমিক ১ থেকে কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। সৌদি আরবে ৪ দশমিক ৮ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২২ জুলাই ২০২৩,/রাত ১১:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit