এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ইটভাটার মাটিটানা ট্রাক থেকে মাটি পড়ে পাকা সড়কগুলো যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়ক গুলোর উপরে চলন্ত গাড়ি থেকে মাটি পড়ায় সমস্ত সড়ক সামান্য বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানিতে ভিজে পাকা সড়ক যেন কাদামাটির সড়কে পরিণত হয়। তখন এই পাকা সড়ক পথে বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের সময় সেগুলো পিছলে উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। পাকা সড়ক কাদামাটির কারণে হেঁটে চলাও তখন দুষ্কর হয়ে পড়ে। আর যদি রোদ হয় ধূলায় ধূসরিত হয়ে থাকে। ফলে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয় সমস্ত সড়কপথটি। বিশেষ করে তিন চাকার ইজিবাইক, ভ্যান, দুই চাকার মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেলে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।
রবিবার (১৯ মার্চ ) গুড়ি-গুড়ি সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সড়কে ছোট-বড় বেশকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে ১৩টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার জন্য বিভিন্ন ফসলি জমি, ডোবা, খাল ও বিল থেকে অননুমোদিত উপায়ে মাটি কেটে সেগুলো ট্রাক, ট্রলি, ট্রাক্টর ও হল্লাট্রাক সহবিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে ভাটাই নেয়া হয়। আর এসব গাড়ি থেকে ঝরে ঝরে মাটি পড়ে জমে থাকে সড়কের পিচের উপর। চৌগাছা-মহেশপুর, চৌগাছা-কোঁটচাঁদপুর, চৌগাছা-পুড়াপাড়া ও চৌগাছা-ঝিকরগাছাসহ উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলো অধিকাংশ চলছে মাটিটানা এসব অননুমোদিত গাড়ি। এতে সড়কের উপরিভাগে পাকা রাস্তায় কাচামাটির স্তর পড়ে কাচামাটির সড়কে পরিণত হয়েছে।উপজেলা প্রশাসনের কঠোর অভিযান ও নির্দেশে মাঝে মধ্যে ভাটাগুলোর আসপাশের সড়কের উপর থেকে এসব পড়ে থাকা মাটি অপসারণ করা হয়। ধুলা কোমাতে গাড়ীতে করে পানিও ঢালা হয়ে থাকে। তবে পরে আবারো সড়কগুলো আগেরই দশায় পরিণত হয়। প্রশাসনের আদেশ অমান্য করে সেই সড়ক পথে প্রতিদিনই চলছে মাটিটানা অবৈধযান।
উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মৃত কিয়ামত আলীর ছেলে ইদ্রিস আলী (৬০) জানান, রবিবার ১৯ মার্চ সকালে বাড়ী থেকে বের হয়ে গ্রামের রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম। পিচির রাস্তার উপর ব্যাপক কাঁদা হওয়ায় দুর্ঘটনায় আহত হই। পরে উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে এক্স-রে করার পর দেখা যায় কোমরের হাড় সরে গেছে। চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর রেফার করেন।একই এলাকার তজবিজপুর গ্রামের সূর্য সেনের ছেলে বিকাশ সেন বলেন, খুব ভয়ানক অবস্থা। একটুর জন্য বেঁচে গেছি। ১৯ মার্চ দুপুরে বাড়ী থেকে বেরিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে কাঁদায় তিনবার ¯ি¬প করেছি। সারা শরীর কেটে ছিড়ে গেছে। উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি।নুর হোসেন নামে আরো একজন বলেন, আমি নিজে একবার বাইক নিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে কবে ?। এসব সড়কে মাটিবাহী অবৈধ গাড়ি চলাচল করছে অবাঁধে।আশিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, এ সকল সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় মনে হয়, কোখন না জানি দূর্ঘটনার শিকার হই। আর মাটি খেকোদের কথা কি বলবো, সড়কটাই তো ওদের!। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারি খাল, বিল, বাওড় ও নদের মাটি রাতের আঁধারে মাটি খেকোরা চুরি করে বিক্রি করছে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে সড়কের জনসাধারনের স্বাভাবিক চলাচলে।
তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন ট্রলি, নসিমন আর হল্লা ট্রাকে করে বিভিন্নইট ভাটায় মাটি বহন করা হচ্ছে। এসব যানের কারোরই লাইসেন্স নেই। ড্রাইভারদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। আরো দুঃখজনক হলো এগুলো দেখার জন্যও কেউ নেই এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এ ব্যাপারে খবর পেয়ে আমি নিজেই কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছি। সকলকেই সচেতন হতে হবে। কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিউএনবি/অনিমা/১৯ মার্চ ২০২৩,/বিকাল ৫:২০