ডেস্ক নিউজ : মিসরের কুখ্যাত খোদাদ্রোহী বাদশাহ ফেরাউনকে কে না চেনে, তার ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা সবারই জানা। সে ছিল চরম অত্যাচারী রাজা ও কুখ্যাত খুনি, যার জুলুমের শিকার হয়েছিল ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহিম খলিলুল্লাহর বংশধররা। অথচ সে যুগে তারাই ছিল পৃথিবীর সর্বোত্তম অধিবাসী। দুশ্চরিত্র ও অত্যাচারী রাজা ফেরাউন তাদের দাসে পরিণত করেছিল। তাদের দিয়ে নিকৃষ্টতম কাজকর্ম করাত। তাদের নিম্নমানের পেশায় নিয়োজিত থাকতে বাধ্য করত। উপরন্তু তাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করত।
তার এই অমানবিক কর্মকাণ্ডের কারণ হিসেবে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। বনি ইসরাঈলরা মুসা (আ.)-এর আগমনের সুসংবাদ আগেই পেয়েছিল যে তাদের বংশে এমন এক যুবকের আবির্ভাব হবে, যাঁর হাতে মিসরের অত্যাচারী বাদশাহর পতন হবে। কারো কারো মতে, এটা এ জন্য যে মিসরের তৎকালীন দুশ্চরিত্র রাজা ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রী সারাহর সম্ভ্রম নষ্ট করার আকাঙ্ক্ষা করেছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। তবে এ অভিমত কতটুকু সত্য, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। যা হোক, আহলে কিতাবরা নিজেদের মধ্যে মুসা (আ.)-এর শুভাগমন নিয়ে আলোচনা করত, যা একসময় ফেরাউনের কান পর্যন্ত পৌঁছে। ফলে ফেরাউন রাজ্য হারানোর ভয় থেকে বনি ইসরাঈলের পুত্রসন্তানদের হত্যার নির্দেশ জারি করে।
সুদ্দি (রহ.) ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণনা করেন, একদিন ফেরাউন স্বপ্নে দেখল, যেন একটি অগ্নিশিখা বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে এসে মিসরের বাড়িঘর ও আহলে কিবতিদের সবাইকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। কিন্তু মিসরে বসবাসরত বনি ইসরাঈলদের কোনো ক্ষতি করেনি। এই দুঃস্বপ্নটি ফেরাউনকে ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলল। সে জ্যোতিষী ও জাদুকরদের সমবেত করে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইল। তারা তার স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বলল, বনি ইসরাঈলে এমন এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবে, যার হাতে মিসরবাসী ধ্বংস হবে। এ কারণে ফেরাউন বনি ইসরাঈলের পুত্রদের হত্যা করার নির্দেশ দেয় এবং নারীদের জীবিত রাখতে বলে। কিন্তু মহান আল্লাহ একসময় অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দিলেন।
নির্যাতিত, নিপীড়িত, দুর্বল বনি ইসরাঈলদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি দুর্বল করে রাখা লোকদের সেই জমিনের পূর্বের আর পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম, যাতে আমি কল্যাণ নিহিত রেখেছি। এভাবে বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে তোমার প্রতিপালকের কল্যাণময় অঙ্গীকার পূর্ণ হলো আর ফেরাউন ও তার লোকজনের গৌরবময় কাজ ও সুন্দর প্রাসাদগুলোকে ধ্বংস করে দিলাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩৭) অর্থাৎ আহলে কিতাবরা যে বিষয়ে আলোচনা করত—বনি ইসরাঈলের কোনো এক যুবকের মাধ্যমে মিসরে ফেরাউনের রাজত্বের অবসান ঘটবে, তা বাস্তবায়ন হয়ে গেল।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অনেক বাগান ও ঝরনা রেখেছিল। শস্যক্ষেত আর অভিজাত স্থান, কত বিলাস উপকরণ, যা তাদের আনন্দ দিত। এমনটাই হয়েছিল, অতঃপর আমি অন্য জাতির লোকদের সেসবের উত্তরাধিকারী করে দিয়েছিলাম।’ (সুরা দুখান, আয়াত : ২৫-২৮)
কারো কারো মতে, এই আয়াতেও অন্য জাতি বলতে বনি ইসরাঈলদের বোঝানো হয়েছে।
তথ্যঋণ : আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া
কিউএনবি/আয়শা/২১ জানুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৪:৫০