শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

৯কোটি টাকার কাজে দুর্নীতির সংবাদ

গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি প্রতিনিধি ।
  • Update Time : শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১৮০ Time View

গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে সড়ক ও জণপথ বিভাগের কার্যাদেশ পেয়েও চার বছরেও রহস্যজনক কারণে সড়ক উন্নয়ন মূলক কাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সময় ক্ষেপন করে কাজ শুরু করলেও বাস্তবে কার্যাদেশের সাথে ৫০% ও কাজ হচ্ছে না। এ নিয়ে এলাকাবাসির তোপের মুখে পড়ে ঠিকাদার ও অফিস কর্তিপক্ষ। একের পর এক অভিযোগ ও সংবাদ প্রকাশ হলেও বহাল তবিয়্যতেই কার্যাদেশ কে তোয়াক্কা না করে নিজের আখের গুছাতে ও অফিস ম্যানেজ করে নিুমানে কাজ করেই যাচ্ছে।

ঝালকাঠির রাজাপুরে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহা সড়কের সাড়ে ৮ কিলোমিটার অংশ প্রশস্থকরণ কাজে নিুমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর অফিস কর্তিপক্ষের টনক লড়লে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কর্তিপক্ষকে ম্যানেজ করতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। অবশেষে অফিস কর্তিপক্ষের সাথে রফা-দফা করে কথিত পার্সেন্টটিজ চুক্তিতে নিুমানের সামগ্রী দিয়েই পূর্বের চেয়েও নিুমানের মালামাল দিয়ে স্থানীয়দের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে কাজ। এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করলে তারা আন্দোলনসহ মানববন্ধন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এদিকে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয় কথা হলে,তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গুনকেত্তন করে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বলে ছাপাই গান তারা। তবে সংবাদ প্রকাশের পর অফিস কর্তিপক্ষ কাগজ কলমে তদন্ত ও কাজের স্থান পরিদর্শন করা সহ সঠিক কাজের সপক্ষেই অবস্থান করায় সাধারণ মানুষ এখন রক্ষককেই ভক্ষক হিসাবে চিহিৃত করেন। উল্লেখ্য, আঞ্চলিক মহা-সড়কের রাজাপুর অংশে ৮.৫৯২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় উভয় পাশে তিন ফুট করে মোট ৬ ফুট ইটের সলিংয়ের কাজ চলছে। পদ্মা ব্রিজ চালু হওয়ার ফলে সড়ক যোগাযোগ ও যান চলাচলে দূর্ভোগ ও ঝুকি হওয়ায় এ উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়।

ফলে ১৮ ফুট প্রশস্থ সড়কটির প্রস্থ দাঁড়াবে ২৪ ফুট। কাজটির বাস্তবায়ন করছে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৪ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দে এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক হোসেন। সড়ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রাজাপুরের মেডিকেল মোড় থেকে পাশবর্তী পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সীমান্ত শিয়ালকাঠি ব্রিজ পর্যন্ত ৮.৫৯২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে প্রশস্থরণের কাজ চলছে। ২১ ইঞ্চি গভীর করে নীচে বালু দিয়ে সমান করে ৩ স্তরের ইট বিছিয়ে পাশের এজিং (ইটের সারি) এবং মাটি দিয়ে এজিন মজবুত ও শক্ত করানোর কথা কার্যাদেশে উল্লেখ করা হয়। এতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক প্রশস্থকরণে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের সলিং উপরিভাগে ভালো মানের ও সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরে ফাঁকা ফাঁকা করে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি ইটের দূরত্ব থাকছে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। নির্দেশিত ২১ ইঞ্চির জায়গায় ১৫-১৬ ইঞ্চি গর্ত করেই বালু ফেলে সমান করে ইট বিছানো হচ্ছে। যাচ্ছেতাইভাবে কাজ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরোনো মজবুত সড়কও। এ কাজে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পুরোনো মজবুত মহাসড়কও। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এলাকাবাসীর। আর ঠিকাদার বলছে, চার বছর আগের ব্যয় অনুযায়ী কার্যাদেশ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সব জিনিসের দাম বেড়েছে এখন।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. জুয়েল জানান, ইটভাঁটায় অর্ডার করা হয়েছে ভালো ইটের। ট্রাক নিয়ে গেলে তারা যেভাবে ইট দেয়, সেগুলোই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের মাঝে যাতে ভালোভাবে বালু ঢুকে আটকে থাকতে পারে এ জন্য ফাঁকা রাখা হচ্ছে। যেহেতু মেশিন দিয়ে খনন করা হচ্ছে, তাই সব জায়গার মাপ সমান হচ্ছে না। ২০১৯ সালের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে সে অনুযায়ী কার্যাদেশ পেয়েছি। এখন সব জিনিসেরই দাম বেশি। যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার মধ্যেই কাজ সারছি।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে ৪ কোটি টাকারও বেশি। পিরোজপুর ও ঝালকাঠির যৌথ এ কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। কাজের মানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, প্রতিটি ইটে সামান্য ফাঁকা থাকবে বালু ঢোকার জন্য; কিন্তু দেড়-দুই ইঞ্চি ফাঁকা রাখতে পারবে না।সঠিকভাবে গভীর করে ভালো মানের ইট দিয়ে কাজ করানোর কথা কার্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে। তাদের অনেকভাবে বললেও শ্রমিকরা কোনো কথা না শুনেই যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কাজ করছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো.ফারুক হোসেন এর সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি আত্মগোপনে ও মুঠোফোনের কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সড়ক ও জণপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল আহম্মেদ বলেন,আমরা অভিযোগ পেয়ে কাজের স্থান পরিদর্শন করে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করেছি। কার্যাদেশ অনুযায়ি কাজ হবে।

 

কিউএনবি/আয়শা/২১ জানুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৭:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit