স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে চলছে দ্বৈত নীতি। সদর দপ্তরে সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে পিয়ন-চাপরাশিদের জন্য এক নিয়ম। আর চুক্তিবদ্ধ কোচ-খেলোয়াড়দের জন্য অন্য নিয়ম। সেই নিয়ম-নীতির ফেরে ঈদ এলেই কোচ-ফুটবলারদের আকাশে নেমে আসে রাজ্যের অন্ধকার। তাদের ভাগ্যে জোটে না বেতন-বোনাস। অথচ বাকিরা ঠিকই জুন মাসের আগাম বেতনসহ পেয়েছেন আসছে ঈদুল আজহার বোনাস!
কোচদের সঙ্গে বাফুফের চুক্তিতে আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। বছরের পর বছর এই চুক্তির জোরে কোচদের বঞ্চিত করে আসছে বাফুফে। চুক্তিতে কোচদের উৎসব বোনাস দেওয়ার বিধান রাখা হয়নি। তাই বাফুফের বেতনভুক্ত কোচদের দুটি ঈদ কাটে ভীষণ সাদামাটা। চুক্তির মারপ্যাঁচে ঈদ এলেই তাদের মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়।
গত ঈদুল ফিতরের আগে বোনাসের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন বাফুফের শীর্ষ কর্তাদের কাছ থেকে। তবে সেটা মুখের কথাই রয়ে গেছে। কোচদের মেলেনি ফুটো কড়ি। আজ বাদে কাল ঈদ। মাসের একেবারে শেষে এই ধর্মীয় উৎসব। বোনাস জুটবে না জেনে চলতি জুনের বেতনটা আগাম দাবি ছিল কোচদের। সেটাও পাননি।
আগামী মাসের মাঝামাঝি নেপালের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচকে সামনে রেখে ঈদের মধ্যেও চলমান আছে নারী জাতীয় ফুটবল দলের আবাসিক ক্যাম্প। বোনাস দূরে থাক, ফুটবলারদের দেওয়া হয়নি প্রাপ্য সম্মানী।
জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা ফুটবলারদের তিন শ্রেণিতে সম্মানী দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পান একজন ফুটবলার। আর সর্বনিম্ন সম্মানী ৫ হাজার টাকা। মাঝের একটা বড় অংশ পান ১০ হাজার টাকা করে। এই টাকাটাও ঈদের আগে মেয়েদের হাতে তুলে দেয়নি বাফুফে।
একজন সিনিয়র ফুটবলার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বোনাস তো দূরে থাক, ঈদের আগে জুন মাসের বেতনটাও হাতে পেলাম না। অথচ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার অধিকার আমাদের নেই। সামনে নেপালের সঙ্গে খেলা বলে ছুটি পাইনি। বোনাস তো কখনই দেওয়া হয় না। বেতন-বোনাস দূরে থাক, ঈদে মেয়েদের পোশাকও উপহার হিসেবে দেওয়া হয় না। কমপক্ষে ৫০ বার অনুরোধ করেছি বেতন বাড়ানোর, কেউ কানে তুলে না আমাদের কথা।’
বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের দেওয়া তথ্যমতে তাদের আওতাধীন কোচ আছেন ২২ জন। এই কোচদের বেতন দেয় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন্স (এএফসি)। বেশ ক’জন কোচ ও খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বারবার অনুরোধ করেও তারা মন গলাতে পারেননি বাফুফের কর্তাদের। যদিও বিপদে পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ বাফুফের বিরুদ্ধে কথা বলেননি।
তবে নাম প্রকাশ না করে এক কোচ উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ-কষ্ট, ‘গত ঈদের আগে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিজস্ব তহবিল থেকে বোনাস দেওয়া হবে দুইটা। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আগের ঈদের মতো এবারও পূরণ হলো না। অথচ কোচরা বাদে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে সুইপার পর্যন্ত সবাই জুন মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস আগাম পেয়েছেন।’
বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ কোচদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিজস্ব তহবিল থেকে দুটি ঈদ বোনাস দেওয়ার। ফিফার নিষেধাজ্ঞায় সোহাগ আউট হয়ে সেই পদে এসেছেন ইমরান।
তবে কোচদের দেওয়া বোনাসের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি। ইমরান দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করলেন সেটা। ফিফা-এএফসি’র ফান্ড বাদে তাদের হাতে এই মুহূর্তে সেভাবে কোনো ফান্ডই নেই। যা আছে সেটা বিভিন্ন খাতের জন্য তুলে রাখা হয়েছে। কেবল কোচদের দেওয়ার মতো টাকাটাই নেই।
ইমরান বলেন, ‘আমরা এএফসির কাছে চিঠি দিয়েছিলাম ঈদের আগে বেতনটা ছাড় দেওয়ার জন্য। তারা ছাড় দিতে দেরি করেছে। মঙ্গলবার সেই অর্থ আমাদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। তবে ব্যাংক বন্ধ থাকায় সেই টাকা আমরা কোচদের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারিনি। নির্বাহী প্রধান হিসেবে এটা দিতে না পারাটা আমার জন্য কষ্টের। বলতে পারেন একটা ভুলই হয়েছে বেতনটা আগেভাগে না দিয়ে। আসলে আমাদেরও কিছু করার ছিল না। ফিফা-এএফসির বরাদ্দ অন্য খাতে ব্যবহারের সুযোগ নেই। আর এ মুহূর্তে আমাদের ফান্ডে অন্য কোনো সোর্সের টাকাও নেই।’
অথচ এই নারী ফুটবলাররাই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। আর এদের সাফল্যর নেপথ্যে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, সেই কোচদেরও একই পরিণতি মেনে নিয়ে শুকনো মুখে ফিরতে হয়েছে স্বজনদের কাছে।
কিউএনবি/অনিমা/২৮ জুন ২০২৩,/সকাল ৭:৫৩