বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
জুলাই সনদ নিয়ে এনসিপির সিদ্ধান্ত দুঃখজনক: আলী রীয়াজ কালীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সদস্যদের অনাস্থা,অনিয়ম ও স্বৈরাচারিতার অভিযোগ ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত গ্রেপ্তার আটোয়ারীতে পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় মহিলার লাশ উদ্ধার নোয়াখালীতে লাঠিখেলা-লোকগানে বিএনপির ৩১ দফা প্রচার রাঙামাটিতে ভূমি কমিশনের বৈঠক ঘিরে উত্তেজনা; অবরোধ ও বিক্ষোভের ডাক আটোয়ারীতে আলুর রকমারী খাবার প্রদর্শনী প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে মামলা,আটক – ১ রাঙামাটিতে পুলিশী অভিযানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই নেতা গ্রেফতার হৃদয়ে পাবনার আয়োজনে ৬ দিনব্যাপি পাবনা উৎসব ও উদ্যোক্তা মেলা শুরু হয়েছে

গৃহঋণে ইসলামী শরিয়া প্রতিপালনের পদ্ধতি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১৪৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হলো বাসস্থান। বাসস্থান ছাড়া পৃথিবীতে বাস করা অনেক কঠিন। বাসস্থানকে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য আবাস করেছেন।  পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ঘরগুলোকে তোমাদের জন্য আবাস করেছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৮০) নিজের ও পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিষয়, যা বহন করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো সম্পদ বিক্রি করতে হয় অথবা ঋণ করতে হয়। এতগুলো টাকা একসঙ্গে ব্যক্তিপর্যায় থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন, তাই মানুষ এ ধরনের প্রয়োজনে ব্যাংকের দারস্থ হয়। মানুষের এই গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণে ইসলামী পদ্ধতিতে পরিচালিত ব্যাংকগুলো কয়েকটি বিনিয়োগ পদ্ধতি ঠিক করেছে, যেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করে বাড়ি ক্রয় বা নির্মাণে ব্যাংকের সহায়তা নিলে সুদে লিপ্ত হতে হয় না, আবার ব্যাংকেরও বিনিয়োগের মাধ্যমে সেখানে কিছু মুনাফা অর্জন হয়। অর্থাৎ ব্যাংক সরাসরি ঋণ দিয়ে তার বিপরীতে সুদ গ্রহণ করে না, বরং ইসলামী পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে গ্রাহককে তার স্বপ্নের ঠিকানা নির্মাণে সহযোগিতা করে। নিম্নে বাড়ি ক্রয় বা নির্মাণে সহযোগিতায় ব্যাংকের বিনিয়োগ পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হলো—

প্রথমে ব্যাংক বাড়ি/ফ্ল্যাট কিনে মালিকানা অর্জন করবে এবং গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রি করে দেবে। গ্রাহক কিস্তিতে তা পরিশোধ করবে। ব্যাংক এই বিক্রিতে মুরাবাহার (লাভে বিক্রি) চুক্তি করে নেবে, সে ক্ষেত্রে হাউস ফাইন্যান্স কম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে কত টাকা লাভ আদায় করবে, তা স্পষ্ট থাকতে হবে। (সূত্র : ফিকহি মাকালাত:২/২২৪, ইসলাম আওর জাদিদ মায়িশাত ওয়া  তিজারত : ১৪১, ইসলাম আওর জাদিদ মায়াশি মাসায়েল : ৩/২৮৭)

ব্যাংকের মালিকানা স্বত্ব অর্জন করতে গিয়ে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা উল্লেখ করা ছাড়া বিক্রয় করলে বাই মুআজ্জালা। আর ব্যাংক মালিকানা স্বত্ব অর্জন করার সময় ব্যয়কৃত অর্থের কথা উল্লেখ করলে তা হবে বাই মুরাবাহা মুআজ্জালা। উল্লিখিত পদ্ধতিতে লেনদেনে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি হতে পারে। এ পদ্ধতিতে হাউস ফাইন্যান্সিং করার কয়েকটি রূপরেখা হতে পারে। এক. চুক্তির সময় বাড়ি/ফ্ল্যাটটি তৈরীকৃত থাকবে। কম্পানি শুধু ওই বাড়ি/ফ্ল্যাট কিনে গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রি করে দেবে।

কিন্তু যদি গ্রাহকের কাছে কিছু টাকা থাকে, তবে এই পরিমাণ টাকা না থাকে যে সে ওই টাকা দিনে বাড়ি/ফ্ল্যাট ক্রয়/নির্মাণ করতে সক্ষম, তখন গ্রাহক তার কাছে থাকা সম্পদের পাশাপাশি বাড়তি যে টাকা প্রয়োজন, সে টাকা ব্যাংকের কাছে চায়, বেশির ভাগ ব্যাংক অবশ্য এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে, তখন ব্যাংক ও গ্রাহক উভয় পক্ষ যৌথভাবে বাড়ি/ফ্ল্যাট কিনবে,  যেমন—গ্রাহকের কাছে বাড়ি/ফ্ল্যাট কেনার জন্য যে টাকা প্রয়োজন তার অর্ধেক পরিমাণ আছে, ব্যাংক বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে যৌথভাবে ওই বাড়ি/ফ্ল্যাট কিনে নেবে, তারপর ব্যাংক তাদের অংশ ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাড়তি মূল্য ধরে গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রি করে দেবে এবং কিস্তিতে গ্রাহকের কাছ থেকে মূল্য উসুল করবে।

এবং যদি গ্রাহক প্রথমে খালি জমি কিনে তার ওপর নির্মাণ করতে চায়; কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই, সে ক্ষেত্রে জমি কেনা পর্যন্ত তো ওই উল্লিখিত পদ্ধতিই অবলম্বন করা যায়, যা ওপরে বাড়ি/ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক ও গ্রাহক যৌথভাবে জমি কিনবে, তারপর ব্যাংক কিছু লাভ করে তাদের অংশ গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রি করে দেবে।

আর যদি জমি আগে থেকে গ্রাহকের মালিকানায় আছে অথবা ওপরের পদ্ধতিতে জমি গ্রাহকের মালিকানায় চলে এসেছে। এখন গ্রাহক সে জমিতে ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ি তৈরি করতে চায় (এবং গ্রাহকের কাছে কিছু টাকা আছে) তাহলে এ ক্ষেত্রে গ্রাহক এবং ব্যাংক যৌথভাবে বাড়ি নির্মাণ করবে—যেমন নির্মাণের অর্ধেক খরচ গ্রাহক বহন করবে, আর বাকি অর্ধেক ব্যাংক বহন করবে। সে ক্ষেত্রে ওই নির্মাধাণাধীন বাড়ি গ্রাহক ও কম্পানির যৌথ মালিকানায় হয়ে যাবে। অতএব যখন নির্মাণ শেষ হবে, তখন কম্পানি নিজের অংশ কিছু মুনাফাযুক্ত করে গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রি করে দেবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এক অংশীদারের জন্য অপর অংশীদারের অংশ কিনে নেওয়া জায়েজ। তবে বাইরের কারো কাছে বিক্রির ব্যাপারে মতভেদ আছে। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) ফাতওয়ায় শামীতে বলেন, ‘কোনো বিল্ডিংয়ের দুই অংশীদারের কোনো এক অংশীদার নিজের অংশ তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করলে তা জায়েজ হবে না। অবশ্য পরের অংশীদারের কাছে বিক্রয় করা জায়েজ হবে।’

অবশ্য এই পদ্ধতিগুলো ব্যাংক তখনই অ্যাপ্লাই করবে, যখন সে নিশ্চিত হবে যে তার ক্লাইন্ট অর্থায়ন করার পর তা অবশ্যই তার কাছ থেকে ক্রয় করে নেবে।

(২) হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিলক পদ্ধতি : হাউস ফাইন্যান্সিংয়ের আরেকটি পদ্ধতি হলো, শিরকাতুন মুতানাকিচা বা ডিমিনিশিং (ক্রমান্বয়ে হ্রাসকৃত) মুশারাকা। ব্যাংকিং পরিভাষায় একে ‘আল-ইজারা বিল বাই তাহতা শিরকাতিল মিল’ বা ‘হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিলক’ (এইচপিএসএম) বলা হয়। এর আরো দুটি পরিভাষা হলো, ‘আল-ইজারা আল-মুনতাহিয়্যা বিত তামলিক’  (IMBT) ও ‘আল-ইজারা ছুম্মা আল-বাই’  (AITAB)। (সূত্র : ফিকহুল বুয়ু : ১/৫২৬, ফিকহি মাকালাত : ২/২৩১, ইসলামী ব্যাংকারি আওর মুত্তাফিকা ফতোওয়ে কা তাজজিয়া : ১৯২পৃ, জাদিদ মাআশি নেজাম মে ইসলামী কানুনে ইজারা : ৪৬৪)

