ডেস্ক নিউজ : এক বছর আগেও মানুষকে দান খয়রাত করত। আশেপাশের অনেকেই তাদের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর এখন নিজেরাই সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, ত্রাণ সংগ্রহের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। বলছিলাম সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের কেদার খিল গ্রামের আলোচিত খোকন ও তার মায়ের কথা।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ত্রাণের ১০ কেজি চালের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মা ও ছেলে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেওয়া খোকনের পিতার ছিল অগাধ সম্পদ। পিতার মৃত্যুর পর খোকন তার পৈত্রিক সূত্রে মালিক হয় এক একর বিশ শতক জমির। এছাড়াও মা সালেহা বেগম ও বোন আসমা আক্তার নিজেদের মালিকানাধীন আরও ৬৫ শতক জমি খোকনকে দান করেন। ২০০৬ সালে মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে সেলিনা আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জন্ম থেকে কিছুটা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত খোকন।
বিয়ের পর সংসারের সুখের জন্য এক একর ৮৫ শতকের সম্পূর্ণ জমি বিক্রি করে প্রায় দুই কোটি টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দেন তিনি। এছাড়াও অবশিষ্ট বাড়ি ভিটার ২৮ শতক জায়গা কৌশলে স্ত্রী তার নামে লিখে নিয়ে খোকন ও তার মাকে ঘর থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে যেকোনো মূল্যে খোকন ও তার মায়ের একমাত্র আশ্রয়স্থল পারিবারিক ভিটা অন্যত্র বিক্রির হাত থেকে রক্ষার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়।
অন্যদিকে টাকার লোভে অন্ধ সেলিনা বাড়ি ভিটার জমি দখল পেতে প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করে। খোকন ও তার মামা মো. মহিউদ্দিনের নামে একটার পর একটা মামলা দায়ের করতে থাকেন। এছাড়াও জসিম নামের এক চিহ্নিত ডাকাতকে দিয়ে খোকনকে তার বাড়ি ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার একাধিকবার চেষ্টা করেন সেলিনা।
সড়ক দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম খোকনের চিকিৎসা ব্যয় ও সংসার খরচ চালাতে সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন তার মা সালেহা বেগম।
সালেহা বেগম বলেন, ছেলের বউ ছেলেকে এবং আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিছে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্যর টাকা নিয়ে ছেলে ও আমি কোন ভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। সেলিনা আক্তার এখন চেষ্টা করছে বাড়ি ভিটা থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য। সে একটার পর একটা মামলা দায়ের করছে। এক ডাকাতকে দিয়ে আমাদেরকে বারবার হুমকি দিচ্ছে। আমার ছেলে সেলিনা আক্তারকে তালাক প্রদান করেছে এরপর থেকে সে আরও বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে।
খোকনের মামা মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমার ভাগিনা কিছুটা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্ত্রী সেলিনা আক্তার তার নামে থাকা ব্যাংকের সব টাকা-পয়সা এবং জমি বিক্রির সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা একটা চরম অমানবিক কাজ হয়েছে। সহজ সরল, মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছেলেটার কাছ থেকে সব টাকা এবং সহায় সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে তাকে বিতাড়িত করা অত্যন্ত জঘন্যতম একটা অন্যায়।
কিউএনবি/অনিমা/১২ এপ্রিল ২০২৩,/দুপুর ২:০০