১. গ্রাহক ও ব্যাংক যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে ঘর ক্রয় করবে। যার পর ওই ঘর যৌথ মালিকানাধীন হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকেই তাদের অর্থায়নের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে আনুপাতিক হারে মালিকানা পাবে। যে যত শতাংশ মূল্য পরিশোধ করেছে, সে তত শতাংশের মালিক হবে।উল্লেখ্য, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মালিকানা লাভে ব্যাংক ফ্ল্যাটের জন্য সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা আর বাড়ি নির্মাণের জন্য দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে।

২. তারপর ব্যাংক তার অংশের একটি বার্ষিক ভাড়া নির্ধারণ করে তা গ্রাহকের কাছে ভাড়া দেবে।

৩. তারপর ওই ঘরে ব্যাংকের যতটুকু অংশ আছে, তার কিছু নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে, যেমন ১০ শতাংশ পরিমাণ অংশের মধ্যে ভাগ করে দেবে।

৫. গ্রাহক যে পরিমাণ অংশ কিনতে থাকবে ওই হিসাবে তার মালিকানায় ঘরের অংশ যোগ হতে থাকবে। আর ব্যাংকের মালিকানা থেকে একেকটি অংশ কমতে থাকবে।

৬. যেহেতু গ্রাহক ব্যাংকের অংশ ভাড়ায় নিয়েছিল, এ জন্য সে ব্যাংকের অংশের যতটুকু কিনতে থাকবে, ওই হিসেবে তার ভাড়া কমতে থাকবে।

৭. যখন গ্রাহক ব্যাংকের দশ অংশের পুরোটাই কিনে নেবে, তখন সে পুরো ঘরের মালিক হয়ে যাবে। আর ব্যাংক ও গ্রাহকের যৌথ মালিকানা ও ভাড়াচুক্তির ইতি ঘটাবে।

মোটকথা, এখানে তিনটি চুক্তি হবে। (ক) মালিকানার ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব। (খ) ইজারা তথা ভাড়ায় প্রদান। (গ) বাই তথা বেচাকেনা। তিনটি চুক্তিই একটি থেকে অপরটি আলাদা করবে। অন্যথায় ‘সফকাতাইনে ফি সাফকাহ’ তথা এক চুক্তিতে অন্য চুক্তি প্রবেশ করানোতে বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে যাবে।

(৩) বাই ইসতিসনা পদ্ধতি : ইসতিসনা অর্থ হচ্ছে কোনো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান (ম্যানু ফ্যাকচারার)-কে ক্রেতার জন্য নির্দিষ্ট জিনিস তৈরি করে দেওয়ার অর্ডার দেওয়া। যদি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিজের পক্ষ থেকে কাঁচামাল দিয়ে ক্রেতার জন্য দ্রব্য তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে নেয়, তাহলে ইসতিসনা চুক্তি অস্তিত্ব লাভ করে। ইসতিসনা সঠিক হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো, মূল্য উভয়ের সন্তুষ্টিতে নির্ধারিত করে নিতে হবে এবং কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যের (যা তৈরি করা হবে) প্রয়োজনীয় গুণাবলি নির্ধারিত করে নিতে হবে। (ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি : সমস্যা ও সমাধান, পৃষ্ঠা ১৮৮)

বাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনে গ্রাহক ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে গেলে ইসতিসনা চুক্তি করারও সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহক বাড়ির মালিক। ব্যাংক পুনরায় কোনো ডেভেলপার কম্পানির সঙ্গে ইসতিসনা চুক্তি করবে, সেখানে ডেভেলপার কম্পানি হবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আর ব্যাংক বাড়ির মালিক। অতঃপর ব্যাংক সেই প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়ে বাড়িটি বুঝে নিয়ে ব্যাংক ক্লায়েন্টকে তা বুঝিয়ে দেবে। ব্যাংক ও ক্লায়েন্টের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ক্লায়েন্ট কিস্তিতে ব্যাংককে ইসতিসনার মজুরি পরিশোধ করবে। (সূত্র : ফিকহুল বুয়ু : ১/৬০৩)

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৫ জানুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৩:৫৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit